পাবনার ঈশ্বরদীতে পুকুরে ডুবিয়ে আটটি কুকুরছানাকে হত্যার অভিযোগে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা হাসানুর রহমানকে সরকারি বাসভবন ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (০২ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলা প্রশাসন তাকে এ নির্দেশ প্রদান করে। অভিযুক্ত কর্মকর্তা হাসানুর রহমান উপজেলা ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনে কর্মরত।
গত রোববার (৩০ নভেম্বর) রাতে কোনো একসময় কুকুরছানাগুলোকে বস্তায় ভরে পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। পরদিন সোমবার (০১ ডিসেম্বর) সকালে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনের এক কোণে থাকা কুকুরটিকে এলাকাবাসী ভালোবেসে টম নাম দিয়েছিল। এক সপ্তাহ আগে টম আটটি বাচ্চা দেয়। সব ঠিকই চলছিল। কিন্তু গত রোববার সকাল থেকে টমকে ছুটোছুটি ও কান্নার মতো আচরণ করতে দেখা যায়। পরে জানা যায়, বাচ্চাগুলোকে খুঁজে না পেয়ে এমন আচরণ করছে সে।
এদিকে বাচ্চাগুলোকে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন উপজেলা অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরে জানা যায়, উপজেলা পল্লীউন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের ওই কর্মকর্তা ও তার স্ত্রী কুকুরছানাগুলোকে বস্তায় ভরে পুকুরে ফেলে দিয়েছেন। মরদেহ উদ্ধারের পর সোমবার দুপুরে কুকুরছানাগুলোকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনের পাশে মাটিচাপা দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার (০২ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলার সামনে মা কুকুরটিকে ঘুরতে দেখা যায়। বারবার সরানোর চেষ্টা করলেও সরানো যায়নি।
পরে সরানো গেলেও সারাদিন তাকে উপজেলা চত্বরে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে।
এদিকে, আটটি কুকুরছানাকে বস্তায় ভরে পানিতে ডুবিয়ে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নিতে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এ নোটিশ ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কাছে পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সজীব মাহমুদ আলম, মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর)।
এ ঘটনায় বিভিন্ন মহল থেকে নিন্দা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেটিজেনরা পোস্ট করছেন।
অভিযুক্ত কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়ন বলেন, আমি এই কাজ করিনি। আমার স্ত্রী করেছে। বিষয়টি নিয়ে চারদিকে প্রচণ্ড চাপের মুখে আছি। ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। কুকুরছানাদের হত্যার ঘটনায় আমি লজ্জিত।
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, কুকুরছানাগুলোকে এভাবে হত্যা করা অত্যন্ত অমানবিক ও নিষ্ঠুর কাজ। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শাস্তিস্বরূপ তাকে একদিনের মধ্যে সরকারি বাসভবন ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঈশ্বরদী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আ. স. ম. আবদুর নূর বলেন, কুকুরছানাগুলোকে অমানবিকভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। উপজেলা প্রশাসন ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আইনগত প্রক্রিয়া চলছে।
আইকে/এসএন