পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ায় একদিন আগেই বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের বা আইএস (দায়েশ) ঘাঁটিতে পরিচালিত এই হামলাকে ‘আইএসের জন্য বড়দিনের উপহার’ বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি দাবি করেছেন, তার নির্দেশেই বড়দিনের দিন হামলার সময় বেছে নেয়া হয়েছে, যাতে এই হামলার প্রতীকী বার্তা স্পষ্ট হয়।
বার্তাসংস্থা আনাদোলু বলছে, স্থানীয় সময় শুক্রবার ডব্লিউএবিসি রেডিওতে কথা বলার সময় ট্রাম্প এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, নাইজেরিয়ায় ‘হাজার হাজার খ্রিস্টান নিহত হচ্ছে’ এবং এ বিষয়ে তিনি আগেই নাইজেরিয়া সরকারকে সতর্ক করেছিলেন। ট্রাম্প বলেন, ‘আমি গতকালই বলেছি— বড়দিনের দিনেই ওদের আঘাত করো। এটা হবে বড়দিনের উপহার।’
তিনি দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী বিভিন্ন জায়গায় আইএসকে ‘কঠোরভাবে’ আঘাত করেছে। সন্ত্রাসী এই সংগঠনটিকে তিনি ‘ভয়ঙ্কর’ এবং ‘খুনে’ বলেও উল্লেখ করেন। ট্রাম্প বলেন, ‘গতকাল তারা সত্যিই বড় ধাক্কা খেয়েছে। তাদের জন্য এটা খুবই খারাপ বড়দিন হয়ে গেছে।’
পলিটিকোকে দেয়া আরেক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, হামলাটি আসলে বুধবার চালানোর কথা ছিল, কিন্তু ‘প্রতীকী গুরুত্বের’ জন্য তিনি তা বড়দিন পর্যন্ত স্থগিত রাখেন। ট্রাম্পের দাবি, ‘ওরা ভাবতেই পারেনি... প্রতিটি ঘাঁটি ধ্বংস হয়ে গেছে।’
এর আগে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশালে ট্রাম্প জানান, বৃহস্পতিবার উত্তর-পশ্চিম নাইজেরিয়ায় আইএসের লক্ষ্যবস্তুতে যুক্তরাষ্ট্র বিমান হামলা চালিয়েছে। মার্কিন আফ্রিকা কমান্ড (আফ্রিকম) সামাজিক মাধ্যমে জানায়, নাইজেরিয়ার অনুরোধে সোকোতো প্রদেশে এই হামলা চালানো হয় এবং এতে ‘একাধিক আইএস জঙ্গি’ নিহত হয়।
পরে শুক্রবার ভোরে নাইজেরিয়া জানায়, সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস উগ্রবাদের ঝুঁকি মোকাবিলায় নিরাপত্তা ক্ষেত্রে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে।
ট্রাম্প আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ‘একটি বড় প্লান্ট বা বড় অবকাঠামোতেও’ হামলা চালিয়েছে। তবে তিনি নির্দিষ্ট করে স্থানের নাম বা লক্ষ্যবস্তু উল্লেখ করেননি। তার দাবি, ‘দুই রাত আগে’ ওই স্থাপনায় ‘ভীষণভাবে’ আঘাত হানা হয়েছে। তিনি ইঙ্গিত দেন, এসব হামলার সমালোচনার পেছনে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিরোধ কাজ করছে। তার অভিযোগ, শুধু তিনি অনুমোদন দিয়েছেন বলেই ডেমোক্র্যাটরা সমালোচনা করছে, অন্য কেউ করলে তারা সেটাকে মেনে নিত।
ট্রাম্প এসব মন্তব্য এমন এক সময়ে করলেন যখন গত সেপ্টেম্বর থেকে ক্যারিবীয় অঞ্চল ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক তৎপরতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে এখন পর্যন্ত ২৯ দফায় চালানো এসব হামলায় অন্তত ১০৫ জন নিহত হয়েছেন।
একইসঙ্গে ভেনেজুয়েলাকে চাপের মুখে রাখতে তেলবাহী জাহাজ আটক, জাহাজ জব্দ এবং ভেনেজুয়েলার পানিসীমার কাছে বিপুল সেনা মোতায়েনও করে রেখে যুক্তরাষ্ট্র। কারাকাস এসব কর্মকাণ্ডকে ‘আন্তর্জাতিক জলদস্যুতা’ বলে আখ্যায়িত করে নিন্দা জানিয়েছে।
কেএন/টিএ