ছাদে বাগান করার সহজ পদ্ধতি

দিন দিন ছোট হয়ে আসছে চাষাবাদের জায়গাগুলি। শহরের মানুষ গাছ লাগাবে বর্তমানে এমন জায়গা পাওয়া দুষ্কর। তাই শখ করে বাগান কিংবা নিজের পরিবারের চাহিদা মিটাতে শহুরে মানুষদের জন্যে ছাদের কোনো বিকল্প নেই। ইচ্ছে আর গাছের প্রতি ভালোবাসা থাকলে ছাদের জায়গাটুকু ব্যবহার করেই বাগানের শখ মিটানো যায়। এর জন্য জেনে নিতে হবে ছাদে গাছ লাগানোর পদ্ধতি, ছাদে বাগান উপযোগী ভালো জাতের গাছ নির্বাচন ও সঙ্গে অন্যান্য পরিচর্যার বিষয় গুলি।

ছাদের আকার ও অবস্থান
ছাদের আকার ছোট, মাঝারি বা বড় হতে পারে। এ আকার বিবেচনা করে কত সংখ্যক বিভিন্ন ফল, সবজি, মসলা ও ওষধি গাছ চাষ করা যাবে তা শুরুতেই নির্ধারণ করা প্রয়োজন। নির্ধারিত ছাদ কত তলা বিশিষ্ট, আশপাশে কত তলা বিশিষ্ট বিল্ডিং বা বড় আকারের গাছপালা আছে, সারা দিনে সেখানে আলো-বাতাস বা রোদ পাওয়ার সুবিধা বিবেচনায় বাগান সৃষ্টি করতে হয়।

ছাদে গাছ রোপণ
ছাদে বাগান তৈরিতে নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে উন্নত জাতের সুস্থ-সবল চারা/কলম সংগ্রহের গুরুত্ব অপরিসীম। ছাদ বাগানে দীর্ঘমেয়াদি ও মধ্য মেয়াদি ফল গাছ রোপণ করতে হবে। খুব কম সময় ধরে ফল পাওয়া যায় এমন গাছ ছাদের জন্য নির্বাচন করা ঠিক না।

ছাদে ফলের বাগান পদ্ধতি
কি গাছ লাগাবেন তার উপর নির্ভর করবে কোথায় কিভাবে সেই গাছ লাগাবেন। মনে রাখতে হবে, যে গাছ লাগাবেন সেই গাছের আকার যত বড় হবে গাছ লাগানোর পাত্র/ড্রাম/টবের আকার ও তত বড় হতে হবে।

টব পদ্ধতি
খুব সহজে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তর করা যায় বলে এটাই সহজ পদ্ধতি বলে বিবেচিত। টব সাধারণত যে আকারের হয়ে থাকে তা ফল গাছের জন্যে খুব একটা ভালো হয় না। বড় আকারের টবে ফলের গাছ লাগানো যেতে পারে। সেই ক্ষেত্রে সিমেন্টের তৈরি বড় টব ব্যবহার করা যায়। টবে চাষ করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ জৈব সার ব্যবহার করা উচিত। ১৬ ইঞ্চি থেকে ১৮ ইঞ্চি আকারের একটি টবের জন্য জৈব সারের পাশাপাশি ১০০ গ্রাম টিএসপি এবং ৫০ গ্রাম এমওপি সার উত্তমরূপে মিশিয়ে ১০ দিন থেকে ১২ দিন রেখে দিতে হবে। তারপর টব ভরাট করতে হবে।

হাফ ড্রাম
বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষ হাফড্রাম পদ্ধতিতে ছাদে ফলের বাগান করে থাকেন। হাফড্রামের তলদেশে ছিদ্র করতে হবে। ছিদ্রগুলোতে ইটের টুকরো বসাতে হবে; তার উপরে ড্রামের তলদেশে প্রথম ১ ইঞ্চি পরিমাণ খোয়া বা সুড়কি দিতে হবে এবং তার উপরে এক ইঞ্চি পরিমাণ জৈব সার বা পচা গোবর দিতে হবে। এতে করে অতিরিক্ত পানি সহজেই বের হয়ে যেতে পারবে। জৈব সারের পাশাপাশি প্রতিটি ড্রামে ২০০ গ্রাম টিএসপি, ১০০ গ্রাম এমওপি ব্যবহার করা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে- শাক-সবজি, ফুলের জন্য ছোট খাট টব বা পাত্র হলেও চলে। কিন্তু ফলের ক্ষেত্রে পাত্র/ড্রাম যত বড় হয় তত ভালো।

চৌবাচ্চা
ছাদে এক থেকে দেড় ফুট উঁচু এবং তিন থেকে চারটি পিলারের ওপর পানির ট্যাঙ্ক বা চৌবাচ্চা আকারের রিং স্লাব বসিয়ে ইটের টুকরো এবং সিমেন্টের ঢালাই দিয়ে স্থায়ী চৌবাচ্চা তৈরি করা যায়। এই ধরনের চৌবাচ্চায় মাছ এবং জলজ উদ্ভিদ চাষ করে ছাদের পরিবেশ সুন্দর রাখা যায় সহজেই।

