রুপালি পর্দায় তিনি ছিলেন আদর্শ নায়ক-সুদর্শন, স্মার্ট, রুচিশীল এবং অভিনয়, নাচ ও অ্যাকশনে সমান দক্ষ। কয়েক দশকে উপহার দিয়েছেন অসংখ্য কালজয়ী ও সুপারহিট সিনেমা। আবার সিনেমার বাইরেও তিনি একজন হিরো-নিরাপদ সড়কের দাবিতে দীর্ঘদিনের আন্দোলনে সাধারণ মানুষের কাছে হয়ে উঠেছেন সাহসের প্রতীক।
বলছি ‘বেদের মেয়ে জোছনা’খ্যাত জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ও ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ (নিসচা) আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চনের কথা। আজ (২৪ ডিসেম্বর) তার জন্মদিন। প্রতি বছর এই দিনে শুভেচ্ছা ও ভালোবাসায় ভাসেন তিনি। কিন্তু এবার অনুরাগীদের মনে আনন্দ নেই, বরং উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠাই বেশি। কারণ, দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ এই কিংবদন্তি নায়ক।
ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয়ে প্রায় সাত মাস ধরে চিকিৎসাধীন ইলিয়াস কাঞ্চন। উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ছয় মাস ধরে তিনি লন্ডনে অবস্থান করছেন। সেখানে একমাত্র মেয়ে ইসরাত জাহানের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি।
গত ২৬ নভেম্বর তার শারীরিক অবস্থার সর্বশেষ তথ্য জানান নিসচার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও ভাইস চেয়ারম্যান লিটন এরশাদ। তিনি জানান, ইলিয়াস কাঞ্চনের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। বর্তমানে তিনি স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারছেন। অসুস্থতার কারণে আগে কথায় যে জড়তা ছিল, তা অনেকটাই কেটে গেছে।
চিকিৎসা প্রসঙ্গে লিটন এরশাদ বলেন, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে টিউমারের বড় একটি অংশ এরই মধ্যে অপসারণ করা হয়েছে। অবশিষ্ট অংশ রেডিয়েশন ও কেমোথেরাপির মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টা চলছে। বর্তমানে তিনি একটি মেডিসিন কোর্সে আছেন। কোর্স শেষ হলে আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। রিপোর্ট দেখে পরবর্তী চিকিৎসা পরিকল্পনা ঠিক করবেন চিকিৎসকরা।
তিনি কবে দেশে ফিরতে পারবেন-এ বিষয়ে এখনো নিশ্চিত কিছু জানা যায়নি। নতুন পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরই বিষয়টি স্পষ্ট হবে বলে জানিয়েছেন লিটন এরশাদ।
দীর্ঘ তিন মাসের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গত ৫ আগস্ট লন্ডনের উইলিংটন হাসপাতালে প্রফেসর ডিমিট্রিয়াসের নেতৃত্বে ইলিয়াস কাঞ্চনের মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হয়।
১৯৫৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার আশুতিয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ইলিয়াস কাঞ্চন। তার বাবার নাম হাজী আব্দুল আলী এবং মায়ের নাম সরুফা খাতুন। শিক্ষাজীবনে তিনি কবি নজরুল সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
কৈশোর থেকেই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল তার। নাট্যচর্চার পথ পেরিয়ে ১৯৭৭ সালে কিংবদন্তি নির্মাতা সুভাষ দত্তের ‘বসুন্ধরা’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে তার। এরপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে নিয়ে যান কিংবদন্তির কাতারে। তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।
এর মধ্যে ১৯৮৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ ঢাকাই সিনেমার ইতিহাসে আজও এক রূপকথা। তোজাম্মেল হক বকুলের পরিচালনায় অঞ্জু ঘোষের সঙ্গে জুটি বেঁধে ইলিয়াস কাঞ্চন যে সাফল্য পেয়েছিলেন, তা এখনো বাংলাদেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় ও ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র হিসেবে স্বীকৃত।
আজ তার জন্মদিনে অনুরাগীদের একটাই কামনা-দ্রুত সুস্থ হয়ে আবার প্রিয় কাঞ্চন ফিরে আসুন স্বাভাবিক জীবনে।
আরপি/এসএন