ভারত, চীনসহ বেশ কয়েকটি এশীয় দেশের পণ্যে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে মেক্সিকো। দীর্ঘদিনের মুক্ত বাণিজ্যপন্থা থেকে দেশটি এভাবে সরে আসা বড় ধরণের নীতিগত পরিবর্তন বলে মনে করা হচ্ছে। আগামী বছর থেকে কার্যকর এই শুল্কহার ২০২৬ সাল পর্যন্ত ধাপে ধাপে আরও বিস্তৃত হবে বলে জানানো হয়েছে বিবিসি ও হিন্দুস্তান টাইমস'র প্রতিবেদনে।
মেক্সিকোর সিনেট ১ হাজার ৪০০’র বেশি পণ্যে নতুন শুল্কহার অনুমোদন করেছে। যে সব দেশ মেক্সিকোর সঙ্গে কোনো বাণিজ্যচুক্তি নেই, তাদের পণ্যের ওপর এই শুল্ক বসবে। তালিকায় ভারত, চীন ছাড়াও রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া। বিলের পক্ষে ভোট পড়ে ৭৬টি। বিরোধিতা করে পাঁচজন। বিরত থাকে ৩৫ জন। এর আগেই নিম্নকক্ষ প্রস্তাব অনুমোদন করেছিল।
নতুন শুল্ক মূলত শিল্পকারখানার কাঁচামাল ও ভোক্তাপণ্যে প্রভাব ফেলবে। এর মধ্যে রয়েছে গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশ, টেক্সটাইল, পোশাক, প্লাস্টিক, ধাতু ও জুতা। কিছু পণ্যে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ কর আরোপ হবে। তবে বেশিরভাগ পণ্যের শুল্ক ৩৫ শতাংশের মধ্যে থাকবে বলে জানা গেছে।
লাতিন আমেরিকায় রপ্তানি বাড়াতে ভারত দীর্ঘদিন ধরে মেক্সিকোকে একটি কৌশলগত বাজার হিসেবে দেখছে। মেক্সিকো অঞ্চলটির দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। একই সঙ্গে উত্তর আমেরিকার সরবরাহ নেটওয়ার্কে প্রবেশের গুরুত্বপূর্ণ পথ। ভারতীয় রপ্তানিকারকরা এই সুবিধা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাজার বিস্তারে কাজ করে এসেছে।
নতুন শুল্কহার সেই সুবিধাকে সংকুচিত করতে পারে। এরইমধ্যে মেক্সিকোর কয়েকটি আমদানিনির্ভর কারখানা সতর্ক করেছে ভারতসহ এশীয় দেশগুলোর পণ্যে বাড়তি শুল্ক উৎপাদন ব্যয় বাড়াবে। মূল্যস্ফীতি আরও উসকে দিতে পারে বলেও মত তাদের। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে এখনও বক্তব্য দেয়নি।
নতুন এই শুল্কনীতির ফলে ভারতীয় পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা কমবে। বিশেষ করে টেক্সটাইল, লেদার, অটো পার্টস ও স্টিল খাতে চাপ বাড়বে। কোম্পানিগুলোকে সরবরাহ শৃঙ্খল নতুন করে ভাবতে হতে পারে। মেক্সিকো হয়ে উত্তর আমেরিকায় যেসব ভারতীয় প্রতিষ্ঠান পণ্য পাঠায়, তাদের ব্যয়ও বাড়বে।
বিশ্লেষকদের মতে, মেক্সিকোর এই সুরক্ষাবাদী অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের চাপে নেওয়া সিদ্ধান্ত হতে পারে। আগামী বছর ইউএসএমসিএ চুক্তির পুনর্মূল্যায়ন ঘিরে ওয়াশিংটনের অবস্থান আরও কঠোর হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এরইমধ্যে চীনের পণ্যে ব্যাপক শুল্কারোপ করেছে। মেক্সিকো নিজস্ব রপ্তানিতে আরোপিত মার্কিন শুল্ক কিছুটা শিথিল হবে, এই আশায় এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে দেশটি।
যদিও প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম যুক্তরাষ্ট্রের দাবি মানতেই এই শুল্ক আরোপ, এমন কথা অস্বীকার করেছেন। তবে নতুন শুল্ক কাঠামো যে অনেকাংশে মার্কিন নীতির অনুরূপ, তেমন ইঙ্গিত দিয়েছে ব্লুমবার্গ।
কেএন/টিকে