ভর্তি বাণিজ্যের ওএমআর কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত হয়েও পদোন্নতি পাচ্ছেন দন্ডপ্রাপ্ত পলাতক শেখ হাসিনার পক্ষে বিবৃতি দেওয়া জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মাসুদ রানা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপস্থি শিক্ষক সংগঠন নীল দলের সাধারণ সম্পাদক এবং মানবসম্পদ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সকাল থেকে এ ঘটনাটি চাউর হয়ে উঠলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে-বাইরে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্র জানায়, বিগত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর পালিয়ে যাওয়ার পর ওএমআর কেলেঙ্কারি করে ভর্তি বাণিজ্যের ঘটনায় ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে দীর্ঘ তদন্তে অভিযোগের প্রমাণ পেয়ে অভিযুক্তদের শোকজ এবং লিখিত জবাব দাখিলের পর সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে শাস্তির সুপারিশ করে প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত কমিটি। এরই মাঝে মানবতাবিরোধী অপরাধে দন্ডপ্রাপ্ত পলাতক শেখ হাসিনার পক্ষে বিবৃতি দেয় অভিযুক্ত শিক্ষক ড. মাসুদ রানা।
অভিযোগ উঠেছে- অপরাধমূলক এসব কর্মকান্ডের রেশ কাটতে না কাটতেই বিতর্কিত এই শিক্ষককে পদোন্নতির নামে পুরস্কৃত করার প্রস্তাবনা নতুন বির্তকের সৃষ্টি করেছে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত জুলাই আন্দোলনের পরিপন্থি।
ভর্তি বাণিজ্যের ওএমআর কেলেঙ্কারির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডীন ড. এএইচএম কামাল বলেন, বিগত ৪-৫ মাস আগে অভিযুক্তদের শাস্তির সুপারিশ করে প্রশাসনের কাছে শাস্তির সুপারিশ করে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে শাস্তির বিষয়টি সিন্ডিকেট সদস্যদের নিয়ে গঠিত একটি কমিটি দেখছেন। এর বাইরে আমি আর কোন মন্তব্য করতে পারছি না।
এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতারা। তারা বলেন, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। তিনি ভর্তি বাণিজ্যের ঘটনায় ওএমআর কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত। এ বিষয়টি সুরাহা না করে তার পদোন্নতির প্রস্তাবনা অনাকাঙ্খিত। আশা করছি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ধরনের সমালোচিত কর্মকান্ডে সায় দিবে না।
শিক্ষার্থীরা আরও জানায়, ড. মাসুদ রানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের ঘনিষ্ঠভাজন হওয়ার কারণে বিগত সময়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন। জুলাই আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল ফ্যাসিষ্টদের পক্ষে। তিনি জুলাই আন্দোলনে বিরোধীতাসহ একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত। এই অবস্থায় তাকে শাস্তির বদলে পুরস্কৃত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন আয়োজনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
এ ঘটনার বিষয়ে জানতে একাধিকবার মোবাইলে কল করে এবং হোয়াটসআপে ম্যাসেজ পাঠিয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান কোন সাড়া দেননি।
তবে মঙ্গলবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো: জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে গণমাধ্যম কর্মীর দেখা হলে তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন সিদ্ধান্তই আমার একার পক্ষে নেওয়া সম্ভব নয়। কারা এসব প্রস্তাব আনছে, তাদের প্রশ্ন করুন। তাছাড়া পদোন্নতি তো আর হয়ে যায়নি, অনেক প্রস্তাব সিন্ডিকেটে যায় কিন্তু সব তো আর পাশ হয় না।”
এ সময় ভর্তি বাণিজ্যের ওএমআর কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত হওয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, “পদোন্নতি এবং তদন্তে অভিযুক্ত হওয়া দু’টি আলাদা বিষয়। তবে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
এবি/টিকে