বারবার ব্যর্থ সেই মাহমুদ এখন গুগলের সফল ইঞ্জিনিয়ার!

চলার পথে বারবার ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। তবে হতাশ হননি। দ্বিগুণ উদ্যোমে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে টেনে টুনে চান্স পেয়েছেন। কম্পিউটার সাইন্সে পড়ার ইচ্ছা ছিল সেটা হয়নি। তবে তিনি এখন বিশ্ববিখ্যাত প্রতিষ্ঠান গুগলের একজন সফল ইঞ্জিনিয়ার হয়েছেন। ব্যর্থতাই সফলতার চাবিকাঠি এটা প্রমাণ করেছেন জুলকারনাইন মাহমুদ।

সফলতার গল্পটা জুলকারনাইন মাহমুদের মুখ থেকেই শোনা যাক,
ওমেকাতে পজিশনও খারাপ ছিল না। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষার দিন কি হলো, কয়েকটা অংক কোনোভাবেই মিলাতে পারলাম না। মনে করেছিলাম হয়তো চান্সই পাব না। রেজাল্টের পর দেখলাম কোনরকমে পেয়েছি, কিন্তু সিরিয়াল অনেক পেছনে। টেনেটুনে মেকানিকাল এ আসে, আরেকদিকে আর্কিটেকচার।

এর মাঝে আবার ঢাকা ভার্সিটির IBA এর BBA তে রিটেনএ টিকলাম। তখন IBA এর গ্রাজুয়েটদের অনেক দাম। ভাবলাম IBA তে হয়ে গেলে সেখানেই পড়ব, কিন্তু কিভাবে যেন সেখানেও ভাইভা তে বাদ পড়ে গেলাম। তারপর ভাবলাম, আর্কিটেকচারে পড়ে দেশে একটা ফার্ম দিব, Creativity দিয়ে অনেক কিছু করে ফেলব। তাই মেকানিক্যালের এর চেয়ে আর্কিটেকচারই ভালো অপশন। ভর্তি হয়ে গেলাম সেখানেই। বন্ধুবান্ধব, বুয়েটে লাইফ ভালোই চলছিল, কিন্তু অনেক আগে থেকেই বাইরে পড়তে যাবার একটা সুপ্ত ইচ্ছা ছিল। শুরু করলাম বাইরে এডমিশনের চেষ্টা।

অনেকেই বললো এখন গিয়ে কী করবা, বুয়েটে শেষ করে মাস্টার্সে যাও, Undergraduate এ গেলে নিজে টাকা দিয়ে পড়তে হবে। কিন্তু তারপরও হাল ছাড়লাম না। গেলাম ঢাকার idp তে, বললাম যে ANU তে নাকি ফুল স্কলারশিপ দেয়, কিভাবে কি করতে হবে? তারা বলল যে ইংলিশ মিডিয়াম হলে লাভ ছিল, বাংলা মিডিয়াম এর A+ এর দাম নাই। তারপরও নিজে থেকেই IELTS দিলাম, ANU তে অ্যাপ্লাই করলাম। কিন্তু লাভ হলোনা, শেষমেশ রিজেক্ট।

অস্ট্রেলিয়া তো আমাকে পাত্তাই দিলোনা, ভাবলাম আমেরিকায় চেষ্টা করে দেখি। কিন্তু সেখানে আবার SAT আর TOEFL ছাড়া কিছু হয়না। সেগুলোও দিলাম। খুঁজে পেতে দেখলাম যে টপ ভার্সিটিগুলো চান্স পেলে financial aid দেয়। তাই ভাবলাম এবার তাহলে MIT তেই যাবো, বুয়েটে, ANU তো আর আমাকে বুঝলো না। সব ঠিকঠাক করে MIT তে অ্যাপ্লিকেশনও জমা দিলাম। (যদিও হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া এটা কেউ জানতো না)। কিন্তু শেষমেশ এখানেও রিজেক্ট। এবার ঠিক করলাম জাপানে মনবসু (আসল উচ্চারণ "মনবুকাগাকুশো") স্কলারশিপে পড়তে যাব। অ্যাপ্লাই করলাম, রিটেনে টিকলাম, আমাদের ৪ জনকে এম্ব্যাসি থেকে সিলেক্ট করে ভাইভাতে ডাকলো। ভাইভাও খুব ভালো হলো। আমাদের কজনের নাম জাপানের মিনিস্ট্রিতে পাঠালো। কিন্তু এবার কি হলো, বাংলাদেশ থেকে ওরা একজনকেও সিলেক্ট করলো না আর আমার জাপানের সপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল।

