গণঅভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হন স্বৈরাচার এইচ এম এরশাদ

বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী দিন আজ। ১৯৯০ সালের এই দিনে তৎকালীন সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদ গণঅভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং রাষ্ট্রক্ষমতা একটি অস্থায়ী সরকারের হাতে তুলে দেন। এর মধ্য দিয়ে দেশে দীর্ঘ নয় বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে এবং গণতন্ত্রের পথে এক নতুন পথচলা শুরু হয়।

তৎকালীন সেনাপ্রধান এরশাদ ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ সামরিক আইন জারি করে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। তার দীর্ঘ শাসনামলে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর ব্যাপক দমন-পীড়ন ও বহুবিধ অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং বামপন্থি দলগুলো ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন গড়ে তোলে। এই গণআন্দোলনে ডা. শামসুল আলম খান মিলন, নূর হোসেনসহ অনেক গণতন্ত্রকামী মানুষ জীবন উৎসর্গ করেন। বিশেষত, নূর হোসেন তার বুকে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’ এবং পিঠে ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ স্লোগান ধারণ করে রাজপথে নেমেছিলেন।

১৯৯০ সালের শেষভাগে আন্দোলন তার চূড়ান্ত আকার ধারণ করে। সেই বছরের ২১ নভেম্বর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৫ দল, বিএনপির নেতৃত্বাধীন সাত দল এবং ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বাম দল যৌথভাবে একটি রাজনৈতিক রূপরেখা ঘোষণা করেছিল। যদিও জামায়াতে ইসলামী সরাসরি এই তিন জোটের অংশ ছিল না, তবুও তারা এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখে। ছাত্র-জনতার সম্মিলিত আন্দোলনেই ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচারের পতন ঘটে।

রাজনৈতিক দলগুলো দিনটিকে ভিন্ন ভিন্ন নামে পালন করে থাকে। বিএনপি দিনটিকে ‘স্বৈরাচার পতন ও গণতন্ত্র মুক্তি দিবস’ হিসেবে পালন করে। অপরদিকে, এরশাদের দল জাতীয় পার্টি দিনটিকে ‘সংবিধান সংরক্ষণ দিবস’ হিসেবে পালন করে। আওয়ামী লীগ একসময় দিনটিকে ‘গণতন্ত্র মুক্তি দিবস’ হিসেবে পালন করত।

দিবসটি উপলক্ষ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক বাণীতে বলেন, দীর্ঘ নয় বছরের দৃঢ় আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ‘আপসহীন নেত্রী’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন।

তার দাবি, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা দুর্বার গণআন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ছাত্র-জনতার সম্মিলিত শক্তিতে স্বৈরাচারের পতন ঘটে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়।

কেএন/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
জুলাই আন্দোলনের শহীদ ১১ স্কাউট নতুন দেশ গড়ার প্রেরণা : শিক্ষা উপদেষ্টা Dec 06, 2025
img
কারাগারে ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ নিষিদ্ধ করল দেশটির সরকার Dec 06, 2025
img
যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু হোটেল সিয়েল দুবাই Dec 06, 2025
img
বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ছাগল চুরি করে নিয়ে গেল বিএসএফ Dec 06, 2025
img
আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের জন্য ভাইরাস : সালাহউদ্দিন আহমদ Dec 06, 2025
img
ভারতের সবচেয়ে বড় পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করছে রাশিয়া: পুতিন Dec 06, 2025
img
দেবদাসের পর ‘চোখের বালি’ বেছে নেওয়ার কারণ জানালেন ঐশ্বরিয়া Dec 06, 2025
img
ব্লকবাস্টার ‘সাইয়ারা’র রেকর্ড ভাঙল রণবীরের ‘ধুরন্ধর’, উচ্ছ্বসিত দীপিকা Dec 06, 2025
img
শ্রীলঙ্কায় বন্যা-ভূমিধসে নিহত বেড়ে ৬০৭ Dec 06, 2025
img
প্রাথমিক শিক্ষার অবস্থা ভয়ঙ্কর খারাপ, ডেডিকেশনের অভাব শিক্ষকদের: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা Dec 06, 2025
img
'চারপাশে কুমির'-শিল্পজগত নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য দিব্যার Dec 06, 2025
img
উর্মিলাকে ঘিরে বহু বছরের গুঞ্জনে এবার মুখ খুললেন রামগোপাল বর্মা Dec 06, 2025
img
পোষ্য কোটা নিয়ে আদালতের রায় মেনে নেবে ঢাবি: ঢাবি উপাচার্য Dec 06, 2025
img
বক্স অফিসে ঝড়, ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ ওপেনিং রণবীরের Dec 06, 2025
img
গণঅভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হন স্বৈরাচার এইচ এম এরশাদ Dec 06, 2025
img
সামান্থা, রানি-সহ আর কোন নায়িকাদের স্বামী হয়েছেন প্রচারবিমুখ পরিচালকেরা? Dec 06, 2025
img
সামনের নির্বাচন আমাদের জন্য বড় পরীক্ষা: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা Dec 06, 2025
img
নেইমারের বিশ্বকাপ অংশগ্রহণ অনিশ্চিত, ড্র নিয়ে মুখ খুললেন আনচেলত্তি Dec 06, 2025
img
এভারকেয়ারে উৎসুক জনতার ভিড় কিছুটা কম Dec 06, 2025
img
ঢাকা- ১৮ আসনে মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবিতে মশাল মিছিল Dec 06, 2025