আত্মহত্যা সম্পর্কিত যেসব বিষয় জেনে রাখা জরুরি

আত্মহত্যা হলো নিজেকে নিজেই ধ্বংস করা। নিজ হাতে নিজের প্রাণ নেয়া। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর প্রায় আট লাখ মানুষ আত্মহত্যা করেন। এসব মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারলে অনেক অকাল মৃত্যু ঠেকিয়ে দেয়া সম্ভব হতে পারে। তাই আত্মহত্যা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় জেনে রাখা জরুরি।

আত্মঘাতী আচরণ বা সুইসাইডাল বিহ্যাভিয়র কী?
আত্মঘাতী আচরণ বলতে নিজে নিজের জীবন শেষ করার বিষয়ে কথা বলা বা পদক্ষেপ গ্রহণকে বোঝায়। আত্মঘাতী চিন্তাভাবনা এবং এর আচরণগুলি মানসিক রোগ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।

আপনি নিজের মধ্যে বা আপনার পরিচিত কারো মধ্যে যদি আত্মঘাতী লক্ষণ দেখতে পান তাহলে আপনার কোনো স্বাস্থ্যসেবা কর্মীর কাছ থেকে তাৎক্ষণিক সহায়তা নেয়া উচিত।

কি করে বুঝবেন কেউ আত্মঘাতী হতে চলেছেন?
কোনো ব্যক্তি তার ভেতরে কী অনুভব করছেন তা বাইরে থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি না, সুতরাং যখন কেউ আত্মঘাতী চিন্তাভাবনা করছেন তখন তা সনাক্ত করা সব সময় সহজ নয়। তবে কিছু বাহ্যিক লক্ষণ আছে, যা থেকে কেউ আত্মঘাতী হতে চাইছেন তা ধারণা করা যেতে পারে। সেগুলো হলো-

  • হতাশা, উপায়হীনতা বা একাকীত্বের কথা বলা।
  • বেঁচে থাকার কোনো কারণ নেই, এমন কথা বলা।
  • উইল করা বা ব্যক্তিগত সম্পত্তি হস্তান্তর।
  • বন্দুক বা বিষ কেনার মতো আত্মহত্যা করা যায় এমন উপায় অনুসন্ধান করা।
  • খুব বেশি বা খুব কম ঘুমানো।
  • খুব কম খাওয়া বা খুব বেশি খাওয়া, যার ফলে ওজন বৃদ্ধি পায় বা হ্রাস পায়।
  • অতিরিক্ত অ্যালকোহল বা মাদক সেবন, বেপরোয়া আচরণ করা।
  • সামাজিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলা।
  • ক্রোধ বা প্রতিশোধ নেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করা।
  • চরম উদ্বেগে ভোগা।
  • নাটকীয় মেজাজ পরিবর্তন।
  • উপায় হিসেবে আত্মহত্যা সম্পর্কে কথা বলা।

বিষয়টি কঠিন মনে হতে পারে, তবে এমন কারও সহায়তায় আমাদের অবশ্যই এগিয়ে আসা উচিৎ। সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারলে আত্মঘাতী হতে চলেছেন এমন কারও মৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব হতে পারে।

যিনি আত্মঘাতী বোধ করছেন তার সাথে কীভাবে কথা বলবেন?
যদি আপনার সন্দেহ হয় যে পরিবারের কোনো সদস্য বা বন্ধু আত্মঘাতী হবার কথা ভাবছেন বা এমনটি করতে পারেন। তবে তার সাথে স্বাভাবিকভাবেই কথা শুরু করুন এবং আপনার উদ্বেগের বিষয়টি জানান। খোলামেলাভাবে কথা বলুন এবং সরাসরি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে ভয় পাবেন না, যেমন “আপনি কি আত্মহত্যার কথা ভাবছেন?”

কথোপকথনের সময় যে বিষয়গুলি নিশ্চিত করতে হবে

  • শান্ত থাকুন এবং আশ্বাসের স্বরে কথা বলুন।
  • স্বীকার করুন যে তাদের অনুভূতি বৈধ।
  • তাকে উৎসাহ (জীবনের বিষয়ে) এবং সহায়তা অফার করুন।
  • তাকে বলুন যে এ ব্যাপারে সহায়তা পাওয়া যায় এবং তিনি চিকিৎসা নিয়ে আরও ভালো অনুভব করতে পারেন।
  • তার মন পরিবর্তন করার জন্য তাকে লজ্জিত করার চেষ্টা করবেন না। তাদের প্রতি সমর্থন প্রদর্শন (আত্মহত্যার বিষয়ে সমর্থন নয়) সহায়তা করার সর্বোত্তম উপায়।
  • আপনি তাকে কোনো পেশাদার ব্যক্তির সাহায্য নিতে উৎসাহিত করতে পারেন।
  • তাকে কোনো স্বাস্থ্যসেবা কর্মী খুঁজে পেতে, ফোন কল করতে বা অ্যাপয়েন্টমেন্টে নিতে সহায়তা অফার করুন।
  • আপনি যদি উদ্বিগ্ন থাকেন এবং কী করবেন সিদ্ধান্ত নিতে না পারেন, তবে কোনো সঙ্কট বা আত্মহত্যা প্রতিরোধ হটলাইনের সাহায্য নিতে পারেন।

আসন্ন বিপদ কিভাবে বুঝবেন?
আমেরিকান ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স অন ম্যান্টল ইলনেসের (এনএএমআই) মতে, আপনি যদি নীচের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখেন, তবে তাদের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেয়া উচিত।

  • স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর।
  • বন্ধু ও পরিবারকে বিদায় জানানো।
  • হঠাৎ করে হতাশার থেকে শান্ত মেজাজে পরিবর্তন।
  • আত্মহত্যা সম্পন্ন করার পরিকল্পনা করা বা এর জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম যেমন আগ্নেয়াস্ত্র বা বিষ কেনা, চুরি করা কিংবা ধার করা ।

এমন পরিস্থিতিতে কি করবেন?