জাপানি rejection এর কদিনপরে দেখলাম Korean Government Scholarship এর সার্কুলার। এবার ভাবলাম তাহলে কোরিয়াতেই যাই, SNU বা KAIST এ পড়বো, খারাপ কি। আসার আগে অনেকেই বলেছিল, বুয়েট ছেড়ে যাচ্ছ, ঠিক করছো তো? Korean ডিগ্রির আবার দাম আছে নাকি? ওখানে তো মানুষ কুকুরের মাংস খায়, ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু আমার কাছে সবসময়ই মনে হয়েছে যে যেকোনো গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ অনেক গর্বের একটা বিষয়, এখানে একজন স্টুডেন্ট তার দেশের রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে নিজের দেশকে তুলে ধরতে পারে। এরকম সুযোগ হাতছাড়া করা ঠিক না। তাই সবকিছু উপেক্ষা করে বুয়েট ছেড়ে চলে আসলাম South Korea তে পড়তে।

এখানে এসে ১ বছর language course এর পরে বুঝতে পারলাম যে আমি SNU বা KAIST এ পড়তে পারবো না, কারণ আমি ভার্সিটি ট্র্যাকে অ্যাপ্লাই করেছি। যেই ভার্সিটির মাধ্যমে অ্যাপ্লাই করেছি সেখানেই পড়তে হবে। আর SNU বা KAIST এ পড়ার ইচ্ছাও আমার অপূর্ণই থেকে গেল। পাস করার আগে/পরে Google, Facebook, Apple, LinkedIn এ অনেক cv জমা দিয়েছি। কিন্তু কোথাও থেকেই কখনো কল পাইনি। মাঝে কল পেয়েছিলাম ThinkCell নামে ছোট একটা জার্মান কোম্পানি থেকে। সেখানে ইন্টারভিউও দিয়েছিলাম। আবারও প্রথম রাউন্ডেই বাদ।

এর পরে একসময় গ্র্যাব থেকে ইন্টারভিউ এর কল পেয়েছিলাম। সেখানেও ইন্টারভিউ এর দ্বিতীয় রাউন্ডে বাদ পড়লাম। তারপরও হাল ছাড়িনি, চেষ্টা করে গিয়েছি। প্রথমেই থেমে গেলে হয়তো এতদূর আসা হতো না। বুয়েটের CSE কিংবা এমআইটিতে পড়ার সুযোগ হয়তো হয়নি কিন্তু আজ যতদূর আসতে পেরেছি সেটাও বা খারাপ কী?

যেকোনো সাকসেস এর পেছনে এরকম হাজারো ব্যার্থতা থাকবে।

So, don't let your failures define who you are.

লেখক, জুলকারনাইন মাহমুদ
Software Engineer, Google

টাইমস/জেকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
১০০ গোলও ব্যালন ডি’অর জেতার জন্য যথেষ্ট নয় : কেইন Nov 16, 2025
img
কন্যাসন্তান নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যে আবারও সমালোচনার মুখে কঙ্গনা Nov 16, 2025
img
এমন এনার্জি নিচ্ছি, ২-৩ দিন ঘুমই আসে না : নুসরাত ফারিয়া Nov 16, 2025
img
যশোরে পদোন্নতি বঞ্চিত শিক্ষা ক্যাডার শিক্ষকদের কর্মবিরতি Nov 16, 2025
img
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে চাচ্ছে : রিজভী Nov 16, 2025
img
মওলানা ভাসানী যুগ যুগ ধরে আমাদের দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ করবে: মির্জা ফখরুল Nov 16, 2025
img
ভারতকে গুঁড়িয়ে কলকাতায় শেষ হাসি দক্ষিণ আফ্রিকার Nov 16, 2025
img
'টেস্ট ক্রিকেটের অবমাননা' বলে কলকাতার পিচের সমালোচনায় হরভজন Nov 16, 2025
img
সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : এ এম এম নাসির উদ্দিন Nov 16, 2025
img
সাবেক মন্ত্রী টিপু মুনশি ও তার স্ত্রীর আয়কর নথি জব্দের আদেশ Nov 16, 2025
img
রোনালদোর নিষেধাজ্ঞা কমাতে আনুষ্ঠানিক আপিল করবে পর্তুগাল Nov 16, 2025
img
‘বারাণসী’ তে মহেশ বাবুর মহাকাব্যিক প্রত্যাবর্তন Nov 16, 2025
img
মওলানা ভাসানী গণতন্ত্রের শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে অনুপ্রাণিত করবে: তারেক রহমান Nov 16, 2025
img
চট্টগ্রামে ৩০ বছর ধরে পালিয়ে থাকা হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তার Nov 16, 2025
img
লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না এলে আন্দোলন অব্যাহত রাখবে ৮ দল: গোলাম পরওয়ার Nov 16, 2025
img
ভারতে গাইতে এসে হেনস্তার শিকার মার্কিন গায়ক একন Nov 16, 2025
img
সাবেক ৪ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ৭ জনের আয়কর নথি জব্দের আদেশ Nov 16, 2025
img
মহেশ বাবুর পৌরাণিক রূপে সূচনা, রাজামৌলির ‘বারাণসী’ ট্রেলারেই কাঁপল বিশ্বমঞ্চ Nov 16, 2025
img
অভিনেত্রী মেহজাবীনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা Nov 16, 2025
img
নতুন সদস্যের আগমনে রাজকুমারকে কিয়ারার শুভেচ্ছা বার্তা Nov 16, 2025