সন্ত্রাসের জনপদে সবজি চাষে অভাবনীয় সাফল্য

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কুমারীডাঙ্গা ও রাজাপুর গ্রাম দুটি এক সময় ছিল মাদকের আখড়া। সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আস্তানা। তিন জেলার সীমানা হওয়ায় গ্রামটি ছিল আতংকের জনপদ। এই গ্রামের মাঠের মধ্য নিয়ে বয়ে চলা নির্জন রাস্তা দিয়ে দিনের বেলায়ও কেউ চলাচল করতে সাহস পেত না। এমনই ভয়ংকর এলাকার এক কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশে নানা ধরনের সবজি উৎপাদন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন কুমারীডাঙ্গা পুলিশ ক্যাম্পের সাব ইন্সপেক্টর আব্দুল আলিম। তার উৎপাদিত সবজি এলাকার অনেক মানুষের কাঁচা তরকারীর চাহিদা মিটছে। ফলে সন্ত্রাস কবলিত এলাকাটিতে এখন শান্তির সুবাতাস বইছে।

মেহেরপুর, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা জেলার সীমানায় অবস্থিত কুমারীডাঙ্গা ও রাজাপুর গ্রাম। তিন জেলার সীমান্তবর্তী হওয়ায় সংযোগ রাস্তাটি ছিল মাদক বিক্রেতা, সন্ত্রাসী ও চোরাকারবারিদের আখড়া। ফলে অপরাধীদের ভয়ে ওই এলাকার মানুষ সব সময় আতঙ্কে বসবাস করতো। এলাকার সাধারণ মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে বছর দশেক আগে স্থাপন করা হয় কুমারীডাঙ্গা পুলিশ ক্যাম্প। বর্তমানে ক্যাম্পের সাব ইন্সপেক্টর আব্দুল আলিম অপরাধপ্রবণ এলাকার রাস্তার দুধারে ফলাচ্ছেন রকমারি শাকসবজি। আর এ কাজে তাকে সহায়তা করে চলেছেন পুলিশের অন্য সদস্যসহ এলাকাবাসী। এখানকার উৎপাদিত সবজি বিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে দরিদ্রদের মাঝে। যাদের আয় রোজগার নেই এমন মানুষ বিনামূল্যে কাঁচা সবজি পেয়ে খুশি। আর এর মধ্য দিয়েই নির্মূল হয়েছে ওই এলাকার মাদক ও সন্ত্রাসের ভয়াবহতা।

এলাকার কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা আগে এই এলাকায় রাতে তো দুরের কথা দিনের বেলাতেই যাতায়াত করতে ভয় পেতাম। বর্তমানে ক্যাম্প কমান্ডার আব্দুল আলিমের সহায়তায় এখানে নানা ধরনের সবজি উৎপাদন করা হচ্ছে। এ কাজে পুলিশ সদস্যদের সাথে আমরাও সহযোগিতা করে থাকি। যারা আর্থিক সংকটে আছে, হাট বাজার করার সামর্থ্য নেই তাদের বিনামূল্যে এই সবজি বিতরণ করেন ক্যাম্প কমান্ডার। জায়গাটি এখন একটি পার্কের মত হয়ে গেছে। অনেক এলাকার মানুষ বিকেলে এখানে সময় কাটাতে আসে। ফলে মাদক ও সন্ত্রাস দূর হয়েছে। এখন শান্তিতে বসবাস করছি।

রাজাপুর গ্রাম উন্নয়ন কমিটির সভাপতি হাফিজুর রহমান বলেন, রাজাপুর এলাকার ত্রিমোহনী এলাকাটি মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা তিন জেলার মোহনা হওয়ায় অপরাধীরা এখানে তাদের নিরাপদ জোন হিসাবে ব্যবহার করতো। এক সময় সন্ত্রাস, চোরাকারবারি ও মাদকের আখড়া ছিল এলাকাটি। কুমারীডাঙ্গায় ক্যাম্প হওয়ায় এখন মাদক ও সন্ত্রাস দূর হয়েছে। ত্রিমোহনী রাস্তার দুধারে এখন সবজি চাষ করে বিনামূল্যে বিতরণ করছেন পুলিশ সদস্যরা। এলাকার মানুষ ভীষণ খুশি।

