যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার বলেছেন, তিনি এই সপ্তাহেই একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করবেন, যার মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের জন্য একটি একক জাতীয় বিধিমালা তৈরি করা হবে। শিল্পখাতের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে পাস হওয়া ভিন্ন ভিন্ন আইনের বদলে একটি অভিন্ন নিয়ম প্রয়োজন।
এই পদক্ষেপটি বড় প্রযুক্তি কম্পানিগুলোর জন্য একটি বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হবে, কারণ তারা হোয়াইট হাউসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। তবে এতে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান—উভয় দলের অঙ্গরাজ্য নেতাদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ তাদের মতে, নিজ নিজ অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দাদের সুরক্ষার জন্য তাদের হাতে ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন।
ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে লেখেন, ‘এআই-এ নেতৃত্ব ধরে রাখতে হলে আমাদের অবশ্যই একটি মাত্র বিধিবিধান থাকতে হবে… আমি এই সপ্তাহেই একটি “এক বিধি” নির্বাহী আদেশ দেবো। প্রতিবার কিছু করতে গেলে কোনো কম্পানিকে ৫০টি অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করতে বাধ্য করা যায় না।’
ট্রাম্প বিস্তারিত কিছু জানাননি। তবে রয়টার্স গত মাসে প্রতিবেদন করেছিল, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এমন একটি নির্বাহী আদেশ বিবেচনা করছেন, যার মাধ্যমে মামলার মাধ্যমে এবং ফেডারেল তহবিল আটকে রেখে অঙ্গরাজ্য পর্যায়ের এআই আইনগুলোকে অগ্রাহ্য করার চেষ্টা করা হবে।
চ্যাটজিপিটির নির্মাতা ওপেনএআই, আলফাবেটের গুগল, মেটা প্ল্যাটফরমস এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান আন্দ্রিসেন হোরোভিৎস-সবাই ৫০টি অঙ্গরাজ্যের ভিন্ন ভিন্ন আইনের পরিবর্তে একটি জাতীয় এআই মানদণ্ডের আহ্বান জানিয়েছে। তাদের যুক্তি, এসব আইন উদ্ভাবনকে বাধাগ্রস্ত করছে। কম্পানিগুলোর দাবি, অঙ্গরাজ্যগুলোকে এআই নিয়ন্ত্রণ করতে দিলে যুক্তরাষ্ট্র এআই উন্নয়নে চীনের তুলনায় পিছিয়ে পড়বে।
তবে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের অঙ্গরাজ্য নেতারাই এআইয়ের জন্য নিয়ন্ত্রণমূলক সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।
গত সপ্তাহে ফ্লোরিডার রিপাবলিকান গভর্নর রন ডেস্যান্টিস এমন একটি আইন প্রস্তাব উত্থাপন করেন, যা ডেটা গোপনীয়তা, অভিভাবক নিয়ন্ত্রণ এবং ভোক্তা সুরক্ষাসহ একটি ‘এআই বিল অব রাইটস’ সৃষ্টি করবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
অন্যান্য অঙ্গরাজ্য সম্মতি ছাড়া যৌনভাবে আপত্তিকর ছবি তৈরিতে এআই ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা, অননুমোদিত রাজনৈতিক ডিপফেক নিষিদ্ধ করা এবং বৈষম্যের জন্য এআই ব্যবহারের সুযোগ বন্ধের লক্ষ্যে আইন পাস করেছে। ক্যালিফোর্নিয়ায়, যেখানে বেশ কয়েকটি বড় এআই কম্পানির সদর দপ্তর রয়েছে, বড় ডেভেলপারদের সম্ভাব্য বিপর্যয়কর ঝুঁকি মোকাবিলায় তাদের পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করা বাধ্যতামূলক করা হবে।
ট্রাম্প গত মাসে কংগ্রেসকে আসন্ন একটি প্রতিরক্ষা বিলের সঙ্গে অঙ্গরাজ্যগুলোর এআই আইন বন্ধ করার ভাষা যুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট—উভয় দলের অঙ্গরাজ্য আইনপ্রণেতা ও অ্যাটর্নি জেনারেলদের কাছ থেকে এই প্রস্তাবের প্রবল বিরোধিতা আসে।
সে সময় নর্থ ক্যারোলিনার ডেমোক্র্যাট অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ জ্যাকসন বলেন, ‘কংগ্রেস বাস্তব সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়ে আবার অঙ্গরাজ্যগুলোকে এগিয়ে আসা থেকেও আটকাতে পারে না।’
চলতি বছর এআই আইন বন্ধের একটি উদ্যোগের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে ৯৯–১ ভোটে প্রস্তাবটি বাতিল হয়ে যায়, অঙ্গরাজ্য নেতৃবৃন্দ ও ভোক্তা অধিকার সংগঠনগুলোর বিরোধিতার মুখে।