ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ চললেও রাশিয়ায় বিলিয়নেয়ারের সংখ্যা পৌঁছেছে সর্বোচ্চ পর্যায়ে। তবে গত ২৫ বছরে ভ্লাদিমির পুতিনের শাসনামলে দেশটির ধনকুবের বা অলিগার্কদের রাজনৈতিক প্রভাব প্রায় পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়েছে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা তাদের পুতিনবিরোধী করতে পারেনি, বরং অনেক ক্ষেত্রে উল্টো পুতিনের মুখাপেক্ষী করেছে।
২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধকে ‘পাগলামি’ বলায় নিজের প্রতিষ্ঠিত টিনকফ ব্যাংক হারান সাবেক বিলিয়নেয়ার ওলেগ টিনকভ।
একদিনের মধ্যেই ক্রেমলিন থেকে বার্তা আসে টিনকভের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন না করলে ব্যাংক রাষ্ট্রীয়করণ করা হবে।
মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে প্রকৃত মূল্যের মাত্র ৩ শতাংশ দামে ব্যাংকটি বিক্রি করতে বাধ্য হন তিনি। প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ হারিয়ে দেশ ছাড়তে হয় টিনকভকে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙনের পর রাষ্ট্রীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান দখলে নিয়ে অল্প সময়েই বিপুল সম্পদের মালিক হন কিছু রুশ ব্যবসায়ী। তখন অর্থনৈতিক শক্তিই ছিল রাজনৈতিক প্রভাবের প্রধান উৎস।
একসময় সবচেয়ে প্রভাবশালী ‘অলিগার্ক’ বরিস বেরেজোভস্কি দাবি করেছিলেন, পুতিনকে ক্ষমতায় আনতে তিনি ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি তার মধ্যে ভবিষ্যতের লোভী অত্যাচারী এবং দখলদার দেখতে পাইনি, যে ব্যক্তি স্বাধীনতা পদদলিত করবে এবং রাশিয়ার উন্নয়ন বন্ধ করবে।’
বেরেজোভস্কিকে পরে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত থাকাকালীন রহস্যজনক পরিস্থিতিতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ততদিনে, রাশিয়ার অভিজাততন্ত্রও পুরোপুরিভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুতে রুশ ধনীরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়লেও পরের বছরগুলোতে যুদ্ধ অর্থনীতি তাদের অনেকের জন্য লাভের সুযোগ তৈরি করেছে।
ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে রাশিয়ার অর্থনীতি বছরে ৪ শতাংশের বেশি হারে বেড়েছে। ২০২৪ সালে রুশ বিলিয়নেয়ারদের অর্ধেকের বেশি কোনো না কোনোভাবে সামরিক খাতে যুক্ত ছিলেন বা যুদ্ধের সুফল পেয়েছেন।
২০২৫ সালে ফোর্বসের তালিকায় রাশিয়ার বিলিয়নেয়ারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪০ জনে যা দেশটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ। তাদের সম্মিলিত সম্পদ ৫৮০ বিলিয়ন ডলার, যা যুদ্ধ-পূর্ব সর্বোচ্চ রেকর্ডের কাছাকাছি। তবে এই বিপুল সম্পদ রাজনৈতিক প্রভাবে রূপ নেয়নি। প্রকাশ্যে যুদ্ধবিরোধিতা করলে দেশ ও সম্পদ—দুটোই ছাড়তে হয়েছে অনেককে।
বিশ্লেষকদের মতে, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা রুশ ধনীদের পুতিনবিরোধী না করে বরং তার ওপর আরও নির্ভরশীল করে তুলেছে।
ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিদেশি কোম্পানিগুলো রাশিয়া ছাড়লে সেই শূন্যতা পূরণ করেন ক্রেমলিনঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা। এতে তৈরি হয়েছে পুতিনের এক নতুন অনুগত ধনকুবের শ্রেণি।
রাশিয়ায় এখন বিলিয়নেয়ার আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। কিন্তু রাজনৈতিক ক্ষমতা এক ক্রেমলিনেই কেন্দ্রীভূত।
কেএন/টিকে