স্বাস্থ্যের ডিজির সঙ্গে তর্কে জড়ানোর কারণ ব্যাখ্যা করলেন চিকিৎসক

ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শনে আসা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আবু জাফরের সঙ্গে তর্কে জড়ানোর কারণ জানালেন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান- স্টপ সার্ভিসের ইনচার্জ ধনদেব চন্দ্র বর্মণ। তিনি বলেন, আমরা সবসময় মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকি যে কোনো দুর্ঘটনা যেন না ঘটে। গত ২০২৩ সালের আগস্ট মাস থেকে আমি এখানে আছি। 

ডা. ধনদেব চন্দ্র বর্মণ বলেন, এ পর্যন্ত কোনো দুর্ঘটনা বা কেউ কারো সঙ্গে মিসবিহেব করছেন, ক্যাজুয়ালটিতে ভাঙচুর হয়েছে বা কোনো কিছু এরকম হয়নি।

আমি খুব সুষ্ঠুভাবেই পরিচালনা করছি। আমাদের পরিচালক স্যার, সহকারী পরিচালক স্যার এবং ডেপুটি ডিরেক্টর স্যারের তত্ত্বাবধানে আমরা খুব সুন্দরভাবেই চালাচ্ছি। ‘ডিজির কাছ থেকে গুরুজনের মতো ব্যবহার আশা করেছিলাম। কিন্তু তিনি এসে কী কী সমস্যা, সেগুলো জানতে না চেয়ে ভেতরে কেন টেবিল, এ নিয়ে কথা বলেন।’ 

শনিবার (৬ ডিসেম্বর) একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে এসব কথা বলেন তিনি। 

তিনি বলেন, আমি তিনবার উনাকে নাম বলার পরেও উনি আমাকে মানে তুচ্ছ তাচ্ছিল্যভাবে বলছেন। আমার কিন্তু চাকরি বেশিদিন নাই। আর এক বছর পরেই আমি পিআরএলে চলে যাব।

তিনি আরো বলেন, আমি অনেক সিনিয়র ২০১৩-তে আমি এমএস করছি, আমাকে ২০২৫-এ  সহকারী অধ্যাপক বানাইলো। আমি জেনারেল সার্জারিতে অপারেশন থিয়েটারে, আমি হাসপাতালের ভেতরে কোনো অপারেশন করার এখনো আমার সৌভাগ্য হয়নি বা দুর্ভাগ্য হয়নি। যেটাই হোক, এই যে প্রেক্ষাপট এটার জন্য দায়ী আমি মনে করি কর্তৃপক্ষের অবহেলা। মানে আমাদের এরকম আরো ম্যানপাওয়ার আছে যেগুলো আমরা কাজে লাগাইতে ব্যর্থ। আমাদের সঠিক লোককে সঠিক জায়গায় কাজে আমরা দিতে পারি না।

আমার গাইনি ডিপার্টমেন্টের ডাক্তার এখানে আবার জেনারেল আছে। তার উচিত গাইনি ডিপার্টমেন্টে কাজ করা। এগুলো মিস ম্যানেজমেন্ট যে পোস্টিংয়ের নামে এগুলো আমি দেখি। আসলে কি বলব স্বাস্থ্য সেবাটা পুরাটাই একটা উদ্ভট উটের পিঠে চলতেছে।

এরকম মনে হয় আমার কাছে। হ্যাঁ আমি সাব সেন্টার থেকে এ পর্যন্ত উঠে আসছি। সাব সেন্টারে দেখি যেকোনো ওষুধপত্র চুরি হয়ে যায়। টিএইচ-এ সিভিল সার্জন দেখে এরা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন না যেকোনো কাজ করতে গেলে পয়সা দিতে হয়। সব জায়গায় দুর্নীতি, এসব চিন্তা-ভাবনা করে আমার আসলে কাজ করার আর মানসিকতাই নাই। আমি সাসপেনশন চাই। আমি সরকারি চাকরি করতে চাই না। এদের চালানোর মতো মনমানসিকতা নাই। স্বাস্থ্য সেবাটা পুরাটাই একটা উদ্ভট ইয়াতে চলতেছে। আর স্বাস্থ্য দ্বারা যারা রাজনীতি করে, পলিটিক্স করে, তারাও পলিটিক্সের সময় আসে খোঁজ নেয়। তারপর আর কোনো আলোচনা হয় না।

এসব নিয়ে আর গবেষণাও এদেশে সঠিকভাবে হয় না। ফলস একটা জায়গা নীলক্ষেতে ওখানে সবাই রিসার্চ পেপার জমা দেয়, জমা দিয়ে এগুলো করে সত্যিকারের কোনো রিসার্চই হয় না সম্পূর্ণটাই একটা ভ্রান্তির মধ্যে চলতেছে স্বাস্থ্যসেবা। এজন্য আমি এগুলো দেখে খুব ত্যক্ত বিরক্ত এবং এই লোককে আমি গুরুজনের মতো মনে করছিলাম যে আমাদেরকে গাইডলাইন দেবে। উনি এসে বলে যে এটা কি, সেটা কি, টুল কেন নাই এই নাই। উনি এসে বলতো আপনার কি কি দরকার তাহলে আমি বলতাম যে স্যার আমাদের এরকম আরো দরকার। তাহলে আমরা আরো আপগ্রেডেডভাবে কাজটা করতে পারি। 

