এনসিপি

ইশতেহারে গুরুত্ব পাচ্ছে সময়ভিত্তিক রোডম্যাপ বাস্তবায়ন

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। আগামী মাসের যেকোনো দিন এই ইশতেহার ঘোষণা করা হবে দলটির সূত্রে জানা গেছে। গত ৩ আগস্ট রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এনসিপি নতুন বাংলাদেশের যে ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছিল, ওই ইশতেহারের হচ্ছে নির্বাচনী ইশতেহার। যেখানে দলটির পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া প্রতিটি অঙ্গীকার কখন, কিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে তার সময়ভিত্তিক রোডম্যাপ থাকবে।

দলটির নেতাদের ভাষ্য মতে, বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মতো প্রচলিত ইশতেহার কাঠামো থেকে বেরিয়ে আসার চিন্তা করছে এনসিপি। এ জন্য ইশতেহারে রাষ্ট্র ও সমাজ সংস্কারের রূপরেখার পাশাপাশি বাস্তবায়নের সময়সীমাও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হবে।

সূত্র বলছে, নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করতে এনসিপি আলাদা একটি টিম গঠন করেছে। যেখানে কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়াও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা রয়েছেন।

নির্বাচনী ইশতেহারে যেসব বিষয়ে এনসিপি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে শোষণমুক্ত ও স্বাধীন বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সংস্কার, ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ, আইন সংস্কার, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, বেকারত্ব দূরীকরণ ও সবার জন্য শিক্ষা-স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা। এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি সময়সূচি নির্ধারণ করে ভোটারদের সামনে উপস্থাপন করবে দলটি।

এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব ও মিডিয়া সেলের সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গত ৩ আগস্ট আমরা নতুন বাংলাদেশের যে ইশতেহার ঘোষণা করেছিলাম সে ইশতেহারের ভিত্তিতে আমরা নির্বাচনের একটা ইশতেহার ঘোষণা করব। এ ইশতেহারে আমরা কেমন বাংলাদেশ বানাতে চাই তার বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।

আমরা আলাদা করে দিব, কোন কোন সেক্টরে কী কী কাজ করতে চাই। তবে আমাদের ইশতেহারে সংস্কার, অর্থনীতি, কর্মসংস্থান ও উৎপাদনের মতো বিষয়গুলোই বেশি গুরুত্ব পাবে।’

নতুন বাংলাদেশের জন্য এনসিপির ২৪ দফা পরিকল্পনা

গণপরিষদের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধানের দাবি জানিয়ে চলতি বছরের ৩ আগস্ট ২৪ দফার ইশতেহার ঘোষণা করে জাতীয় নাগরিক পার্টি। দলটির ঘোষিত ওই ২৪ দফার মধ্যে রয়েছে নতুন সংবিধান ও সেকেন্ড রিপাবলিক, জুলাই অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি ও বিচার, গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কার, ন্যায়ভিত্তিক বিচারব্যবস্থা ও আইন সংস্কার, সেবামুখী প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন, জনবান্ধব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, গ্রাম পার্লামেন্ট ও স্থানীয় সরকার, স্বাধীন গণমাধ্যম ও শক্তিশালী নাগরিক সমাজ, সর্বজনীন স্বাস্থ্য, জাতি গঠনে শিক্ষানীতি, গবেষণা, উদ্ভাবন ও তথ্য-প্রযুক্তি বিপ্লব, ধর্ম, সম্প্রদায় ও জাতিসত্তার মর্যাদা, নারীর নিরাপত্তা, অধিকার ও ক্ষমতায়ন, মানবকেন্দ্রিক ও কল্যাণমুখী অর্থনীতি, তারুণ্য ও কর্মসংস্থান, বহুমুখী বাণিজ্য ও শিল্পায়ননীতি, টেকসই কৃষি ও খাদ্য সার্বভৌমত্ব, শ্রমিক-কৃষকের অধিকার, জাতীয় সম্পদ ব্যবস্থাপনা, নগরায়ণ, পরিবহন ও আবাসন পরিকল্পনা, জলবায়ু সহনশীলতা ও নদী-সমুদ্র রক্ষা, প্রবাসী বাংলাদেশির মর্যাদা ও অধিকার, বাংলাদেশপন্থী পররাষ্ট্রনীতি এবং জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশল।

