করোনাভাইরাসের টিকা সম্পর্কে এখন পর্যন্ত যা জানা যাচ্ছে

করোনাভাইরাস বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে, এই ভাইরাসটির কারণে হওয়া কোভিড-১৯ রোগটির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এখনও কোনো কার্যকর টিকা নেই। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা একটি কার্যকর টিকা তৈরিতে কঠোর পরিশ্রম করছেন।

করোনাভাইরাসের টিকা বা ভ্যাকসিন কেন গুরুত্বপূর্ণ?
এই ভাইরাসটি খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়ে, ফলে বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষ এখনও সংক্রমণের মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছেন। ভ্যাকসিন বা টিকা মানবদেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এমনভাবে শক্তিশালী করে তোলে, যাতে বিশেষ কোনো রোগ বা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব হয়।

টিকা তৈরির অগ্রগতি কতটা?

  • ধীর গতিতে গবেষণা চলছে।
  • বিশ্বের প্রায় ৮০ টি দল টিকা তৈরির উদ্দেশ্য নিয়ে গবেষণা করছেন।
  • কিছু কিছু জায়গায় বর্তমানে করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে ক্লিনিকাল ট্রায়াল চলছে।
  • যুক্তরাষ্ট্রের স্যাটল নগরীর বিজ্ঞানীরা গত মাসে ভ্যাকসিনটি মানবদেহে পরীক্ষার ঘোষণা দিয়েছিল। অস্বাভাবিক হলেও এবার তারা প্রথমে কোনো প্রাণীদেহে পরীক্ষা না করে সরাসরি মানবদেহে পরীক্ষা চালাচ্ছে।
  • ফার্মাসিটিক্যাল জায়ান্ট সানোফি এবং জিএসকে একটি ভ্যাকসিন তৈরির জন্য একত্রিত হয়ে কাজ করছে।
  • অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা দুটি সম্ভাব্য ভ্যাকসিন প্রাণীদেহে পরীক্ষা করেছেন, এপ্রিলের শেষের দিকে মানুষের দেহে সেগুলি পরীক্ষা করার কথা রয়েছে।
  • অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সেপ্টেম্বরের মধ্যে একটি ভ্যাকসিনের প্রায় ১০ লাখ ডোজ উৎপাদন করবেন বলে আশা করছেন এবং বর্তমান মানবদেহে এর পরীক্ষা চলছে।
  • তবে এই ভ্যাকসিনগুলির কোনটি কতটা কার্যকর হবে বা আদৌ হবে কিনা তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।

কখন আমরা করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পাবো?

  • একটি টিকা কার্যকরভাবে প্রস্তুত হতে সাধারণত কয়েক বছর সময় লাগে।
  • তবে গবেষকরা অবশ্য আশা করছেন, মাত্র কয়েক মাসেই তারা সেই কঠিন কাজটি সম্পাদন করতে পারবেন।
  • বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে একটি কার্যকর ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে।
  • চারটি করোনাভাইরাস ইতিমধ্যে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়।
  • এগুলি সাধারণ সর্দি-কাশির মতো লক্ষণ সৃষ্টি করে এবং তাদের কোনোটির জন্য আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিন নেই।

ভ্যাকসিন তৈরিতে এখনও যা যা করতে হবে

যদিও একাধিক গবেষণা দল সম্ভাব্য ভ্যাকসিন তৈরি করেছে, তবে এখনও আরও অনেক কাজ বাকী রয়ে গেছে। সেগুলো হলো-

  • পরীক্ষার মাধ্যমে ভ্যাকসিনটি যে নিরাপদ তা প্রমাণ করতে হবে। এটি রোগের চেয়েও বেশি সমস্যা সৃষ্টি করলে তখন কার্যকর হিসেবে বিবেচিত হবে না।
  • ক্লিনিকাল ট্রায়ালগুলিতে এই টিকাটির কার্যকারিতা প্রমাণ করতে হবে অর্থাৎ মানুষকে অসুস্থ হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করবে তা প্রমাণ করতে হবে।
  • বিপুল পরিমাণে ভ্যাকসিন তৈরির একটি উপায় বের করতে হবে। কারণ কোটি কোটি ডোজের প্রয়োজন পড়বে।
  • ওষুধ নিয়ন্ত্রকসংস্থা কর্তৃক অনুমোদন লাভ করতে হবে।

কত লোককে টিকা দেয়ার দরকার পড়বে?

