থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সীমান্তজুড়ে কার্যকর হয়েছে নতুন যুদ্ধবিরতি। প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে চলা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে প্রায় দশ লাখ মানুষ ঘরছাড়া হওয়ার পর অবশেষে এই সমঝোতা কার্যকর হয়েছে। শনিবার বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা এক যৌথ বিবৃতিতে জানান, বর্তমান অবস্থানেই সেনাদের রেখা স্থির রাখা হবে, নতুন সেনা বা অস্ত্র পাঠানো হবে না এবং সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী সাধারণ মানুষদের দ্রুত ঘরে ফেরার সুযোগ দেওয়া হবে।
স্থানীয় সময় শনিবার দুপুর ১২টা (গ্রিনিচ সময় সকাল ৫টা) থেকে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। ৭২ ঘণ্টা শান্তি বজায় থাকলে থাইল্যান্ডে আটক থাকা ১৮ জন কম্বোডিয়ান সেনাকে মুক্তি দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।
বিবিসির তথ্য মতে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক উদ্যোগে দুই দেশের দীর্ঘ আলোচনার পর এই সমঝোতা সম্ভব হয়েছে। এতে শুধু মানুষকে ঘরে ফেরানোর বিষয়টিই নয়, সীমান্তে পুঁতে রাখা ল্যান্ডমাইন অপসারণের কথাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
থাইল্যান্ডের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নাত্তাফন নারখফানিত বলেন, এই যুদ্ধবিরতি ‘অন্য পক্ষের আন্তরিকতার পরীক্ষা।’ তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি এই চুক্তি লঙ্ঘিত হয়, তাহলে আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় আত্মরক্ষার অধিকার থাইল্যান্ড বজায় রাখবে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার টুর্ক আশা প্রকাশ করে বলেন, এই যুদ্ধবিরতি শান্তির পথ সুগম করবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও চুক্তি বাস্তবায়নে দুই দেশকে সদিচ্ছা দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে।
সংবাদমাধ্যমটি জানায়, এর আগে জুলাই মাসে হওয়া যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়েছিল এবং নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হয়। তখন দুই দেশই একে অপরকে দোষারোপ করে। সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্তে বিমান হামলা, গোলাবর্ষণ ও স্থলযুদ্ধ চলতে থাকে, যার ফলে বহু সেনা ও বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারান এবং হাজার হাজার মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে পড়েন।
এই সীমান্ত বিরোধের শিকড় এক শতাব্দীরও বেশি পুরোনো হলেও চলতি বছরের শুরুতে একটি বিতর্কিত মন্দিরে কম্বোডিয়ান নারীদের দেশাত্মবোধক গান গাওয়াকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। এরপর মে মাসে এক কম্বোডিয়ান সেনা নিহত হন এবং জুলাইয়ে পাঁচ দিনব্যাপী তীব্র লড়াই হয়।
নতুন যুদ্ধবিরতি কতটা টিকে থাকবে, তা দুই দেশের রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করছে। জাতীয়তাবাদী আবেগ ও সাম্প্রতিক ক্ষয়ক্ষতি এই শান্তি প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।