সরকারের উচ্চপর্যায় এবং সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, আজ বুধবারই এই দুই উপদেষ্টা পদত্যাগপত্র জমা দিতে পারেন। গতকাল মঙ্গলবার (৯ই ডিসেম্বর) উপদেষ্টা পরিষদের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের যমুনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিষয়টি আলোচিত হয়। সাধারণত প্রতি মঙ্গলবার মধ্যাহ্নভোজ ও বৈঠকের রীতি থাকলেও, গতকালের আলোচনায় দুই ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগের বিষয়টি উঠে আসে এবং সন্ধ্যায় সরকারের দায়িত্বশীলরা বিষয়টি নিশ্চিত হন।
এদিকে, আজ বুধবার বেলা তিনটায় সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন জানিয়েছেন, উপদেষ্টা সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কথা বলবেন। তবে সরকার ও আসিফ মাহমুদের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো আভাস দিয়েছে যে, মূলত পদত্যাগের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভবে জানাতেই এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে।
সূত্রমতে, গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়েই সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদকে পদত্যাগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তখন তারা কিছুটা সময় চেয়েছিলেন। উপদেষ্টা মাহফুজ আলম সরকারের মেয়াদের শেষ সময় পর্যন্ত থাকার এবং নির্বাচন না করার আগ্রহও প্রকাশ করেছিলেন। তবে গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে আবারও তাদের পদত্যাগের তাগাদা দেওয়া হয়।
সরকারের নীতিনির্ধারকরা এবং উপদেষ্টা পরিষদের অধিকাংশ সদস্য একমত যে, তফসিল ঘোষণার পর ছাত্র প্রতিনিধিদের সরকারে থাকা সমীচীন হবে না তারা নির্বাচনে অংশ নিন বা না নিন। শেষ পর্যন্ত সরকারের এই মনোভাব মেনে নিয়েই তারা পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন প্রশ্ন, পদত্যাগের পর এই দুই উপদেষ্টার গন্তব্য কী হবে? আসিফ মাহমুদ গত ৯ই নভেম্বর নিজের ভোটার এলাকা পরিবর্তন করে ধানমন্ডিতে স্থানান্তর করেন, যা থেকে ধারণা করা হচ্ছে তিনি ঢাকা-১০ আসন (ধানমন্ডি, কলাবাগান, নিউমার্কেট ও হাজারীবাগ) থেকে নির্বাচন করতে পারেন। তবে এই আসনে বিএনপি গতকাল তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। আসিফ মাহমুদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন, নাকি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বা অন্য কোনো দলের হয়ে লড়বেন, তা এখনো পরিষ্কার নয়। এমনকি বিএনপির সঙ্গে সমঝোতার গুঞ্জন থাকলেও দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে, মাহফুজ আলমের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর-১ আসনে। সেখানেও বিএনপির সঙ্গে সমঝোতার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে গেছে। গত সোমবার বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বিএনপিতে যোগ দেওয়ায় এবং বিএনপি তাকে লক্ষ্মীপুর-১ থেকে মনোনয়ন দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় মাহফুজের সমীকরণ জটিল হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ই আগস্ট ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ এবং মাহফুজ আলম সরকারে যুক্ত হন। এর মধ্যে নাহিদ ইসলাম আগেই পদত্যাগ করে নবগঠিত রাজনৈতিক দল 'জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়কের দায়িত্ব নিয়েছেন। বর্তমানে এনসিপি, এবি পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন মিলে নতুন জোট গঠন করেছে এবং মাহফুজ ও আসিফ শেষ পর্যন্ত এনসিপির মনোনয়নে নির্বাচন করবেন কি না, সেদিকেই এখন সবার দৃষ্টি।
এবি/টিকে