প্রতারণার নতুন স্টাইল, চকচকে রঙে জেলি ভরা ইলিশ

বাঙালীর ঐতিহ্যের সঙ্গে ইলিশের একটা দারুণ যোগাযোগ রয়েছে। কিন্তু এই ভরা মৌসুমেও ইলিশ কিনতে গিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ওজনে কারচুপি, ইলিশের নামে অন্য মাছ বিক্রিসহ বিষাক্ত দ্রবণ মিশ্রিত ইলিশও বিক্রি হচ্ছে বাজারগুলোতে। এতে করে স্বাস্থ্যঝুঁকি যেমন বাড়ছে, তেমনি ইলিশের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

এখন ইলিশের মৌসুম। রাজধানীসহ দেশের সব জেলা শহর ও গ্রামগঞ্জের বাজারেও এখন ইলিশে সয়লাব। স্থায়ী বাজারের পাশাপাশি ইলিশের মৌসুমে ভ্রাম্যমাণ ইলিশ মাছের বাজারও চোখে পড়ে নিয়মিত। এবছরও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে ইলিশের সবচেয়ে বেশি চাহিদা রাজধানীতে।

মেগা এ সিটিতে ছোট বড় মিলিয়ে কয়েক হাজার বাজার রয়েছে। এখন এসব বাজারে ঝুড়িতে ঝুড়িতে ইলিশের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। মাছের ঝুড়ির ঠিক ওপরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে এনার্জি সেভিং বাল্ব।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মাছের ঝুড়ির ওপর এনার্জি বাল্ব ঝুলিয়ে রাখার কারণে মাছ চকচকে দেখায়। এতে ক্রেতারা সহজেই আকৃষ্ট হন। অনেক সময় পঁচা ও নরম মাছও চকচকে দেখে কিনে নিয়ে প্রতারিত হন ক্রেতা। কারণ এনার্জি বাল্ব মাছের খুব কাছাকাছি জালিয়ে রাখার কারণে পঁচা মাছও খুব চকচকে দেখায়।

রাজধানীর বেশ কয়েকটি মাছের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, সব ইলিশ মাছের ঝুঁড়ির ওপর এনার্জি বাল্ব জ্বলছে। আবার অনেক মাছের গায়ে ক্রেতাকে হাত দিতেও দেয়া হচ্ছে না। শুধু দূর থেকে চকচকে রং দেখে ইলিশ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন ক্রেতা সাধারণ। উজ্জ্বল আলোর ঝলকানিতে অনেক সময় ক্রেতারা ভিমড়ি খেয়ে পঁচা মাছ কিনে ঠকে যান। এই প্রতারণা এখন সব বাজারে গেলেই দেখা যায়।

এছাড়া মাছ পরিমাপের স্কেলেও সুক্ষ্ম প্রতারণার কৌশল নিয়েছে ব্যবসায়ীরা। অধিকাংশ বাজারেই দেখা গেছে, স্কেলেও ওপরের প্লেটটি পাতলা অয়েল পেপারে মোড়ানো। এই পেপারের একটা অংশে হালকা চাপ দিলেই স্কেলের ওপরের প্লেটে টান লাগে। এতে ওজনের পরিমাণ বেশি দেখায়। ফলে মাছের বাজারে ওজনেও ঠকছেন ক্রেতারা।

তবে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো, বেশি দামে ইলিশ বিক্রির জন্য মাছের শরীরে ক্ষতিকর জেলি ব্যবহার করা হচ্ছে। আকারে বড় ইলিশের শরীরে জেলি লাগানোয় তা বেশি উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। আর কৃত্রিম এ রং দেখে ক্রেতারা সহজেই প্রতারিত হচ্ছেন।

জানা গেছে, ইলিশের ভরা মৌসুমে বিক্রি বাড়লেও মাছের উৎপাদন বেশি থাকে। যেকারণে মাছ সংরক্ষণ করা হয়। আর এ জন্য ক্ষতিকর জেলি ইলিশের শরীরে ঢুকিয়ে মাছকে বেশি চকচকে, ওজনের ভারী, শক্ত ও সতেজ করে রাখা হয়। কিন্তু জেলি মানুষের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে অধিকাংশ বিক্রেতা বলেন, মাছের ঝুড়ির ওপর এনার্জি বাল্ব দেয়ায় ক্রেতাদের মাছ দেখতে সুবিধা হয়। ভালো ভাবে যাচাই করে ক্রেতা যেন মাছ কিনতে পারে, সেজন্যই বাল্ব জালানো হয়।

