মার্কিন সরকারের এক অভ্যন্তরীণ স্মারকে জানানো হয়েছে, আফগানিস্তান, ইয়েমেন ও হাইতিসহ ১৯টি দেশের নাগরিকদের অভিবাসন আবেদন স্থগিত করা হয়েছে। ফলে অভিবাসনের বিরুদ্ধে চলমান ব্যাপক কঠোর অভিযানের মাত্রা আরো বাড়ল।
মার্কিন নাগরিকত্ব ও অভিবাসন দপ্তর (ইউএসসিআইএস)-এর ওই স্মারকে বলা হয়, জুন মাসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেসব দেশের ওপর ভ্রমণ-নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছিলেন, সেই দেশগুলোর নাগরিকদের গ্রিন কার্ড ও নাগরিকত্বের আবেদন প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা অন্যান্য দেশের মধ্যে রয়েছে ভেনেজুয়েলা, সুদান ও সোমালিয়া।
গত সপ্তাহে দুই ন্যাশনাল গার্ড সদস্যকে গুলির ঘটনায় একজন নিহত হওয়ার পর সাম্প্রতিক দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তারা অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ আরো কঠোর করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
ওই গুলিবর্ষণের প্রধান সন্দেহভাজন একজন আফগান নাগরিক, যিনি ২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে বিদেশি বাহিনী প্রত্যাহারের সময় গণ-উচ্ছেদ বা গণ-স্থানান্তরের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিলেন। মঙ্গলবার তিনি হত্যার অভিযোগে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।
স্মারকে বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয় খোঁজার চেষ্টা প্রতিরোধে ইউএসসিআইএস একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।’
এতে আরো বলা হয়, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ‘যথাযথ স্ক্রিনিং, যাচাই ও দ্রুত নিষ্পত্তিকে অগ্রাধিকার না দেওয়ার পরিণতি কী হতে পারে, তা প্রত্যক্ষ করেছে’-উল্লেখ করে আফগান সন্দেহভাজনের হত্যাকাণ্ডের ঘটনার কথা তুলে ধরা হয়েছে।
কিছু অভিবাসন আইন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত বহু মানুষকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিলের জ্যেষ্ঠ ফেলো অ্যারন রাইক্লিন-মেলনিক এক্সে লেখেন, ‘এমনকি যারা নাগরিকত্ব পরীক্ষাও পুরোপুরি পাশ করেছেন, তাদের ফাইলও এখন চূড়ান্ত পর্যায়ের একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে স্থগিত করে দেওয়া হচ্ছে।’
যাদের আবেদন ইতোমধ্যে প্রক্রিয়াজাত হয়েছে, তারাও আরো কঠোর যাচাইয়ের মুখে পড়তে পারেন।
স্মারকে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারির পর যেসব ব্যক্তি ওই ১৯টি দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন, তাদের বিষয়ে ‘সমগ্রিক পুনঃপর্যালোচনা’ করা হবে।
হোয়াইট হাউসের নির্বাচনি প্রচারণায় লাখো অবৈধ অভিবাসীদের বহিষ্কারের অঙ্গীকার করা ট্রাম্প গুলির ঘটনার পর বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবস্থা ‘সম্পূর্ণ পুনরুদ্ধার হওয়ার সুযোগ দিতে’ তিনি ‘সব তৃতীয় বিশ্বের দেশ থেকে অভিবাসন স্থায়ীভাবে স্থগিত করার’ পরিকল্পনা করছেন।
স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী ক্রিস্টি নোম সোমবার বলেন, তিনি নিষিদ্ধ দেশের তালিকা আরো সম্প্রসারণের পক্ষে সুপারিশ করবেন।
তিনি এক্সে লেখেন, ‘এইমাত্র প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আমার বৈঠক হয়েছে। আমি সুপারিশ করছি, যেসব দেশ থেকে হত্যাকারী, পরজীবী ও সুযোগ-সন্ধানীরা আমাদের দেশে ঢুকছে, সেই প্রতিটি দেশের ওপর পূর্ণ ভ্রমণ-নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হোক।’
তবে তিনি সুনির্দিষ্ট কোনো দেশের নাম উল্লেখ করেননি।
বর্তমানে যেসব দেশের ওপর এই ভ্রমণ-নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে আরো রয়েছে বুরুন্ডি, চাদ, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, কিউবা, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, ইরিত্রিয়া, ইরান, লাওস, লিবিয়া, মিয়ানমার, সিয়েরা লিওন, টোগো ও তুর্কমেনিস্তান।
এদিকে মার্কিন গণমাধ্যম মঙ্গলবার জানিয়েছে, ফেডারেল কর্তৃপক্ষ আগামী দিনগুলোতে মিনেসোটায় বসবাসরত সোমালি অভিবাসীদের বিরুদ্ধে একটি বড় ধরনের অভিবাসন আইন প্রয়োগ অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করছে। এ নিয়ে স্থানীয় নেতারা আপত্তি তুলেছেন এবং বলেছেন, রাজ্য পুলিশ এতে সহযোগিতা করবে না।
মিনিয়াপোলিসের মেয়র জ্যাকব ফ্রে বলেন, ‘আমাদের মূল্যবোধ এবং সোমালি সম্প্রদায়সহ আমাদের শহরের প্রতিটি অভিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রতি যে অঙ্গীকার, তা অত্যন্ত দৃঢ় এবং অটল থাকবে।’
আরপি/এসএন