সম্প্রতি হংকংয়ের গবেষকরা দাবি করেছেন, তাদের গবেষণা নিশ্চিত করেছে যে কোনও ব্যক্তি দুবার কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হতে পারেন। শুধু তাই নয়, দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা আরো বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
এতদিন সোশ্যাল মিডিয়াতে বেশ কিছু লোককে দু’বার কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন বলে দাবি করতে দেখা গেছে। তবে বিজ্ঞানীরা সংশয় প্রকাশ করে বলছিলেন যে এমনটা হবার সম্ভাবনা নেই।
কিন্তু এবার হংকংয়ের একজন ৩৩ বছর বয়সী ব্যক্তির দ্বিতীয়বারের মতো কোভিড-১৯ আক্রান্ত হবার ঘটনা নিশ্চিত করা গেছে। তিনি প্রথমবার মার্চ মাসে কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়েছিলেন।
সেসময় টানা তিন দিন কাশি, গলা ব্যথা, জ্বর এবং মাথা ব্যথা দেখা দিলে চিকিৎসকরা তার রক্ত পরীক্ষা করে কোভিড-১৯ ভাইরাসটি শনাক্ত করে। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে দুবার কোভিড-১৯ নেগেটিভ রিপোর্ট আসার আগ পর্যন্ত তিনি হাসপাতালেই ছিলেন।
একই ব্যক্তি ১৫ আগস্ট স্পেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ শেষে হংকংয়ে ফিরে আসেন। বিমানবন্দরে তার লালা পরীক্ষা করে তাকে আবারো কোভিড-১৯ পজিটিভ শনাক্ত করা হয়। তবে তার দেহে কোভিড-১৯ এর কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি।
তাকে পর্যবেক্ষণের জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকরা তার দেহে সংক্রমিত ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সড করে দেখতে পান এটি পূর্ববর্তী সংক্রমণের থেকে কিছুটা আলাদা ছিল।
এর ফলে ধারণা করা হচ্ছে ওই ব্যক্তিকে সংক্রমণের ৪ মাসের মধ্যে ভাইরাসটি পরিবর্তিত হয়েছিল এবং ওই ব্যক্তিকে দ্বিতীয়বারের মতো সংক্রমিত করে। এটি প্রমাণ করে যে, করোনাভাইরাস একই ব্যক্তিকে দু’বার সংক্রমিত করতে সক্ষম।
হংকংয়ের ওই ব্যক্তি প্রথমবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার রক্ত পরীক্ষা করে চিকিৎসকরা কোভিড-১৯ বিরোধী অ্যান্টিবডির সন্ধান পাননি। চিকিৎসকদের দাবি, সে সময় তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও দুর্বল ছিল, কিন্তু দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হবার পর দেখা যাচ্ছে তার রক্তে খুব দ্রুত অ্যান্টিবডি উৎপাদন হচ্ছে।
গবেষকগণ বলছেন, দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে তা দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা আরো বাড়িয়ে দেয়, অর্থাৎ এটি ইমিউন বুস্টার হিসেবে কাজ করে।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের ইনফেকশাস ডিজিজ এপিডেমিওলজিস্ট মারিয়া ভ্যান কেরখভ বলেন, “আমরা সংক্রমণ সম্পর্কে যা জেনেছি তা হলো আক্রান্ত লোকেদের দেহে এক ধরণের প্রতিরোধ ব্যবস্থা বিকশিত হয়। তবে এটি কতটা শক্তিশালী এবং এর ক্ষমতা কত দিন স্থায়ী হয় তা এখনো স্পষ্ট নয়।”
মায়ো ক্লিনিকের ভ্যাকসিন ডেভেলপমেন্ট এবং ইমিউনোলজি বিশেষজ্ঞ এমডি গ্রেগরি পোল্যান্ড বলেন, “দুটি আলাদা ভাইরাসের সিকোয়েন্সিং এবং ভিন্নতার কারণে পুনরায় সংক্রমণের সম্ভাবনা খুব স্পষ্ট। তবে পুনরায় সংক্রমণের হার কতটা তা নিয়ে ধোয়াশা রয়েছে।”
উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ আছে কি?
যতক্ষণ পর্যন্ত এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানা না যাচ্ছে ততক্ষণ অবধি এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোন প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন না পোল্যান্ড। তার মতে অন্যান্য ভাইরাসের বেলাতেও এমনটি হয়ে থাকে। এ কারণে বারবার সর্দি-কাশিতে মানুষ আক্রান্ত হন।
এটি মৌসুমি ফ্লু’য়ের ক্ষেত্রেও সত্যি। এই কারণেই মানুষকে বছরের পর বছর ফ্লু এর টিকা নিতে হয় এবং প্রতিবছর ফ্লু’য়ের ভ্যাকসিনে সামান্য পরিবর্তন করতে হয়।
তথ্যসূত্র: ওয়েবএমডি।
টাইমস/এনজে