স্থায়ী বেড পদ্ধতি
স্থায়ী বেড একটি আধুনিক পদ্ধতি। ছাদে বাগান করার পূর্বে ছাদ বিশেষভাবে ঢালাই দিয়ে নেট ফিনিশ করে নিতে হবে। স্থায়ী বেড পদ্ধতির বাগান করার জন্য ছাদের চারিদিকে ২ ফুট প্রস্থের দুই পাশে ১.৫ ফুট উঁচু দেয়াল ৩ ইঞ্চি গাঁথুনির নেট ফিনিশিং ঢালাই দিতে হবে। এরপর মাঝখানে যে খালি জায়গা তৈরি হয়, সেই খালি জায়গার তলায় প্রথমে এক ইঞ্চি ইটের সুরকি বা খোয়া, পরের এক ইঞ্চি গোবর সার দেয়ার পর বাকি অংশ ২ ভাগ মাটি ও ১ ভাগ গোবরের মিশ্রণ দিয়ে ভরাট করে স্থায়ী বেড তৈরি করা হয়। অতিরিক্ত পানি, সার পারাবার সুষ্ঠু পথ রাখতে হবে।

এছাড়া স্থায়ী বেড হিসেবে ট্যাংক পদ্ধতিতেও গাছ লাগানো যায়। সেই জন্যে ছাদে এক ফুট উঁচু ৪টি পিলারের উপর পানির ট্যাংক আকৃতির ৩ ফুট দৈর্ঘ্য, ২ ফুট প্রস্থ ও ১.৫ ফুট উঁচু ৩ ইঞ্চি গাঁথুনির নেট ফিনিশিং ঢালাই দিয়ে যে ট্যাংক তৈরি করা হয় একেই বলে ট্যাংক বেড পদ্ধতি।

ছাদে যেসব গাছ লাগাবেন
ছাদে বাগান করার সময় জরুরি বিষয় হলো লক্ষ্য রাখতে হবে যেন গাছটি বড় আকারের না হয়। ছোট আকারের গাছে যেন বেশি ফল ধরে সে জন্য হাইব্রিড জাতের গাছ বা কলমের গাছ লাগানো যেতে পারে। আমের বিভিন্ন হাইব্রিড বা কলমের জাত যেমন আম্রপালি ও মল্লিকা জাতের আম, আপেল কুল, পেয়ারা, লেবু, পেঁপে, জলপাই, আমড়া, করমচা, শরিফা, আতা, ডালিম, এমনকি কলা গাছও লাগানো যাবে। এছাড়া কলমের জলপাই, থাইল্যান্ডের মিষ্টি জলপাই, কলমের শরিফা, কলমের কদবেল, ডালিম, স্ট্রবেরি, বাউকুল, আপেলকুল, নারিকেলকুল, লিচু, থাইল্যান্ডের লাল জামরুল, গ্রিন ড্রপ জামরুল, আপেল জামরুল, আঙ্গুর পেয়ারা, থাই পেয়ারা, ফলসা, খুদে জাম, আঁশফল, জোড় কলমের কামরাঙা, এমনকি ক্যারালা ড্রফ প্রজাতির নারিকেলের চাষ করা যেতে পারে।

যত্ন-সেবা
যেহেতু সীমিত আকারে, সীমিত জায়গায় উৎপাদন করা হয়, সেজন্য অতিরিক্ত যত্ন নিশ্চিত করতে হবে এবং বিভিন্ন পরিচর্যায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বিশেষ করে সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে সতর্কতা জরুরি। কেননা সার কমবেশি হলে, গাছের গায়ে লেগে গেলে গাছ মরে যাবে, আবার পরিমাণ মতো না হলে অপুষ্টিতে ভুগবে।

ছাদে বাগানের কিছু জরুরি টিপস

  • লম্বা গাছকে ছোট গাছের পিছনে রাখতে হবে।
  • টবে বা ফ্রেমে খৈল দেয়া যাবে না, এতে পিঁপড়ার উপদ্রব বাড়তে পারে।
  • বাজার থেকে কেনা প্যাকেটজাত কম্পোস্ট সার ব্যবহার করলে ভালো।
  • বছরে একবার নতুন মাটি দিয়ে পুরাণ মাটি বদলিয়ে দিতে হবে. এটি অক্টোবর মাসে করলে ভালো।
  • ছাদে বাগানের জন্য মিশ্র সার, গুঁটি ইউরিয়া, খৈল, হাড়ের গুঁড়া (পচিয়ে) ব্যবহার করা ভালো।
  • বাজারে স্টিল লোহার ফ্রেম পাওয়া যায়, এগুলো দিয়ে অনায়াসে ছাদে বাগান করা যায়।
  • অবস্থা বুঝে গাছের গোঁড়ায় চুনের পানি সপ্তাহে ১ বার ব্যবহার করা যায়।

 

 টাইমস/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বৃষ্টির দিনে ঘরের যত্ন নেবেন যেভাবে May 06, 2024
img
ঝিনাইদহ-১ আসনের উপনির্বাচন স্থগিত May 06, 2024
img
মিল্টনের আশ্রমে থাকা শিশু-বৃদ্ধদের দায়িত্ব নিচ্ছে শামসুল হক ফাউন্ডেশন May 06, 2024
img
১৪ দিনে হিটস্ট্রোকে মৃত্যু ১৫ জনের : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর May 06, 2024
img
সম্পদ অর্জনে এমপিদের চেয়ে চেয়ারম্যানরা এগিয়ে, টিআইবির বিশ্লেষণ May 06, 2024
img
হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ১০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি May 06, 2024
img
রাজধানীর যেসব স্থানে বসবে কোরবানির পশুর হাট May 06, 2024
img
সুন্দরবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে, ধোঁয়া দেখলেই পানি স্প্রে May 06, 2024
img
দুপুরের মধ্যে ৮০ কিমি. বেগে বৃষ্টির আভাস, নৌ বন্দরে ২ নম্বর সংকেত May 06, 2024
img
হামাসের হামলায় ইসরায়েলের ৩ সেনা নিহত, বন্ধ কেরাম শালোম ক্রসিং May 06, 2024