দেশে ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানার পর দুই সপ্তাহের ব্যবধানে একাধিক আফটারশকে দেশে আবারও ভূকম্পন জনিত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ২১ নভেম্বর সকালে রিখটার স্কেলে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল নরসিংদীর মাধবদী, যা রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ২৫–৪০ কিলোমিটার দূরে। তীব্র ঝাঁকুনিতে ঢাকার বিভিন্ন ভবন কেঁপে ওঠে এবং মানুষের মাঝে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।
এরপর গত দুই সপ্তাহে অন্তত পাঁচটি আফটার শক অনুভূত হয়েছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে আবারও ৪.১ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়, যার উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর শিবপুরে।
এ বিষয়ে আবহাওয়াবিদ মো. রুবায়েত কবির জানান, সকালবেলার ভূমিকম্পটি সহনীয় মাত্রার হলেও সামনে আরও ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে যেকোনো দুর্ঘটনা এড়াতে সবাইকে সচেতন হতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।’
সোমবার (১ ডিসেম্বর) দেশজুড়ে ঢাকা, সিলেট, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। সেদিন রাত ১২টা ৫৫ মিনিটেও অনেকে ভূকম্পন অনুভব করেন। এর আগে ২৭ নভেম্বর ঢাকায় ৩.৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয়, যার কেন্দ্র ছিল নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল। একইদিন ভোরে সিলেট ও কক্সবাজারের টেকনাফে পরপর দুই দফা ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
২১ নভেম্বর থেকে পরদিন শনিবার পর্যন্ত প্রায় ৩১ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা ও আশপাশে চারবার ভূমিকম্প হয়। ওই ভূমিকম্পে দেশে ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়, আহত হন ছয় শতাধিক মানুষ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের টেকটোনিক অবস্থান ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বড় ধরনের ভূমিকম্পের সম্ভাবনা সবসময়ই থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, ভারতীয় প্লেট ধীরে ধীরে পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বার্মা প্লেটের নিচে তলিয়ে যাচ্ছে, যা চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে একটি সাবডাকশন জোন তৈরি করেছে। এই ভূ-গাঠনিক বৈশিষ্ট্যের কারণেই অঞ্চলটি ভূমিকম্পপ্রবণ।
হুমায়ুন আখতার আরও বলেন, এই জোনের ব্যাপ্তি সিলেট থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত। পুরো চট্টগ্রাম অঞ্চল এর মধ্যে পড়েছে। এখানে বিভিন্ন সেগমেন্ট আছে। আমাদের এই সেগমেন্টে ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার শক্তি জমা হয়ে আছে। এটা বের হতেই হবে।
তার মতে, এখানে প্লেট লকড হয়ে ছিল। এর অতি সামান্য ক্ষুদ্রাংশ খুলল বলেই শুক্রবারের ভূমিকম্প হয়েছে। এটিই ধারণা দেয় যে সামনে বড় ভূমিকম্প আমাদের দ্বারপ্রান্তে আছে।
এদিকে, ভূকম্পনবিদ্যার গবেষক মমিনুল ইসলাম আরও বলেন, বাংলাদেশে ২১ নভেম্বরের পর একাধিকবার আফটার শক হচ্ছে। এই আফটার শক বহুদিন ধরে হতে পারে, কমপক্ষে আরও তিন মাস হতে পারে। ২ মাত্রার নিচের ভূকম্পনগুলো আমাদের (বাংলাদেশে) সিস্টেমে ধরা পড়ে না।
পিএ/এসএন