ভ্যাকসিনটি কতটা কার্যকর হতে চলেছে তা না জেনে একথা বলা শক্ত। তবে গবেষকরা বলছেন, কোভিড-১৯ রোগটির সহজে ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করতে প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ মানুষের দেহে ভাইরাসটির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকা দরকার। ভ্যাকসিনটি যদি পুরোপুরি কাজ করে তবে বিশ্বজুড়ে কয়েক বিলিয়ন মানুষকে এটি দেয়া হতে পারে।

একটি টিকা কি সব বয়সের মানুষকেই রক্ষা করবে?

খুব সম্ভবত এটি বয়স্ক ব্যক্তিদের দেহে কম কাজ করবে। কারণ, বয়স্ক লোকদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা টিকাদানের ক্ষেত্রেও তেমন একটা সাড়া দেয় না। অতীতে দেখা গেছে ফ্লুয়ের টিকা বয়স্কদের শরীরে খুব একটা কাজ করে না।

কারা এই টিকা পেতে পারেন?

যদি কোনো ভ্যাকসিন তৈরি করা সম্ভব হয়, তাহলে প্রথম দিকে এর সরবরাহ কম থাকবে। তাই প্রাথমিকভাবে কোভিড-১৯ রোগীদের নিয়ে কাজ করছেন এমন স্বাস্থ্য কর্মীদের এই টিকা দেয়া হতে পারে। বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে এই রোগটি সবচেয়ে মারাত্মক, তাই তাদের দেহে এই ভ্যাকসিন কার্যকর হলে তাদেরকেও অগ্রাধিকার দেয়া হবে। এছাড়াও যারা কোভিড-১৯ আক্রান্ত কোনো রোগীর সংস্পর্শে এসেছেন, বিশেষত পরিবারের সদস্যরা, তাদেরকে এই টিকা দেয়া হতে পারে। তথ্যসূত্র: বিবিসি

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
আরেক মেয়াদে টিটুর সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করল বাফুফে Jul 01, 2025
img
জাতীয় দলের নতুন নির্বাচক হিসেবে শিপনকে চায় বিসিবি Jul 01, 2025
ফেসবুক পোস্টে এই দিনটি স্মরণ করলেন উমামা ফাতেমা Jul 01, 2025
img
শহীদ আবু সাঈদের মায়ের দোয়া নিয়ে এনসিপির ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ শুরু Jul 01, 2025
img
‘রামায়ণ’ এর শেষের দিনে চোখের জল আটকালেন না রণবীর! Jul 01, 2025
img
আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু Jul 01, 2025
img
স্বৈরাচার পতনে যাতে ১৬ বছর অপেক্ষা করতে না হয় সেই কাজ করছি : প্রধান উপদেষ্টা Jul 01, 2025
img
আগামী ৫ দিন টানা বৃষ্টির আভাস Jul 01, 2025
img
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করল পাকিস্তান Jul 01, 2025
img
সরকারের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় মব হয়েছে : মোশাররফ আহমেদ Jul 01, 2025
img
বরগুনায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়াল ৩ হাজার, হাসপাতালে ২১৭ জন ভর্তি Jul 01, 2025
img
শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে মুক্তির স্বাদ দিয়েছে, জুলাই ক্যালেন্ডার উদ্বোধনে প্রধান উপদেষ্টা Jul 01, 2025
বিসিবি ছাড়ছেন সামি, জানালেন কারণ Jul 01, 2025
img
আসিফ মাহমুদের বিচার করা উচিত : নিলুফার মনি Jul 01, 2025
img
দেশের ৪ সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত Jul 01, 2025
img
ঢাকায় এবার বাংলাদেশ-নেপাল দ্বিপক্ষীয় এফওসি বৈঠক Jul 01, 2025
img
জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদ আমরা আদায় করে ছাড়ব: নাহিদ ইসলাম Jul 01, 2025
img
আসন্ন বিপিএল শুরু হচ্ছে কবে, জানাল বিসিবি Jul 01, 2025
img
আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি আজ Jul 01, 2025
img
১ কোটি ৪০ লাখের বেশি মানুষের ২০৩০ সালের মধ্যে অকাল মৃত্যু ঘটতে পারে Jul 01, 2025