আমি প্রতিদিন আসি, দিন রাত আসি। কোনো সমস্যা হলে রাত তিনটা থেকে চারটার দিকে ছুটে আসি। এগুলো কোনো মূল্যায়ন হয় না। উনি বায়োমেট্রিক নিয়ে চিন্তা করে বায়োমেট্রিক দিয়ে আমাদের কি হবে ২৪ ঘণ্টাই আমরা আসি। ২৪ ঘন্টায় আমরা রিলেটেড থাকি। আমার বিহেব শিখান, আমার লাইভ শেষ। এখন আমার চাকরি শেষের দিকে আজকে আমার ফ্রেন্ড সবাই প্রফেসর হয়ে গেছে বিভিন্ন সেক্টরে। আমার বিভিন্ন কারণে হয়নি, ট্রেনিং পোস্ট পাইতে পাঁচ বছর দেরি করতে হইছে আমাকে। ডিজি অফিসের ডিজি দেখায় কি যে আপনি যান নেতাকে ধরেন। নেতাকে ধরে ট্রেনিং পোস্ট নেন। এই ধরনের কথাবার্তা ডিজি অফিস থেকে শুনতে হয়। সবকিছু মিলিয়ে আমি স্বাস্থ্য সেবাটাকে মনে করি যে উদ্ভট উটের পিঠে চলতেছে এবার মনে হয় সক্ষম কেউ না। আমি এজন্য আমার চাকরি আমার সাসপেনশন হলে আমি খুশি হই।

এর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আবু জাফরের সঙ্গে হাসপাতাল পরিদর্শনকালে তর্কে জড়ানোর অভিযোগে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ক্যাজুয়ালটি ইনচার্জের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে ডা. ধনদেব চন্দ্র বর্মণকে। একই সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অসদাচরণের ঘটনায় তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

টিজে/টিকে 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
রংপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় ইজিবাইক চালকের প্রাণহানি Dec 07, 2025
img
লেবাননে জাতিসংঘ টহল দলের ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৬ Dec 07, 2025
img
খালেদা জিয়া নীতির প্রশ্নে আপস করেননি : খোকন Dec 07, 2025
img
স্বাস্থ্যের ডিজির সঙ্গে তর্কে জড়ানোর কারণ ব্যাখ্যা করলেন চিকিৎসক Dec 07, 2025
img
তথাকথিত বড় দলগুলোর পক্ষে নয়া বন্দোবস্ত সম্ভব নয় : মুরসালীন Dec 07, 2025
img
২ বার এগিয়ে গিয়েও নাটকীয় ড্রয়ে থামল লিভারপুল Dec 07, 2025
img
মহাখালীতে অবৈধ ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করেছে ডিএনসিসি Dec 07, 2025
img
'আগামী নির্বাচন রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ ধাপ' Dec 07, 2025
img
আফগান তারকাকে দলে ভেড়াল নোয়াখালী Dec 07, 2025
img
তাসফিনের হাত পুনঃসংযোজন এক বিরল সাফল্য : রিজভী Dec 07, 2025
img
তুরস্কে বাস দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ৭, আহত ১১ Dec 07, 2025
img
১১৪ জন অজ্ঞাতনামা শহীদের মরদেহ শনাক্তের লক্ষ্যে রোববার থেকে মরদেহ উত্তলন Dec 07, 2025
img
প্রার্থী নিয়ে অসন্তোষে চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিএনপির অবস্থান Dec 07, 2025
img
খালেদা জিয়ার আরোগ্য লাভের অপেক্ষায় কোটি জনতা : অপর্ণা রায় Dec 07, 2025
img
শেরপুর পাক হানাদার মুক্ত দিবস আজ Dec 07, 2025
img
তরেসের দারুণ হ্যাটট্রিক, ৪ পয়েন্টে এগিয়ে বার্সেলোনা Dec 07, 2025
img
২০২৬ বিশ্বকাপের সূচি ঘোষণা করল ফিফা Dec 07, 2025
img
মুস্তাফিজের দুর্দান্ত বোলিংয়ের পরও হারল দুবাই Dec 07, 2025
img
সহজ জয়ে ২য় স্থানে অটুট রইল ম্যানচেস্টার সিটি Dec 07, 2025
img
বদলি নেমেই ২২ মিনিটে হ্যাটট্রিক হ্যারি কেইনের, বায়ার্নের বড় জয় Dec 07, 2025