নতুন এই গবেষণায় দেখা গেছে, ত্বকে ভিটামিন সি পৌঁছানোর ক্ষেত্রে টপিক্যাল বা বাহ্যিক ব্যবহারের চেয়ে খাদ্য থেকে গ্রহণ করা ভিটামিন সি অনেক বেশি কার্যকর। ছবি: এআই দিয়ে তৈরি
ত্বক ভালো রাখতে আমরা অনেকেই দামি সিরাম, ক্রিম বা ফেসপ্যাকের ওপর ভরসা করি। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণা জানাচ্ছে, ত্বকের প্রকৃত যত্ন শুরু হয় ভেতর থেকে খাবারের মাধ্যমেই। নতুন এই গবেষণায় দেখা গেছে, ত্বকে ভিটামিন সি পৌঁছানোর ক্ষেত্রে টপিক্যাল বা বাহ্যিক ব্যবহারের চেয়ে খাদ্য থেকে গ্রহণ করা ভিটামিন সি অনেক বেশি কার্যকর। এই গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে জার্নাল অফ ইনভেস্টিগেটিভ ডার্মাটোলজি-এ।
গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন নিউজিল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব ওটাগোর ফ্যাকাল্টি অব মেডিসিনের বিজ্ঞানীরা। গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন প্যাথলজি ও মলিকিউলার মেডিসিন বিভাগের মাতাই হাওরা এবং সেন্টার ফোর রেডক্স বায়োলজি অ্যান্ড মেডিসিনের অধ্যাপক মারগ্রিট ভিসার্স।
রক্তে ভিটামিন সি আর ত্বকের সুস্থতা
গবেষণায় নিউজিল্যান্ড ও জার্মানির ২৪ জন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ককে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। গবেষকদের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, খাদ্যের মাধ্যমে বেশি ভিটামিন সি গ্রহণ করলে রক্তে এর মাত্রা বাড়ে এবং সেই মাত্রার প্রতিফলন সরাসরি ত্বকেও দেখা যায়। অর্থাৎ রক্তে ভিটামিন সি যত বেশি, ত্বকেও তার ঘনত্ব তত বেশি। অধ্যাপক মারগ্রিট ভিসার্স বলেন, ত্বকের পুরুত্ব এবং ভিটামিন সি গ্রহণের মধ্যে যে সম্পর্ক পাওয়া গেছে, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার ভাষায়, ত্বকের পুরুত্বের সঙ্গে ভিটামিন সি গ্রহণের সম্পর্কটি সত্যিই খুব শক্তিশালী ও বিশ্বাসযোগ্য।
গবেষণার অংশ হিসেবে অংশগ্রহণকারীদের প্রতিদিন দুটি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ কিউই ফল খেতে বলা হয়। এতে তাদের শরীরে প্রতিদিন প্রায় ২৫০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি প্রবেশ করে। আট সপ্তাহ পর দেখা যায়, অংশগ্রহণকারীদের রক্তে ভিটামিন সি-এর মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এমনকি শুধু রক্তেই নয় এই ভিটামিন সি ত্বকের প্রতিটি স্তরে পৌঁছে গেছে। এর ফলে ত্বকের বাইরের স্তরের পুনর্গঠন আরও ভালো হয়েছে এবং ত্বকের পুরুত্বও বেড়েছে, যা কোলাজেন উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত। অধ্যাপক ভিসার্স বলেন, আমরা দেখেছি, রক্তে থাকা ভিটামিন সি ত্বকের সব স্তরে প্রবেশ করে এবং ত্বকের কার্যকারিতা উন্নত করে। অন্যান্য অঙ্গের তুলনায় ত্বকের ক্ষেত্রে এই সম্পর্কটি সবচেয়ে স্পষ্ট।
গবেষণাটি মূলত দুটি ধাপে পরিচালিত হয়। প্রথম ধাপে, অস্ত্রোপচারের সময় সংগৃহীত সুস্থ ত্বকের নমুনা ব্যবহার করে রক্ত ও ত্বকে ভিটামিন সি-এর সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা হয়। দ্বিতীয় ধাপে, অংশগ্রহণকারীদের খাদ্যাভ্যাসে নিয়ন্ত্রিত পরিবর্তন আনা হয়। গবেষকদের মতে, ভিটামিন সি পানিতে দ্রবণীয় হলেও এটি ত্বকের বাইরের বাধা ভেদ করে সহজে ঢুকতে পারে না। তাই ক্রিম বা সিরামের মাধ্যমে ভিটামিন সি ব্যবহার করলেও এর কার্যকারিতা সীমিত। কিন্তু খাদ্যের মাধ্যমে গ্রহণ করা ভিটামিন সি রক্তের মাধ্যমে সরাসরি ত্বকের কোষে পৌঁছে যায়, যা ত্বকের জন্য অনেক বেশি উপকারী।
গবেষণার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ফলগুলোর একটি হলো অংশগ্রহণকারীদের ত্বকের পুরুত্ব বেড়ে যাওয়া। এটি ত্বকে কোলাজেন উৎপাদন বৃদ্ধি এবং এপিডার্মাল কোষের দ্রুত পুনর্গঠনের প্রমাণ। এ বিষয়ে অধ্যাপক ভিসার্স বলেন, ত্বকের পুরুত্ব বৃদ্ধির অর্থ হলো কোলাজেন উৎপাদন বেড়েছে এবং ত্বকের কোষগুলো আগের চেয়ে দ্রুত নতুন করে তৈরি হচ্ছে যা ত্বক নবায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
প্রতিদিন কতটা ভিটামিন সি প্রয়োজন
গবেষকদের মতে, সুস্থ একজন মানুষের জন্য প্রতিদিন প্রায় ২৫০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি গ্রহণ করলেই রক্তে এর আদর্শ মাত্রা বজায় রাখা সম্ভব। তবে শরীর ভিটামিন সি জমিয়ে রাখতে পারে না, তাই এটি প্রতিদিন নিয়মিত গ্রহণ করা জরুরি।
অধ্যাপক ভিসার্সে জানান, প্রতিদিন ৫ বেলার ফল ও সবজি খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত। অন্তত একটি ভিটামিন সি–সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। এতেই সহজে ত্বকের সুস্থতা বজায় রাখা সম্ভব।
সব মিলিয়ে গবেষণাটি স্পষ্ট করে বলছে উজ্জ্বল ও সুস্থ ত্বকের জন্য শুধু বাহ্যিক যত্ন নয়, বরং খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত ভিটামিন সি যুক্ত করাই হতে পারে সবচেয়ে কার্যকর ও প্রাকৃতিক সমাধান।
সূত্র: এনডিটিভি
আরআই/টিএ