নির্বাচন একটি অবধারিত বিষয়ে পরিণত হলেও সেই নির্বাচন ভালো ও গ্রহণযোগ্য হবে কি না, সেই শঙ্কা এখনো কাটছে না। দেশের মানুষ ভোটাধিকার সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চায়।
নির্বাচন কমিশনকে এখন প্রমাণ করতে হবে যে তারা একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করতে পারে। সেই আস্থা ফিরিয়ে আনা জরুরি। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ছাড়া রাষ্ট্র-সমাজের স্থিতি ফিরবে না।
গতকাল বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর একটি হোটেলে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের প্রাক্-নির্বাচনী উদ্যোগ ‘আঞ্চলিক পরামর্শ সভা’ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দল, ব্যাবসায়িক গোষ্ঠী, নাগরিক সম্প্রদায়, সেনাবাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য বাহিনী এবং অন্তর্বর্তী সরকারও নির্বাচন চায়। প্রধান উপদেষ্টা ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ নির্বাচন করে দেখানোর কথা বলেছেন, যার অপেক্ষায় সবাই।
সভায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষক, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, নারী অধিকার কর্মী, শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের বক্তব্য তুলে ধরে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, নাগরিকরা সুশাসন, জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহি, নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করার প্রত্যাশা জানিয়েছেন। সবাই একটি দক্ষ প্রশাসন, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা এবং নিরপেক্ষ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা চান। এই দাবিগুলো রাজনীতিবিদরা তাঁদের নির্বাচনী ইশতেহারে কিভাবে স্থান দেবেন, তা জানার জন্য নাগরিকরা অপেক্ষায় আছেন। এত সংস্কারের আলোচনা হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ সংস্কারের বিষয়ে কোনো বড় আলোচনা হয়নি বলে উল্লেখ করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
তিনি বলেন, রাজনীতিবিদ, সরকার, নির্বাচন কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশন -কারো তরফ থেকেই এ বিষয়ে অগ্রগতি দেখা যায়নি। দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বিগত ও বর্তমান সরকার তাদের মন্ত্রিপরিষদ বা সরকারপ্রধানের সম্পত্তির হিসাব দেবে -এমন ঘোষণা দিলেও তা পূরণ না করায় মানুষের মধ্যে অনেক বড় হতাশা রয়েছে। অনেকে আশঙ্কা করছেন, এই ব্যর্থতা আগামী সরকারকেও উৎসাহ জুগিয়ে গেল কি না। শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দার খান বলেন, নাগরিকদের অধিকারসচেতন হতে হবে, দায়িত্ব নিতে হবে। জনপ্রতিনিধিদের জবাবের মুখোমুখি করতে হবে।
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ, চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক চর্চা বাড়াতে হবে। ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য মোহাম্মদ নাজিমুদ্দিন শঙ্কা প্রকাশ করেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে যাওয়ার সময় মবের শিকার হবেন কি না, তা নিয়ে তিনি শঙ্কায় আছেন।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ শাহজাহান নাগরিকবান্ধব, বিকেন্দ্রীভূত শাসনের আহবান জানান এবং সম্প্রদায়গুলোকে একত্র করার জন্য স্থানীয় নাগরিক ফোরামের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, সিপিডির অতিরিক্ত পরিচালক (গবেষণা) তৌফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ।
পিএ/এসএন