রুবেল মিয়ার মানবিক পুলিশিং

একটা সময় প্রায়ই নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণে খবরের শিরোনাম হতে হতো পুলিশকে! সেই পুলিশের মানবিক কর্মকাণ্ড দীর্ঘদিনের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিকে চাপা দিতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস যেনো বাংলাদেশের পুলিশকে মানবিক পুলিশিং শিখিয়েছে। মহামারি করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে যেখানে সন্তান তার পিতার লাশ নিতে চাইছে না, আত্মীয় স্বজনরা লাশ দাফনে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন; সেখানে পুলিশ সদস্যরা এগিয়ে যাচ্ছে সম্মুখযোদ্ধা হিসাবে। আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে নেয়া, মৃত্যু হলে কবর খুঁড়ে দাফন সম্পন্ন করা সবই যেনো পুলিশের কাজ।

এমন একটি ঘটনা ঘটেছে গাজীপুর জেলার গাছা থানা এলাকায়। শুক্রবার রাতে এক পথচারীর মৃত্যুর পর করোনা ভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে কেউ তার কাছে এগিয়ে আসেননি। পরে সেখানে দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্য এগিয়ে আসেন। শুধু তাই নয় তিনি নিজে ভ্যানগাড়ি চালিয়ে বৃদ্ধের মরদেহ থানায় নিয়ে যান। ওই পুলিশ সদস্যদের নাম রুবেল মিয়া। তিনি গাছা থানায় পুলিশ কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত।

রুবেল মিয়া জানান, রাত ২টার দিকে সাইনবোর্ড এলাকায় ডিউটি করছিলাম। এমন সময় একজন বয়স্ক লোককে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে সামনে এগিয়ে যাই। কাছে গিয়ে দেখতে পাই লোকটি রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে এমন সন্দেহে কেউ মরদেহের পাশে আসছিলেন না। পরে তার মরদেহ থানায় নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা গাড়ি খুঁজতে থাকি। রাত বেশী হওয়ায় কোনো গাড়ি না পেয়ে একজন ভ্যানচালককে মরদেহ থানায় নেয়ার অনুরোধ করি। ওই ভ্যানচালক তার গাড়িতে লাশ না তুলতে হাতে-পায়ে ধরেন। পরে তার অনুরোধ উপেক্ষা করে মরদেহ তার গাড়িতে তুললে সে লাশটি বহনে অস্বীকৃতি জানান। পরে আমি নিজে তার ভ্যান গাড়িটি চালিয়ে মরদেহ থানায় নিয়ে আসি।

তিনি আরো জানান, নিহত লোকটির পরিচয় পাওয়া যায়নি। লোকটির পরনে ছিল সাদা রঙের হাফ শার্ট ও লুঙ্গি এবং মাথায় ছিলো সাদা রঙের টুপি। তার বয়স আনুমানিক ৬০ বছর হবে হয়তো।

এ বিষয়ে গাছা থানার ওসি ইসমাইল হোসেন বলেন, সড়কে লাশ পড়ে থাকতে দেখে এক ব্যক্তি ফোনে আমাকে জানায়। বিষয়টি ডিউটিরত পুলিশ সদস্যদেরকে জানানো হলে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় লাশ পড়ে থাকতে দেখে।ঘটনাটি সড়ক দুর্ঘটনা হলেও মুখে মাস্ক পড়া থাকায় করোনা রোগী ভেবে কেউ এগিয়ে আসেনি। পরে কনস্টেবল রুবেল মিয়া ভ্যানে করে থানায় নিয়ে আসে।

ওসি আরও বলেন, নিহতের পরিচয় নিশ্চিত না হওয়ায় লাশ ময়নাতদন্ত শেষে সরকারিভাবে দাফন করা হয়েছে।

এদিকে পুলিশ কনস্টেবল রুবেল মিয়ার এই মানবিক কাজকে প্রশংসা করেছে পুলিশ সদর দপ্তর, গাজীপুর মহানগর পুলিশসহ বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ।

এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, গাজীপুরের ঘটনাটি আমরা অবগত। পুলিশ সদর দপ্তর তার এই মানবিক পুলিশিংয়ের ধন্যবাদ জানিয়েছে।

তিনি আরও জানান, করোনাভাইরাসে পুলিশ সদস্যরা জীবনবাজি রেখে কাজ করে চলেছে। এ পর্যন্ত ৮ জন পুলিশ সদস্য শাহাদত বরণ করেছে। আক্রান্তের সংখ্যাও প্রায় তিন হাজারের কাছাকাছি।

এদিকে শনিবার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ কনস্টেবল রুবেল মিয়াকে পুরস্কৃত করেছে গাজীপুর মহানগর পুলিশ। গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন রুবেল মিয়ার হাতে পুরুষকার তুলে দেন। এসময় অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা তাকে অভিবাদন জানান।

 

টাইমস/এএলএম/এইচইউ

Share this news on:

সর্বশেষ