উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক যাত্রা হলো সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ গতকাল আইন উপদেষ্টা, অ্যাটর্নি জেনারেল ও বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতকে সঙ্গে নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে এ সচিবালয়ের উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি বলেন, সচিবালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিচারকাজ ও বিচারব্যবস্থা পরিচালনার সাংবিধানিক ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের হাতে ন্যস্ত হয়েছে। এখন সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ হবে এই সচিবালয়ের স্থায়িত্ব ধরে রাখা।
তিনি বলেন- এর সাফল্য যেমন আমাদের অর্জন হবে, ব্যর্থতাও আমাদের মেনে নিতে হবে। বিচার বিভাগের কার্যকর স্বাধীনতার প্রত্যয়-প্রতিশ্রুতি নিয়ে শুরু হওয়া এই যাত্রার সঙ্গে আইনের শাসন ও গণতন্ত্রের যাত্রা অটুট রাখতে রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টের ৪ নম্বর প্রশাসনিক ভবনে এই সচিবালয় উদ্বোধন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন আপিল বিভাগের বিচারপতিবৃন্দ, অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত, ইউএনডিপির রেসিডেন্ট রিপ্রেজেনটেটিভ, বাংলাদেশের অ?্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন, সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান সিদ্দিকী, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব লিয়াকত আলী প্রমুখ।
প্রধান বিচারপতির সঙ্গে জার্মান রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ : প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত ড. রুডিগার লোটজ। গতকাল প্রধান বিচারপতির কার্যালয়ে এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। জার্মান রাষ্ট্রদূত সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির শপথ গ্রহণের পর দেশের বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক স্বতন্ত্রীকরণের জন্য তার নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ এবং উদ্যোগগুলোর সফল বাস্তবায়নের প্রশংসা করেন। সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলামের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
আইন উপদেষ্টা বলেন, আজকে বাংলাদেশে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মানবাধিকার এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পথে ঐতিহাসিক দিন। সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠার জন্য বিগত দুই-তিন দশক অনেক চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে এই আইন পাস হয়েছে। এর পেছনে আমাদের প্রধান বিচারপতি অত্যন্ত উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেছেন।
গত ৩০ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে স্বাধীন বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়। অধ্যাদেশ জারির পরদিন ১ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান সিদ্দিকীকে সচিবালয়ের সিনিয়র সচিবের দায়িত্ব দেন প্রধান বিচারপতি। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে তাকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওই দিনই প্রধান বিচারপতির মনোনয়নে সচিবালয়ের ‘পদ সৃজন’ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সভাপতি করা হয়েছে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামকে। একই দিনে গঠিত হয় সচিবালয়ের ‘পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কমিটি’। এই কমিটির সভাপতি করা হয়েছে আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. রেজাউল হককে।
এদিকে গতকাল সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় উদ্বোধনের আগে প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্ট হেল্পলাইন সেন্টারও উদ্বোধন করেন। সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনের দ্বিতীয় তলায় এই সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতির পদক্ষেপে বিচারপ্রার্থীদের সেবা নিশ্চিত করতে গত বছর ২৬ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে প্রথমবারের মতো হেল্পলাইন সেবা চালু করা হয়। এই সেবা চালুর পর ব্যাপক সাড়া মেলে। আরেকটি হেল্পলাইন চালু করা হয় চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি। ক্রমান্বয়ে দেশের সব জেলার দায়রা জজ আদালত এবং ৮টি মহানগর দায়রা জজ আদালতে হেল্পলাইন সেবা চালু করা হয়।
ইএ/এসএন