সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সহিংসতা উসকে দিয়ে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা এবং সংবাদমাধ্যমের ওপর হামলায় উসকানি দেওয়া কনটেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মেটাকে চিঠি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) মেটাকে এ চিঠি দেয়। একই সঙ্গে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ সংক্রান্ত কনটেন্টগুলোর ওপর বিশেষ নজরদারি জারি রাখতে মেটাকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথে থাকা বাংলাদেশে মেটার প্ল্যাটফর্মগুলোকে সহিংসতা উসকে দিতে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা বাস্তব জীবনের সহিংসতায় রূপ নিচ্ছে। এর ফলে উত্তেজনা ভয়াবহভাবে বেড়েছে।
এতে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তি ফেসবুকে প্রকাশ্যে ওসমান হাদির মৃত্যুকে সমর্থন জানিয়েছেন। অন্যরা গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতার আহ্বান জানিয়েছেন। এসব বক্তব্য ছড়ানোর পর প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর মারাত্মক হুমকি তৈরি হয়। সরকার ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ জানানো হলেও সহিংসতা উসকে দেওয়া অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় করতে মেটা সহযোগিতা করেনি বলেও চিঠিতে অভিযোগ করা হয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ফেসবুকের মাধ্যমে উসকে দেওয়া সহিংসতার সঙ্গে নাগরিকদের জীবন, গণতান্ত্রিক অধিকার, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও দেশের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা গভীরভাবে যুক্ত। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় কয়েকটি বিষয়ে মেটাকে ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানানো হয়েছে চিঠিতে।
সেসবের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ সংক্রান্ত কনটেন্টের ক্ষেত্রে কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড আরও কঠোর, দ্রুত ও প্রেক্ষাপট সংবেদনশীলভাবে প্রয়োগ করা, বাংলা ভাষাভিত্তিক কনটেন্ট মডারেশন করা, অনুভূতি বিশ্লেষণ ও প্রাসঙ্গিক পর্যালোচনা জোরদার করা এবং সহিংসতা, ভয়ভীতি প্রদর্শন বা সংগঠিত ক্ষতির আহ্বান জানানো কনটেন্টের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি শনিবার (২০ ডিসেম্বর) থেকে সন্ত্রাস ও সহিংসতার আহ্বান সম্বলিত সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের বিষয়ে সরাসরি হোয়াটসঅ্যাপ ও ই-মেইলে রিপোর্ট করার আহ্বান জানিয়েছে।
হোয়াটসঅ্যাপে ও ই-মেইলে প্রাপ্ত অভিযোগগুলো জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ের পর বিটিআরসির মাধ্যমে প্ল্যাটফর্মগুলোতে রিপোর্ট করবে।
তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় জানায়, সরকার সোশ্যাল মিডিয়ার কোনো পোস্ট ডাউন করতে পারে না। শুধু যৌক্তিক কারণ তুলে ধরে সহিংসতার সঙ্গে সম্পর্কিত পোস্টগুলো সংশ্লিষ্ট প্ল্যাটফর্মের কাছে রিপোর্ট করতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, হেট স্পিচ, যা সরাসরি সহিংসতা ঘটায় কিংবা সহিংসতার ডাক দেয়- সেটা জাতীয় সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫ মতে দণ্ডনীয় অপরাধ।
জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি সোশ্যাল মিডিয়াকে সহিংসতা কিংবা ভায়োলেন্স তৈরির টুল হিসেবে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি দেশ, নাগরিকের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তার ব্যাপারে সচেতন হতে জনসাধারণকে আহ্বান জানাচ্ছে।
এবি/টিকে