ওই সময় এই ইশতিহার ঘোষণা দিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছিলেন, ‘উপনিবেশবিরোধী লড়াই, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে জনগণের সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে আমরা বহু ভাষা ও সংস্কৃতির নতুন বাংলাদেশ তৈরি করব।

জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা পূরণে আমাদের নতুন সংবিধান, একনায়কতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদী কাঠামোর বিলোপ করে একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জনকল্যাণমুখী সেকেন্ড রিপাবলিক গঠন করব। আমরা জুলাইয়ে সংঘটিত গণহত্যা, শাপলা গণহত্যা, বিডিআর হত্যাকাণ্ড, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সময়ে সংঘটিত সব মানবতাবিরোধী অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করব। আমরা এমন একটি ইনসাফের রাষ্ট্র গড়ে তুলতে চাই, যেখানে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো হবে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে পক্ষপাতহীন, নৈর্ব্যক্তিক, মানবিক ও গণমুখী।’

এনসিপির নেতারা বলছেন, নাহিদ ইসলামের সেদিনের বক্তব্যের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ এবং বিস্তারিত ব্যাখ্যা হচ্ছে এবারের নির্বাচনী ইশতেহার। এখানে আগের ইশতেহারের সঙ্গে তেমন কোনো অমিল পাওয়া যাবে না।

পিএ/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
দূরত্ব বাধা নয়, ভালোবাসাই আসল: মিশমি দাস Dec 24, 2025
img
পুতিনের সঙ্গে সিরিয়ার মন্ত্রীদের বৈঠকে নিরাপত্তা জোরদারের ইঙ্গিত Dec 24, 2025
img
বিশ্ববাজারে ঊর্ধ্বমুখী জ্বালানি তেলের দাম Dec 24, 2025
img
আমি শাড়ি পরে রোমান্টিক ছবি দেব: চমক Dec 24, 2025
img
সৃজিত ও রানার হাত ধরেই বড়পর্দায় আরত্রিকা! Dec 24, 2025
img
এনসিপির রাজনীতি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন রুমন খান Dec 24, 2025
img
আজ বিশ্বে বায়ুদূষণের শীর্ষে রাজধানী ঢাকা Dec 24, 2025
img
জামালপুরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী গ্রেপ্তার Dec 24, 2025
img
রাজধানীতে টাঙ্গাইলের যুবলীগ নেতা মুস্তাফিজুর রহমান সোহেল গ্রেপ্তার Dec 24, 2025
img
দেশে ফিরতে আজ লন্ডন ছাড়বেন তারেক রহমান Dec 24, 2025
img
বিশাল পরিবর্তন আসছে বিসিবি’তে! Dec 24, 2025
img
সিরাজগঞ্জ মহাসড়কে চলন্ত ট্রাকে আগুন Dec 24, 2025
img
প্রকাশিত হলো ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র তালিকা Dec 24, 2025
img
এজেন্সির ওপর কেন ক্ষুব্ধ বিটিএসের আরএম? Dec 24, 2025
img
১৮তে পালিয়ে বিয়ে, আজ ৩১ বছরের সংসার জোজোর! Dec 24, 2025
img
রাজধানীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমেছে ১৫ ডিগ্রিতে Dec 24, 2025
img
জামিনে মুক্ত গ্রেটা থুনবার্গ Dec 24, 2025
img

এনসিপি

ইশতেহারে গুরুত্ব পাচ্ছে সময়ভিত্তিক রোডম্যাপ বাস্তবায়ন Dec 24, 2025
img
ঘন কুয়াশায় ২ নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ ঘোষণা Dec 24, 2025
img
গান নয়, সাধারণভাবেই স্ত্রী কোয়েলকে প্রপোজ করেছিলেন অরিজিৎ Dec 24, 2025