  • যদি আপনি ভাবেন যে, কেউ তাৎক্ষণিকভাবে নিজের ক্ষতি করতে পারেন এমন ঝুঁকিতে আছেন তাহলে দেরি না করে স্বাস্থ্যসেবা কর্মী, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা প্রশাসনের সহায়তা নিন।
  • বন্দুক, ছুরি, ওষুধ বা ক্ষতির কারণ হতে পারে এমন সরঞ্জাম সরিয়ে ফেলুন।
  • তার কথা শুনুন, তবে ভুল-সঠিক বিচার করবেন না, তর্ক বা চিৎকার করবেন না।

কোন বিষয়গুলি আত্মহত্যার ঝুঁকি বাড়ায়?
সাধারণত কেউ কোনো একক কারণে কেউ নিজের জীবন গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় না। মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাধি থাকা যেমন আত্মহত্যা করার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে, তেমনি আরও অনেক কারণ রয়েছে। তবে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে- আত্মহত্যার ফলে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের অর্ধেকেরও বেশি কোনো মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত ছিলেন না।

হতাশা আত্মহত্যার অন্যতম কারণ, এছাড়াও বাইপোলার ডিসঅর্ডার, সিজোফ্রেনিয়া, উদ্বেগজনিত ব্যাধি এবং ব্যক্তিত্বজনিত ব্যাধি অন্তর্ভুক্ত।

মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা ছাড়াও আত্মহত্যার ঝুঁকি সৃষ্টিকারী কারণ সমূহের মধ্যে রয়েছে

  • কারাভোগ।
  • কর্মক্ষেত্রে অসন্তুষ্টি বা ক্যারিয়ার নিয়ে অসন্তুষ্টি।
  • অপব্যবহারের স্বীকার হওয়া বা ক্রমাগত অপব্যবহারের সাক্ষী হওয়া।
  • ক্যান্সার বা এইচআইভি এর মতো মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হওয়া।
  • সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া বা হুমকির ঘটনা বা হয়রানির শিকার হওয়া।
  • মাদকদ্রব্য ব্যবহার।
  • শৈশবের নির্যাতন বা ট্রমা।
  • আত্মহত্যার পারিবারিক ইতিহাস।
  • আগে আত্মহত্যার চেষ্টা।
  • দীর্ঘস্থায়ী রোগ।
  • সামাজিক ক্ষতি।
  • গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কের অবনতি বা বিচ্ছেদ।
  • কাজের ক্ষতি।
  • আগ্নেয়াস্ত্র, ড্রাগসহ প্রাণঘাতী সরঞ্জামের সহজলভ্যতা।
  • সহায়তা পেতে বা সহায়তা চাইতে সমস্যা।
  • তবে এছাড়াও আরও অন্যান্য অনেক কারণেই মানুষ আত্মঘাতী হতে পারে।

আত্মহত্যার ঝুঁকিতে থাকা লোকদের চিকিৎসা
আত্মঘাতী ব্যক্তির চিন্তাভাবনা এবং আচরণের অন্তর্নিহিত কারণের উপর চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ভর করবে। অনেক ক্ষেত্রে এসব ব্যক্তিদের চিকিৎসায় টকথেরাপি বা সাইকোথেরাপি এবং ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করে থাকেন এবং অনেক সময় জীবনাচরণ পরিবর্তনের পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। তথ্যসূত্র: হেলথলাইন

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
মিথিলা হাতে উঠলো ভারতের ‘দাদাসাহেব ফালকে’ পুরস্কার May 04, 2024
img
আট দফা কমার পর বাড়লো স্বর্ণের দাম May 04, 2024
img
মুসলিম উম্মাহর একাত্মতা ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী May 04, 2024
img
সুন্দরবনের গহীনে ভয়াবহ আগুন May 04, 2024
img
সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার May 04, 2024
img
আইপিএলে প্লে অফে ওঠার দৌড়ে এগিয়ে যারা May 04, 2024
img
শিডিউল বিপর্যয়ে ভোগান্তিতে যাত্রীরা, ৬ ট্রেনের যাত্রা বাতিল May 04, 2024
img
সরকার গণমাধ্যমের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা নিশ্চিতে কাজ করছে: প্রতিমন্ত্রী May 04, 2024
img
শিক্ষকদের মর্যাদা ও বেতন বাড়াতে কাজ করছে সরকার : শিক্ষামন্ত্রী May 04, 2024
img
ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হামাস May 04, 2024