গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ইয়েন্স–ফ্রেডেরিক নিলসেন মঙ্গলবার জোর দিয়ে বলেছেন, স্বায়ত্তশাসিত এই ভূখণ্ডের ভবিষ্যৎ নিয়ে সব সিদ্ধান্ত গ্রিনল্যান্ডেই নেওয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও বলেছেন, ‘জাতীয় নিরাপত্তার’ স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিনল্যান্ড প্রয়োজন। ট্রাম্পের মন্তব্যের পরই নিলসেন এ কথা বলেন।
ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে নিলসেন বলেন, ‘গ্রিনল্যান্ড আমাদের দেশ। আমাদের সিদ্ধান্ত এখানেই নেওয়া হয়।’
জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ফেরার পর থেকে ট্রাম্প বারবার বলে আসছেন, সম্পদসমৃদ্ধ এই স্বায়ত্তশাসিত ভূখণ্ডটি নিরাপত্তার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্রয়োজন’, এবং তা নিশ্চিত করতে বলপ্রয়োগের সম্ভাবনাও তিনি নাকচ করেননি।
ট্রাম্প রবিবার লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের গভর্নর জেফ ল্যান্ড্রিকে গ্রিনল্যান্ডের জন্য বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ দেন। এ সিদ্ধান্তে ডেনমার্ক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় এবং কোপেনহেগেনে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে।
ফ্লোরিডার পাম বিচে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য আমাদের গ্রিনল্যান্ড দরকার। খনিজ সম্পদের জন্য নয়।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এটা চাইতেই হবে,’ এবং যোগ করেন যে ল্যান্ড্রি ‘এই উদ্যোগের নেতৃত্ব দিতে চেয়েছেন’। নিয়োগের পরপরই ল্যান্ড্রি ঘোষণা দেন, তিনি ডেনমার্কের এই ভূখণ্ডকে ‘যুক্তরাষ্ট্রের অংশ’ করতে চান।
নিজের পোস্টে নিলসেন বলেন, গ্রিনল্যান্ড দখলের বিষয়ে ট্রাম্পের নতুন করে আগ্রহের কথা শুনে তিনি ‘দুঃখিত’।
তিনি লেখেন, ‘এ ধরনের বক্তব্য আমাদের দেশকে শুধু নিরাপত্তা ও ক্ষমতার প্রশ্নে সীমাবদ্ধ করে ফেলে। আমরা নিজেদের এভাবে দেখি না, এবং গ্রিনল্যান্ডকে এভাবে বর্ণনা করা যায় না বা করা উচিতও নয়।’
তিনি পরিস্থিতি মোকাবিলায় ‘শান্ত ও মর্যাদাপূর্ণ’ অবস্থান নেওয়ার জন্য গ্রিনল্যান্ডের জনগণকে ধন্যবাদ জানান এবং অন্যান্য সরকারের সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
নিলসেন বলেন, ‘এই সমর্থন প্রমাণ করে যে আমরা এখানে একা নই।
ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লোক্কে রাসমুসেন সোমবার বলেন, এই পদক্ষেপে তিনি ‘ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ’ এবং ওয়াশিংটনকে ডেনমার্কের সার্বভৌমত্ব সম্মান করার আহ্বান জানান।
ইউরোপীয় ইউনিয়নও ডেনমার্কের প্রতি তাদের ‘পূর্ণ সংহতি’ প্রকাশ করেছে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁখো মঙ্গলবার বলেন, গ্রিনল্যান্ড ‘তার জনগণেরই’। তিনি এক্সে লেখেন, ‘ইউরোপীয়দের সঙ্গে একাত্ম হয়ে আমি আমাদের পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করছি।’ ডেনমার্ক ও গ্রিনল্যান্ড—উভয় পক্ষের নেতারাই বারবার জোর দিয়ে বলেছেন, এই বিশাল দ্বীপটি বিক্রির জন্য নয় এবং এর ভবিষ্যৎ তারাই নির্ধারণ করবে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে করা এক জনমত জরিপ অনুযায়ী, গ্রিনল্যান্ডের প্রায় ৫৭ হাজার মানুষের অধিকাংশ ডেনমার্ক থেকে স্বাধীনতা চায়, তবে তারা যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হতে চায় না। গত আগস্টে, ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ অন্তত তিনজন মার্কিন কর্মকর্তা গ্রিনল্যান্ডের রাজধানী নুকে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করা নিয়ে মানুষের মনোভাব জানতে চাইলে ডেনমার্ক যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছিল।
এবি/টিকে