ঘরে থাকুন, স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলুন : প্রধানমন্ত্রী

মহান স্বাধীনতা দিবস ও করোনাভাইরাস নিয়ে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৫ মার্চ সন্ধ্যা ৭টায় এ ভাষণ শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রীর এ ভাষণ দেশের সরকারি বেসরকারি সকল টেলিভিশন চ্যানেল ও বেতারে একযোগে প্রচারিত হয়। ভাষণে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে করোনাভাইরাস বিষয়ে নানা দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।

জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্ব আজ করোনাভাইরাসের হুমকি মুখে। বাংলাদেশেও এ ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তাই এ ভাইরাস যেন বিস্তার করতে না পারে সেজন্য সবাইকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এ জাতি সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালিয়ে বিজয় অর্জন করেছিল। করোনাভাইরাস আমাদের নতুন যুদ্ধ। তাই সকলের প্রতি আহ্বান, ঐক্যবদ্ধ ভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে এই যুদ্ধেও আমরা বিজয়ী হবো ইনশাআল্লাহ।

এসময় মসজিদে নামাজ আদায়ের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুসল্লিদের অনুরোধ করছি আপনারা আপাতত ঘরেই নামাজ পড়ুন। হ্যান্ডশেক ও কোলাকুলি পরিহার করুন। সেই সঙ্গে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদেরও ঘরে বসে প্রার্থনা করার অনুরোধ করছি।

জনগনের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জানি আপনারা এক ধরণের আতঙ্ক ও দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। যাদের আত্মীয় স্বজন এখন বিদেশে আছেন, তারাও এখন উদ্বিগ্ন। সবার মানসিক অবস্থা আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু এই কঠিন সময়ে আমাদের আতঙ্কিত ও ধৈর্য্য হারালে চলবে না। এই সংকট মোকাবিলা করতে ধৈর্য্য ও সাহসিকতা ধরে রাখতে হবে।

করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে তিনি বলেন, আমি সবাইকে অনুরোধ করছি, আপনারা স্বাস্থ্যবিধি ও চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে চলুন। সবাই ঘরে অবস্থান করুন। এতে আপনি যেমন নিরাপদে থাকবেন, তেমনি অন্যরাও আপনার কাছ থেকে সংক্রমিত হওয়া থেকে রক্ষা পাবেন। আপনারা সবাই নিজ নিজ ঘর থেকে খুব বেশি প্রয়োজন না হলে বের হবেন না।

প্রবাসী ও বিদেশ ফেরতদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, আপনারা যারা বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছেন, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বের হবেন না। প্রত্যেকেই কোয়ারেন্টিন মেনে চলুন। নিকটতম ব্যক্তিদের সংস্পর্শও এড়িয়ে চলুন। ১৪ দিন নিজেকে সবকিছু থেকে আলাদা রাখুন।

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে হুশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, দেশের এই পরিস্থিতিতে কেউ সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করবেন না। দেশে প্রচুর খাদ্য মজুদ আছে। অযথা কেউ পণ্যের দাম বাড়াবেন না। যদি কেউ দাম বৃদ্ধি করে, আইনশৃংখলা বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। ভোক্তাদের বলতে চাই, আপনারা কেউ অতিরিক্ত পণ্য ক্রয় করবেন না। যতটুকু না হলেই নয়, ততটুকু ক্রয় করুন। নিম্ন আয়ের মানুষগুলোকে পণ্য কেনার সুযোগ দিন।

আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ আতঙ্কিত ও গুজবে কান দিবেন না। আতঙ্কিত হয়ে পড়লে মানুষের যৌক্তিক চিন্তাভাবনা লোপ পায়। সব সময় পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীদের প্রতি খেয়াল রাখুন, যেন তারা সংক্রমিত না হয়। আপনার সচেতনতায় একটা পরিবার, সমাজ, সর্বপরি দেশ সুরক্ষিত থাকবে।

এছাড়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকালীন বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল পরিশোধে বিলম্ব মাশুল মওকুফের কথাও উল্লেখ করেন। এছাড়া আগামী ৬ মাস ব্যাংকের ঋণ খেলাপী ঘোষণা বন্ধ, এনজিও সংস্থার কিস্তি উত্তোলন বন্ধ, সব ধরণের গণপরিবহন বন্ধসহ সরকারের বিভিন্ন সেবা খাতের সাময়িক ছাড় ও গৃহিত সিদ্ধান্তের বিষয় উল্লেখ করেন।

 

টাইমস/এসএন

Share this news on: