কারাগারেই থাকতে হবে মালয়েশিয়ার ক্ষমতাধর নেতা নাজিব রাজাককে

মালয়েশিয়ার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নেতার সন্তান নাজিব রাজাক ছোটবেলা থেকেই দেশটির প্রধানমন্ত্রীর পদে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। তবে নয় বছর ক্ষমতায় থাকার পর আজ তিনি দুর্নীতির দায়ে কারাগারে।

বর্তমানে ৭২ বছর বয়সী নাজিব রাজাক মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ তহবিল ১এমডিবি কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত দুর্নীতির মামলায় ছয় বছরের সাজা ভোগ করছেন। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) তার বিরুদ্ধে একটি বড় মামলার রায় ঘোষণা হওয়ার কথা রয়েছে, যেখানে দোষী সাব্যস্ত হলে তার কারাদণ্ড বাড়তে পারে।

২০১৮ সালের নির্বাচনে ক্ষমতা হারানোর পর থেকে বিভিন্ন সরকারের আমলে নাজিব ও তার স্ত্রী রোসমাহ মনসুরের বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসে।

২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার সময় নাজিব সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি কিছু বিতর্কিত নিরাপত্তা আইন বাতিলও করেন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষের চোখে তিনি হয়ে ওঠেন এক ‘বিচ্ছিন্ন অভিজাত’ নেতা। ২০১৫ সালে পণ্য ও সেবা কর (জিএসটি) চালু করাও ব্যাপক অজনপ্রিয়তা সৃষ্টি করে, যা পরে বাতিল করা হয়।

তার স্ত্রী রোসমাহ মনসুরও বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন। বিলাসী জীবনযাপন ও আচরণ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। বউয়ের চুল সাজাতেই খরচ হতো ১ হাজার ২০০ রিঙ্গিত, সে সময় মালয়েশিয়ার ন্যূনতম মাসিক মজুরি ছিল মাত্র ৯০০ রিঙ্গিত।

মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ দাবি করেন, ২০১৫ সালে নাজিব তাকে বলেছিলেন— রাজনীতিতে টিকে থাকতে নগদ অর্থই সবচেয়ে বড় শক্তি। বিরোধীরা এই মন্তব্যকে নাজিবের দুর্নীতি ও ক্ষমতার দম্ভের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করে।

নাজিবের নাম আগে থেকেই বিভিন্ন বিতর্কে জড়ায়। প্রতিরক্ষামন্ত্রী থাকাকালে ফ্রান্স থেকে সাবমেরিন কেনার চুক্তি এবং সেই চুক্তিকে ঘিরে ঘুষের অভিযোগ উঠে। ওই ঘটনায় জড়িত এক মঙ্গোলীয় নারী হত্যাকাণ্ডও দেশজুড়ে আলোড়ন তোলে। নাজিব অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।

২০০৯ সালে উন্নয়নের উদ্দেশ্যে চালু করা ১এমডিবি তহবিল ২০১৩ সালের নির্বাচনের পর বিপুল ঋণে ডুবে যায়। ২০১৫ সালে এর বিপুল অঙ্কের অর্থ নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা প্রকাশ পেলে দেশজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
এই ক্ষোভই ২০১৮ সালে মাহাথির মোহাম্মদের নেতৃত্বে বিরোধীদের নির্বাচনী বিজয়ের পথ তৈরি করে এবং নাজিবের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়।

মার্কিন তদন্তে জানা যায়, ১এমডিবি থেকে শত শত মিলিয়ন ডলার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে বিলাসবহুল সম্পত্তি, দামি শিল্পকর্ম, ব্যক্তিগত জেট এবং হলিউডের সিনেমা দ্য উলফ অব ওয়াল স্ট্রিট নির্মাণে ব্যয় করা হয়। এসব অভিযোগ নাজিব অস্বীকার করলেও ২০২০ সালে একটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে ১২ বছরের সাজা পান, যা পরে কমিয়ে ছয় বছর করা হয়।

শুক্রবার ঘোষণার অপেক্ষায় থাকা মামলাটি নাজিবের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অর্থ পাচারের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। দোষী সাব্যস্ত হলে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এবং অবশিষ্ট প্রভাবও বড় ধাক্কা খেতে পারে।

একসময় যিনি ছিলেন মালয়েশিয়ার সবচেয়ে ক্ষমতাধর নেতা, আজ তিনি দুর্নীতির প্রতীক হয়ে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন।

কেএন/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

তারেক রহমানকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত পরিমনি Dec 26, 2025
img
ভারত বিরোধীতার কারণে বাংলাদেশিদের কাছে হোটেল ভাড়া না দেওয়ার ঘোষণা শিলিগুড়ির ব্যবসায়ীদের Dec 26, 2025
img
ট্রাম্পকে বড়দিনের শুভেচ্ছা জানালেন পুতিন Dec 26, 2025
img
জন্মদিনে শুভশ্রীর সঙ্গে দীর্ঘদিনের মান-অভিমানের কি অবসান হলো? Dec 26, 2025
img
নির্বাচন আয়োজনের মধ্যেই সামরিক অভিযান জোরদার করল জান্তা সরকার Dec 26, 2025
img
বিয়ে করলেন ডাকসু নেত্রী সেই তন্বী, পাত্রের পরিচয় কী? Dec 26, 2025
img
‘ইক্কিস’ রিলিজে কাঁটা ‘ধুরন্ধর’, ধর্মেন্দ্রর শেষ ছবি নিয়ে নতুন উদ্যোগ পরিবার Dec 26, 2025
img
ঢাবির বিজ্ঞান ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা আজ Dec 26, 2025
img
ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন চালিয়ে যাবে উত্তর কোরিয়া: কিম জং উন Dec 26, 2025
img
অর্থনৈতিক ভাবে আমার নিজেকে বুদ্ধিমতী মনে হয়: কোয়েল মল্লিক Dec 26, 2025
img
আম্পায়ারকে গালিগালাজ, নির্বাসনের পথে সিএবি কর্তা Dec 26, 2025
img
জামায়াত-এনসিপির আসন সমঝোতা নিয়ে ৮ দলীয় জোটের বিবৃতি Dec 26, 2025
img
চার পেসার নিয়ে খেলতে নেমে চোখে সর্ষেফুল দেখছে অস্ট্রেলিয়া Dec 26, 2025
img
আজ বাদ-জুমা সারাদেশে বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় বিএনপির দোয়ার আয়োজন Dec 26, 2025
img
দিপু দাস হত্যাকাণ্ড নিয়ে মুখ খুললেন জাহ্নবী কাপুর Dec 26, 2025
img
মেঘনায় ২ লঞ্চের সংঘর্ষে প্রাণ গেল ২ জনের Dec 26, 2025
img
ঘন কুয়াশায় মাঝপদ্মায় আটকা ৩ ফেরি Dec 26, 2025
img
পঞ্চগড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস Dec 26, 2025
img
ভারতে বড়দিন উদযাপনে হামলা-ভাঙচুর, আটক ৪ Dec 26, 2025
img
ঢাকার বাতাস আজ অস্বাস্থ্যকর Dec 26, 2025