ইউক্রেনে দ্রুত প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তিনি অভিযোগ করেছেন, যুদ্ধের অজুহাতে কিয়েভ নির্বাচন এড়িয়ে যাচ্ছে এবং এতে দেশটির গণতন্ত্র প্রশ্নের মুখে পড়ছে।
এ ব্যাপারে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো যদি নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, তবে আগামী ৬০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে ইউক্রেনে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব।
রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত দিনদিন আরও তীব্র হচ্ছে। বাড়ছে দুইপক্ষের হামলা পাল্টা হামলা। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) রুশ মন্ত্রণালয় দাবি করে, ইউক্রেনের আরও একটি বসতি নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয়েছে তাদের সেনারা। অন্যদিকে লিমান, স্লোভিয়ানস্কসহ কয়েকটি শহরে রাশিয়ার হামলা সফলভাবে প্রতিহত করার দাবি করে জেলেনস্কি বাহিনী।
ইউক্রেনের দোনেৎস্ক ওব্লাস্টের পোকরভস্ক শহর পোকরোভস্কেও চলছে রুশ হামলা। কিয়েভের দাবি, বুধবার কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ শহরটিতে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। তবে ইউক্রেনীয় সেনারা এখনও শহরের একটি অংশের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে বলে দাবি করেছে কিয়েভ। তবে সেখানকার পরিস্থিতি ইউক্রেনের অনুকূলে নেই বলেও স্বীকার করেছে জেলেনস্কি প্রশাসন।
চলমান সংঘাতের মধ্যেই আলোচনায় উঠে এসেছে ইউক্রেনের নির্বাচন প্রসঙ্গ। তুর্কি সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ডের প্রতিবেদন মতে, মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) পলিটিকোকে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ইউক্রেনের এখনই নির্বাচন আয়োজন করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, দেশটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিযোগ করেন, রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করে ইউক্রেন। আর তারপর থেকে দেশটিতে নির্বাচন স্থগিত রয়েছে। নির্বাচন এড়াতে যুদ্ধকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে কিয়েভ।
ইউক্রেনের আইন অনুযায়ী, যুদ্ধ চলাকালে দেশে জাতীয় নির্বাচন নিষিদ্ধ। মূলত ২০২৪ সালের মার্চ মাসে দেশটিতে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে রুশ সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে সামরিক আইনের মেয়াদ বারবার বাড়ানো হয়েছে। ফলে নির্বাচন পিছিয়ে গেছে।
ট্রাম্পের এই মন্তব্যে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। তিনি বলেন, নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে আগামী তিন মাসের মধ্যেই হতে পারে নির্বাচন, যদি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো যদি নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
জেলেনস্কি আরও বলেন, যুদ্ধকালীন সময়ে নির্বাচন আয়োজনের আইনি জটিলতা নিরসনে তিনি ইউক্রেনের পার্লামেন্ট ‘ভারখোভনা রাদা’-র ক্ষমতাসীন দলের সদস্যদের আইন সংশোধনের প্রস্তাব তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, যেকোনো নির্বাচনের প্রধান পূর্বশর্ত হলো নিরাপদ ভোটদানের পরিবেশ নিশ্চিত করা।
নির্বাচন নিয়ে জেলেনস্কির এই বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছে রাশিয়া। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ইউক্রেনে নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অনেক আগে থেকেই বলে আসছেন। প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পও এ নিয়ে অনেকবার কথা বলেছেন।
একদিনে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে অন্যদিকে যুদ্ধ বন্ধে কূটনৈতিক অঙ্গনেও আছে তোড়জোড়। ইউরোপীয় দেশগুলো ইউক্রেনের শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে আরও সমন্বয়মূলক আলোচনা করতে চলেছে। জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস জানান, চলমান সংকট সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বার্লিন। অন্যদিকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ইউরোপ দৃঢ়ভাবে ইউক্রেনকে সমর্থন দিচ্ছে।
ইএ/এসএন