বাণিজ্যিক আদালত দেশের অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে : প্রধান বিচারপতি

বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য নতুন দিগন্তের উন্মোচন করবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।

তিনি বলেন, ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে দ্রুত ও আধুনিক বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একটি ডেডিকেটেড বা বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠার আহ্বান করে এসেছিল, যা শিগগিরই বাস্তবে রূপ নিতে চলেছে।

শনিবার (৬ ডিসেম্বর) সকালে রেডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে হোটেলের কনফারেন্স কক্ষে বাণিজ্যিক আদালত নিয়ে এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেন।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও ইউএনডিপির যৌথ উদ্যোগে ‘অপারেশনালাইজিং কমার্শিয়াল কোর্ট’ শীর্ষক এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধান বিচারপতি বলেন, গত দেড় বছরে সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও সাংবিধানিক স্বচ্ছতার ভিত্তিতে বিচার ব্যবস্থায় যে মৌলিক রূপান্তর সাধিত হয়েছে, তা দেশের বিচারিক ইতিহাসে এক মাইলফলক। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ এক নতুন প্রাতিষ্ঠানিক যুগে প্রবেশ করেছে।

তিনি আরও বলেন, সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ, ২০২৫ প্রণয়নের মাধ্যমে বহুদিনের দ্বৈত প্রশাসনিক সীমাবদ্ধতা দূর হয়েছে এবং সুপ্রিম কোর্ট প্রথমবারের মতো পূর্ণ প্রশাসনিক ও আর্থিক স্বায়ত্তশাসন লাভ করেছে। এর ফলে বিচার বিভাগ এখন নিজস্বভাবে পদসৃজন, বাজেট বরাদ্দ, প্রশিক্ষণ উন্নয়ন, নীতিমালা প্রণয়নসহ বিচার সংস্কারকে দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই ধারা হিসেবে এগিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছে।

প্রধান বিচারপতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশংসা করে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের প্রস্তাবসমূহ সরকার দ্রুততার সঙ্গে অনুমোদন করেছে, যা শক্তিশালী ও স্বাধীন বিচারব্যবস্থা নির্মাণে জাতীয় ঐকমত্যকে প্রতিফলিত করে।

বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা নিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের একটি গবেষক দল বাণিজ্যিক আদালত সংক্রান্ত আইনের প্রাথমিক খসড়া তৈরি করে, যা পরে সারাদেশব্যাপী রোডশো, বিডার সঙ্গে নিবিড় পরামর্শ, ব্যবসায়িক আইন বিশেষজ্ঞ ও বাণিজ্যিক অংশীজনদের মতামতের মধ্য দিয়ে সমৃদ্ধ হয়। এক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নও গুরুত্বপূর্ণ কারিগরি সহায়তা দেয়। পরে আইন মন্ত্রণালয়ের আরও পরীক্ষণ ও পরিমার্জনের পর খসড়াটি এখন চূড়ান্ত আইনগত রূপ পেয়েছে এবং গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভায় নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, খসড়া আইনটিতে বাণিজ্যিক বিরোধের সুস্পষ্ট সংজ্ঞা, পর্যাপ্ত সংখ্যক বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠার বিধান, হাইকোর্ট বিভাগে পৃথক আপিল বেঞ্চ, বাধ্যতামূলক মধ্যস্থতা, সীমিত মুলতবি, সারসংক্ষেপ বিচার, মামলার পরিসংখ্যানের স্বচ্ছ প্রকাশ এবং বিচারক–আইনজীবীদের বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের মতো আধুনিক বিধান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এসব বিধান দ্রুত, দক্ষ ও স্বচ্ছ বাণিজ্যিক বিচার নিশ্চিত করবে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা–ক্ষমতা বাড়াবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধান বিচারপতি বলেন, কোনো আইন কেবল তখনই কার্যকর হয় যখন তা যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়। এজন্য বাণিজ্যিক আদালতসমূহের সফল পরিচালনার জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন, মানবসম্পদ বিকাশ, ডিজিটাল সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সব পক্ষ–পেশাজীবীর সমন্বিত প্রচেষ্টা জরুরি।

তিনি আরও বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বাণিজ্যিক বিরোধের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় প্র্যাকটিস ডাইরেকশন ও নির্দেশিকা জারি করতে প্রস্তুত।

এ ছাড়া তিনি আইনজীবী সমাজ ও বিচার–সম্পর্কিত সব অংশীজনকে সততা, শৃঙ্খলা ও দক্ষতার সঙ্গে বাণিজ্যিক আদালত আইন বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ইউএনডিপির আবাসিক প্রধান স্টেফান লিলার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস, কানাডার রাষ্ট্রদূত অজিত সিং, অস্ট্রেলিয়ান দূতাবাসের ডেপুটি হাইকমিশনার ক্লিন্টন পুকি ও সুইডেন দূতাবাসের কর্মকর্তা অলি লুন্ডিন।

ইএ/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
দেশীয় চিনির মজুত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিদেশ থেকে আমদানি বন্ধ: শিল্প উপদেষ্টা Dec 06, 2025
img
‘সকারই আসল ফুটবল’, আমেরিকান ফুটবলের নাম বদলানোর দাবি ট্রাম্পের Dec 06, 2025
img
আমিরুলের হ্যাটট্রিক, দক্ষিণ কোরিয়াকে ৫-৩ গোলে উড়িয়ে দিল বাংলাদেশ Dec 06, 2025
img
কোনো প্রতিপক্ষই সহজ নয়, সতর্কবার্তা আর্জেন্টিনার কোচ স্কালোনির Dec 06, 2025
img
১০ হাজার কোটি টাকার রাস্তায় টেম্পো ছাড়া কিছুই চলে না: সড়ক উপদেষ্টা Dec 06, 2025
img

অ্যাশেজ সিরিজ

মিচেল স্টার্কের অলরাউন্ডার নৈপুণ্যে বড় জয়ের সুবাস পাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া Dec 06, 2025
img
শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা Dec 06, 2025
img
বাবা হারালেন কাজী শুভ Dec 06, 2025
img
প্রবাসীর স্ত্রীকে কুপ্রস্তাব, বহিষ্কার জামায়াত নেতা Dec 06, 2025
img
মরক্কো ম্যাচকে কঠিন ভাবছে ব্রাজিল কোচ আনচেলত্তি Dec 06, 2025
img
গাজীপুরে ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল, ঢাকা-ময়মনসিংহ রেল যোগাযোগ বন্ধ Dec 06, 2025
img
বিদেশি খেলোয়াড়দের নোয়াখালীর কালচারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব : পলাশ Dec 06, 2025
‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত করেছেন প্রাথমিক শিক্ষকরা Dec 06, 2025
img
বাণিজ্যিক আদালত দেশের অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে : প্রধান বিচারপতি Dec 06, 2025
img

কৃতি শ্যানন

কখনও কখনও জীবন নিজেই পথ করে দেয় Dec 06, 2025
img
ফ্যাসিজমের কালো ছায়া এখনো কাটেনি : ডা. শফিকুর রহমান Dec 06, 2025
img
ইতালি যাওয়ায় পথে ভূমধ্যসাগরে নিখোঁজ মাদারীপুরের যুবক Dec 06, 2025
img
আপিলের পর সুসংবাদ পেল লুইস দিয়াস Dec 06, 2025
img
অস্ট্রেলিয়ায় ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে বসত-বাড়ি Dec 06, 2025
img
শাহ আমানত বিমানবন্দরে যাত্রীর লাগেজ থেকে ৮০০ কার্টন সিগারেট জব্দ Dec 06, 2025