প্রতিবেশি দেশগুলো থেকে পালিয়ে আসা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ভিন্ন মতাদর্শের মানুষ, যুদ্ধবিধ্বস্ত শরণার্থীদের এক সময়ের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত ছিলো উপসাগরীয় দেশ কুয়েত। তবে, ক্ষমতার পালাবদলে বর্তমানে বদলে গেছে দেশটির পরিস্থিতি।
সম্প্রতি কার্যকর হওয়া আইনের জেরে কুয়েতে নাগরিকত্ব হারাচ্ছেন বিভিন্ন দেশ থেকে যাওয়া এবং দীর্ঘদিন ধরে সেখানে বসবাসরত মানুষেরা।
২০২৩ সালে কুয়েতের নতুন আমির শেখ জাবের আল সাবাহ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পরিবর্তিত হওয়া শুরু করে দেশটির গণতান্ত্রিক প্রেক্ষাপট। এমন পরিস্থিতির জেরে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে অভিনব এক আইনের প্রবর্তন করে দেশটির প্রশাসন। যার আওতায় আমির বা ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের সমালোচনা অথবা রাষ্ট্রবিরোধী যেকোনো কাজের প্রমান মিললেই স্থগিত হবে কুয়েতে বাস করা বাসিন্দাদের নাগরিকত্ব। এর পাশাপাশি কুয়েতের নাগরিক কোনো পুরুষকে বিবাহের মাধ্যমে দেশটিতে বসবাসরত বিধবা ও তালাকপ্রাপ্ত নারীদের নাগরিকত্বও কেড়ে নেয়া হবে।
কার্যকর হওয়া এই বিধানে নিপীড়িতদের সংখ্যায় শীর্ষে রয়েছে নারীরা। বাতিল হওয়া নাগরিকদের দুই-তৃতীয়াংশই নিজ দেশ ছেড়ে কুয়েতে বাস করতে আসা নারীরা। বিধবা কিংবা তালাকপ্রাপ্ত নারীদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে তাদের শিক্ষা, চাকরি, চিকিৎসার মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা এমনকি সম্পত্তির মালিকানাও। তাদের দায় পুরোপুরি অস্বীকার করে নিজ দেশে ফিরে যেতে নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।
রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ আল মাইল বলেন, ৭০'এর দশকে মধ্যপ্রাচ্যের নিপীড়িত মানুষদের জন্য ইউরোপের চেয়েও বেশি নিরাপদ আশ্রয়স্থল ছিলো কুয়েত। সেই একই রাষ্ট্র এখন নিজের সন্তানদেরই নিপীড়নের কারণ হয়ে উঠেছে।
নতুন এই আইনের জেরে গেলো মার্চে একদিনে কুয়েতের নাগরিকত্ব হারায় ৪ শতাধিক মানুষ। এরপর গেলো সেপ্টেম্বর থেকে নাগরিকত্ব রদ হওয়াদের সংখ্যা প্রকাশ করা বন্ধ করে দেয় দেশটির সরকার। সম্প্রতি এই ইস্যুতে ব্রিটিশ গণমাধ্যম মিডল ইস্ট আই এর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিশ্লেষকরা বলছেন, গেলো এক বছরে নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে প্রায় ২ লাখের মতো মানুষকে।
কুয়েত প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তকে সহিংস ও পুরুষতান্ত্রিক বলে মন্তব্য করেছে অনেকে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী জোরপূর্বক কাউকে রাষ্ট্রহীন করা অবৈধ হিসেবে গণ্য হলেও এ নিয়ে এখনো নিশ্চুপ বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো।
এমকে/টিএ