মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি তুলে ধরতে বধ্যভূমি সংরক্ষণ করা জরুরি : চসিক মেয়র

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী বধ্যভূমিতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। 

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের শহীদরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদের স্মৃতি নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে বধ্যভূমি সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে পাহাড়তলী বধ্যভূমিতে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মেয়র বলেন, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল। দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই শহিদুল্লাহ কায়সার, জহির রায়হান, ডাক্তার আব্দুল আলিম, গোবিন্দচন্দ্রসহ অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়েই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। 

তিনি বলেন, স্বাধীনতার মূল চেতনা ন্যায্যতা, সাম্য, মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচার এখনো পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বিজয় তখনই পরিপূর্ণ হবে, যখন মানুষ তাদের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাবে।

আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে মেয়র শাহাদাত বলেন, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০০১ সালের পর দেশে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়নি। ২০০৮ সালে সীমানা নির্ধারণ নিয়ে কারচুপি, ২০১৪ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচন, ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে এবং ২০২৪ সালে প্রহসনের নির্বাচন হয়েছে। গত ১৬–১৮ বছর ধরে জনগণ নির্বাচনের নামে তামাশা দেখেছে। এখন মানুষ একটি উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চায়।

তিনি আরও বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীরা লাল-সবুজের পতাকা ও স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ ফিরে পেতে হলে হারানো অধিকার পুনরুদ্ধার করতে হবে। আগামী নির্বাচনে ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’— এই চর্চা আবার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শহীদের রক্ত কখনো বৃথা যায় না, ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশে আবার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে।

চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মেয়র বলেন, দেশে এখনো নগর সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সিটি মেয়রের অধীনে নেই। তবে সমন্বয়ের মাধ্যমে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে। পুলিশ কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলোতে সিটি গভর্নমেন্টের অধীনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকে। আমাদের নগর সরকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত একটি নিরাপদ, পরিচ্ছন্ন ও পরিকল্পিত শহর গড়া কঠিন। তবুও সমন্বয়ের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা ৬০ শতাংশ কমানো সম্ভব হয়েছে। সবাই ঐক্যবদ্ধ হলে চট্টগ্রামকে নিরাপদ ও বাসযোগ্য শহর হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।

অরক্ষিত বধ্যভূমি প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, চট্টগ্রামে যেসব বধ্যভূমি এখনো অরক্ষিত রয়েছে, সেগুলো সুরক্ষায় সিটি কর্পোরেশন কাজ করবে। তবে বাজেট সংকটের কারণে কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। গণতান্ত্রিক সরকার না থাকায় বিনিয়োগও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

তিনি জানান, বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস, গ্রিন ডিজেল, বিদ্যুৎ উৎপাদন, সোলার শিল্পসহ পরিবেশবান্ধব শহর গড়তে নানা প্রকল্পের ডিপিপি প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে চট্টগ্রামবাসীর প্রত্যাশিত উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন সহজ হবে।

এ সময় মেয়রের সঙ্গে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিব মো. আশরাফুল আমিন, বিভাগীয় ও শাখা প্রধানবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

কেএন/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
৮ দফা ঘোষণায় জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশের সমাপ্তি Dec 14, 2025
img
দেশে থাকা ফ্যাসিবাদী শক্তির অবশিষ্টাংশ দমন করা হবে : আদিলুর Dec 14, 2025
img
অভিষেক ম্যাচেই ২ রানে আউট বাবর আজম Dec 14, 2025
img
ওসমান হাদিকে ব্যাংকক নিতে প্রস্তুত এয়ার অ্যাম্বুলেন্স Dec 14, 2025
img
ঢাকার হত্যা চেষ্টায় বিএনপিকে জড়ানোর ষড়যন্ত্র চলছে : আলতাফ হোসেন চৌধুরী Dec 14, 2025
img
ভারত সন্ত্রাসীদের সেফ হাউজ: হাসনাত Dec 14, 2025
img
পরিবহন সেক্টরে জাতীয় সমন্বিত বহুমাধ্যমভিত্তিক মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন Dec 14, 2025
img
অসৎ ও অসাধু বিচারকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে : প্রধান বিচারপতি Dec 14, 2025
img
যুবভারতী কাণ্ডে স্ত্রীর জন্য প্রতিবাদী হলেন রাজ Dec 14, 2025
img
বোনদের অভিযোগকে মিথ্যা দাবি ডিপজলের Dec 14, 2025
img
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে থাই রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ, সরাসরি নৌপরিবহন চালুর পরিকল্পনা Dec 14, 2025
img
পরিবারের সিদ্ধান্তে হাদিকে বিদেশে নেওয়ার প্রস্তুতি Dec 14, 2025
img
সব আনন্দ মিস করছি: মিমি চক্রবর্তী Dec 14, 2025
img
প্রতারণা মামলায় তুরিন আফরোজকে গ্রেপ্তার দেখানোর নির্দেশ Dec 14, 2025
img

জামায়াত নেতা মিলন

হাদিকে বারবার প্রাণনাশের হুমকি দিলেও পদক্ষেপ নেয়নি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় Dec 14, 2025
img
ঝিনাইদহ সীমান্তে বিজিবির সতর্কতা জোরদার Dec 14, 2025
img
৫৪ বছরেও বুদ্ধিজীবী হত্যার তদন্ত বা বিচার করা হয়নি : গোলাম পরওয়ার Dec 14, 2025
img
রাজশাহীতে শিশু সাজিদের ঘটনায় ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ Dec 14, 2025
img
১৭ দিনে ১ বিলিয়ন ডলার আয় করল ডিজনি অ্যানিমেশন সিক্যুয়াল ‘জুটোপিয়া টু’ Dec 14, 2025
img
ক্রিকেটারদের গেটের বাইরে আটকে রাখা হয়েছিল, দাবি তামিমের Dec 14, 2025