কুমারীডাঙ্গা পুলিশ ক্যাম্পের কমান্ডার এসআই আব্দুল আলিম বলেন, সন্ত্রাস কবলিত রাস্তার দুই পাশে পতিত জমিতে সবজি চাষ করে বিতরণ করার কথা জেলার পুলিশ সুপার মহোদয়কে জানালে তিনি সাথে সাথে আমাকে উৎসাহ দিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে বলেন। গাংনী থানার অফিসার ইনচার্জও উদ্বুদ্ধ করেন। পুলিশ হলো জনগণের বন্ধু। দেশের সকল ভাল কাজে পুলিশের অংশগ্রহণ আছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে সকল ভাল কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি মানুষকে স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করে তৃপ্তি পেতে এই কাজটি করছি। মানুষ স্বাবলম্বী হলে এমনিতেই অপরাধ প্রবণতা কমে যাবে। এটি একটি কল্যাণকর কাজ হিসাবে এলাকার মানুষকে সাথে নিয়ে পতিত জমিতে সবজি চাষ করে অসহায় দরিদ্র মানুষের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে।

গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কে.এম. শাহাবুদ্দীন আহমেদ বলেন, কুমারীডাঙ্গা ক্যাম্পের পুলিশ সদস্যরা রাস্তার দুই পাশের পতিত জমিতে সবজি চাষ করে মানুষের মাঝে বিতরণ করছেন। তাদের এ উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। এ ধরনের উদ্যোগ কৃষি বিভাগ থেকেও নেওয়া হচ্ছে।

মেহেরপুরের পুলিশ সুপার এস.এম মুরাদ আলী বলেন, পুলিশ দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি নানাবিধ সামাজিক কাজও করে থাকে। আব্দুল আলিম কাজটি ভালবেসে করতে চাইলে তাকে সহায়তা করা হচ্ছে। শুধু আব্দুল আলিম নয় পুলিশের সকল সদস্যদের ভাল কাজে সমর্থন ও সহযোগিতা করা হচ্ছে। এখন অনেক মানবিক কাজ করে সমাজ বিনির্মাণে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে পুলিশ।

 

টাইমস/এসই/এইচইউ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ছাঁটাইয়ের চাপ কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর বার্তা রিয়াল কোচের Dec 09, 2025
img
১৩ বছরেও বিশ্বজিৎ ঘটনার বিচার হয়নি, আক্ষেপ বড় ভাইয়ের Dec 09, 2025
img
সাবেক এমপি জয়সহ ৫ জনের ৮৬ ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের আদেশ Dec 09, 2025
img
বেনি পুড়তে পুড়তে আগুন লাগলে তবে কথা বলি : খায়রুল বাশার Dec 09, 2025
img
হ্যাটট্রিক শিরোপার স্বপ্নে এশিয়া কাপে পা রাখছে বাংলাদেশ Dec 09, 2025
img
ভারতীয় জেল থেকে দেশে ফিরলেন ৩২ মৎস্যজীবী, ফেরত পাঠানো হলো ৪৭ জনকে Dec 09, 2025
img
কঠিন সময় পেরিয়ে নেইমারের ঘোষণা - ‘এটাই আমার শেষ মিশন’ Dec 09, 2025
img
আরও ৬ মাস ভ্যাট থাকছে না মেট্রোরেলের টিকিটে Dec 09, 2025
img
নির্বাচনে পোস্টার এলাউ করা হবে না : খুলনার ডিসি Dec 09, 2025
img
বাস্তবেই কাউকে ভয় পাই না, আবার অনলাইনে ভয় দেখায়: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী Dec 09, 2025
img
নির্বাচনি দায়িত্বে ৩০০ বিচারক চান সিইসি Dec 09, 2025
img
গৃহকর্মী নিয়োগে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৫ বিষয় জানা অবশ্যই জরুরি Dec 09, 2025
img
ত্রিকোণ প্রেমের গল্পে জোভান-তটিনী! Dec 09, 2025
img
তারকা ফুটবলার সন হিউং-মিনকে ব্ল্যাকমেইল করে ফেঁসে গেলেন অভিযুক্ত নারী Dec 09, 2025
img
টি-টোয়েন্টির পর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও চ্যাম্পিয়ন নাসির-আকবররা Dec 09, 2025
img
পুলিশে বড় রদবদল, ঊর্ধ্বতন ১৫ কর্মকর্তাকে বদলি Dec 09, 2025
img
হজযাত্রীদের প্লেনের টিকিটে দিতে হবে না আবগারি শুল্ক Dec 09, 2025
img
আবু সাঈদের ঘটনায় কাদের দায়ী করলেন হাসনাত আবদুল্লাহ? Dec 09, 2025
img
ফেসবুকে রিচ বাড়াতে বিয়ের নাটক করলেন অভিনেতা Dec 09, 2025
img
হজে ছবি তোলা নিষিদ্ধের খবর সম্পূর্ণ মিথ্যা Dec 09, 2025