ব্রাজিলিয়ান সিরি আ'র মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়ায় কিছুদিনের মধ্যেই ফ্রি এজেন্ট হয়ে যাবেন নেইমার জুনিয়র। সান্তোসের সঙ্গে নতুন করে চুক্তির সম্ভাবনা থাকলেও ইউরোপে ফেরার কথাও ভাবছেন এই ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার। তবে, তাকে দলে ভেড়ানোর ব্যাপারে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোকে সতর্ক করেছেন ইংল্যান্ডের সাবেক তারকা ক্রিস ওয়াডল। ইংলিশ ক্লাবগুলোর উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ব্রাজিলিয়ান তারকার জন্য কোনো উদ্যোগ নিলে তা মূলত হবে 'কতগুলো জার্সি বিক্রি হবে'—এই হিসাবেই।
আধুনিক যুগের অন্যতম সেরা ফুটবলার হলেও নেইমারের বয়স এখন ৩৩, আর সাম্প্রতিক সময়ে চোটে ভোগায় মাঠে তার বাস্তব অবদান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বাণিজ্যিক দিক থেকে নেইমারের সঙ্গে চুক্তি করা যে বিশ্বের যেকোনো ক্লাবের জন্যই বড় সাফল্য হবে—এ নিয়ে সন্দেহ নেই। দক্ষিণ আমেরিকার এই তারকাকে ঘিরে বিশ্বজুড়ে এখনো বিপুল আগ্রহ ।
তবে হাঁটুর লিগামেন্টে চোট পাওয়ার পর সৌদি প্রো লিগের আল-হিলালের সঙ্গে তার মোটা অঙ্কের চুক্তি বাতিল হলে তিনি দেশে ফিরে সান্তোসে যোগ দেন। দেশে ফেরার পরও তাকে একাধিকবার চোটের কারণে মাঠের বাইরে ছিটকে যেতে হয়েছে।
২০২৫ সালে নেইমার সান্তোসকে অবনমন ঝুঁকি থেকে বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, কিন্তু মেয়াদ শেষে চুক্তির নবায়নে এখনো সম্মত হননি। ফলে অন্য কোথাও যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে বিশ্বকাপের আগে এই সুপারস্টারের ইউরোপে ফেরাও আলোচনায় জোরাল হচ্ছে। পাশাপাশি এমএলএসে ইন্টার মায়ামিতে লিওনেল মেসির সঙ্গে পুনর্মিলনের সম্ভাবনাও শোনা যাচ্ছে।
ইংল্যান্ডের সাবেক ফুটবলার ক্রিস ওয়াডল মনে করেন না যে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোর নেইমারের ওপর ঝুঁকি নেওয়া উচিত। একটি গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, 'আমি মনে করি না এটা (নেইমারের পরবর্তী ক্লাব) কোনো বড় ক্লাব হবে। তার গুরুতর হাঁটুর চোট ছিল (ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট), আর সম্প্রতি হ্যাটট্রিক করলেও প্রিমিয়ার লিগ খুব দ্রুতগতির ও কঠিন।'
তিনি যোগ করেন, 'সে ব্রাজিল দলে ফেরার চেষ্টা করছে, আর সত্যি বলতে ব্রাজিল আগের মতো শক্তিশালী নেই। তার দলে ঢোকা উচিত, কিন্তু আমি তাদের বিশ্বকাপ জিততে দেখছি না।'
নেইমারকে দলে ভেড়ানো প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোর জন্য জার্সি বিক্রির উপলক্ষ ছাড়া ভিন্ন কিছু মনে করছেন না টটেনহ্যাম, নিউক্যাসল ও মার্শেইয়ের মতো ক্লাবে খেলা ওয়াডল। তার ভাষায়, 'নেইমার আর ইংলিশ ফুটবল—এই দুইয়ের মিল এখন আর দেখি না। কেউ যদি তাকে আনে, সেটা হবে সে কত জার্সি বিক্রি করতে পারবে আর কী ধরনের প্রোফাইল আনবে—এসব কারণে; মাঠে দলকে অনেক ভালো করে তুলবে বলে নয়। এটা ফুটবলের চেয়ে বেশি বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত হবে। সে তো শেফিল্ড ওয়েডনেসডেতে আসবে না, তাই না?'
তিনি যোগ করেন, 'যদিও ব্যাপারটা দারুণ হতো—আমি অবশ্যই সেটা নিতে চাইতাম। কিন্তু বাস্তবে এটা হবে ক্লাবের প্রোফাইলের জন্য, তার খেলার গুণের জন্য নয়। আমি বলছি না সে ভালো খেলোয়াড় নয়—সে অবশ্যই ভালো—কিন্তু বয়স ৩৩, বড় চোটের ইতিহাস আছে, সান্তোসে খেলছে, আর সাম্প্রতিক হ্যাটট্রিক সত্ত্বেও এটা একেবারেই ভিন্ন স্তর। আমার কাছে এটা হবে মার্কেটিং, প্রচার আর দৃশ্যমানতা—মাঠে দল উন্নত করার চেয়ে।'
ব্রাজিলিয়ান ঘরোয়া মৌসুম শেষে শীতকালীন বিরতিতে যাওয়ার আগে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে নেইমার বলেছিলেন, 'আমি সত্যিই জানি না। কিছু দিন দরকার—বিশ্রাম নিতে, সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হতে—তারপর সিদ্ধান্ত নেব। নিশ্চিতভাবে আমার অগ্রাধিকার সবসময় সান্তোসই।'
এদিকে সান্তোস এখনো আশাবাদী যে নিজেদের ঘরের ছেলে নতুন চুক্তিতে সই করবেন। ক্লাব সভাপতি মার্সেলো তেইশেইরা ইএসপিএনকে বলেন, 'নেইমারের প্রকল্পটা আগামী বছরের বিশ্বকাপকে ঘিরে। শুরু থেকেই কথাবার্তা এভাবেই হয়েছে। সে যেকোনো জায়গায় যেতে পারত, তবু নিজের ঘর সান্তোসেই আসতে চেয়েছে। হয়তো বছরের প্রথম ভাগে আমরা এর বেশি সুবিধা নিতে চেয়েছিলাম, পারিনি—এতে কারও দোষ নেই। মৌসুমটা সে ভালোভাবেই শেষ করেছে, সে ছিল নির্ণায়ক।'
তিনি আরও বলেন, 'মাঠে ও মাঠের বাইরে—দুই জায়গাতেই নেইমারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আলোচনা চলছে। আমরা আর্থিক দিকগুলো পর্যালোচনা করছি এবং শর্ত বাড়াচ্ছি। আমি ইতিবাচক যে তার থাকা নিয়ে আমরা একটি সমাধানে পৌঁছাতে পারব।'
২০২৩ এর অক্টোবরে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ম্যাচে এসিএল চোট পাওয়ার পর নেইমার আর ব্রাজিল জাতীয় দলের হয়ে খেলেননি। দেশের হয়ে তিনি ১২৮টি ম্যাচ খেলেছেন এবং রেকর্ড ৭৯টি গোল করেছেন। এই প্লেমেকার এখনো ২০২৬ বিশ্বকাপে কার্লো আনচেলত্তির পরিকল্পনায় জায়গা পাওয়ার আশায় আছেন।
আরআই/টিএ