এব্যাপারে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, সব ব্যবসায়ীই অধিক মুনাফা করতে চায়। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অধিক মুনাফার জন্য মানুষের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়ার অধিকার তাদের নেই। এ ধরণের উপায় অবলম্বন করা অনৈতিক। এ ক্ষেত্রে সবাইকে আরও সচেতন থাকতে হবে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ গণমাধ্যমকে বলেন, ব্যবসায়ীরা এখন মাছে ফরমালিন দেন না। মাছের আইসিং (বরফীকরণ) ও পরিবহনব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় এমনিতেই মাছ ভালো থাকে। তবে মাছের শরীরে জেলি ঢুকানো হয়। বাজার থেকে প্রায়ই আমরা জেলি মেশানো চিংড়ি পাচ্ছি।

চিকিৎসকরা বলছেন, মাছে ব্যবহৃত এই রাসায়নিক জেলি জীবনবিনাশী ও মারাত্মক ক্ষতিকর। এগুলো মানুষের খাদ্যনালি, পরিপাকতন্ত্র এমনকি কিডনিও নষ্ট করে দিতে পারে।

এ ব্যাপারে র‌্যাবের নির্বাহী হাকিম সরওয়ার আলম গণমাধ্যমকে বলেন, মাছে জেলি ঢুকানো বা এধরণের অপরাধের জন্য নির্দিষ্ট শাস্তি রয়েছে। গত দুই সপ্তাহে কারওয়ান বাজার ও যাত্রাবাড়ী আড়তে অভিযান চালিয়ে আমরা বিপুল পরিমাণ জেলি মেশানো চিংড়ি পেয়েছি। এসব অপরাধের নেপথ্য উৎস আমরা বের করার চেষ্টা করছি।

 

টাইমস/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও আসন সীমানা নির্ধারণে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য : অধ্যাপক আলী রীয়াজ Jul 02, 2025
img
পাকিস্তানে বিস্ফোরণে সহকারী কমিশনারসহ নিহত অন্তত ৫, আহত ১১ Jul 02, 2025
img
‘জুলাই শহীদ’ স্বীকৃতি পাচ্ছেন এক রোহিঙ্গা যুবক Jul 02, 2025
img
চলতি মাসে সর্বোচ্চ পাঁচটি তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস Jul 02, 2025
img
পরের জন্মে প্রিয়াংকার স্বামী হতে চান শাহরুখ Jul 02, 2025
img
বড় দল হিসেবে বিএনপির স্যাক্রিফাইসটাও বেশি , দাবি তারেক রহমানের Jul 02, 2025
img
অনুমোদন ছাড়া আমদানিকৃত মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন করলে আইনানুগ ব্যবস্থা Jul 02, 2025
img
প্রধান উপদেষ্টাকে নিয়ে বিতর্কিত স্ট্যাটাস দেয়ায় সহকারী কমিশনার চাকরিচ্যুত Jul 02, 2025
img
২৭১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ, এস আলমের সাইফুল-পিকে হালদারসহ আসামি ১৫ Jul 02, 2025
img
বিপিএলের নিলাম অক্টোবরের আগে হবে না : মাহবুব আনাম Jul 02, 2025
img
সীমানা পুনর্নির্ধারণে স্বচ্ছতার জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি হবে: জামায়াতের নায়েবে আমির Jul 02, 2025
img
দলীয় প্রতীক শাপলা চেয়ে ইসিতে আবেদন নাগরিক ঐক্যের Jul 02, 2025
img
২৪ ঘন্টায় করোনায় আরও ১ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ২৭ Jul 02, 2025
img
শেখ রেহানার স্বামী ও দেবরের ১৫ কোটি টাকার সম্পদ জব্দের আদেশ Jul 02, 2025
img
সব কিছুতে ঐকমত্য হয়ে যাওয়াটা বাস্তবসম্মত সম্ভব নয়: জোনায়েদ সাকি Jul 02, 2025
img
নতুন মাইলফলক স্পর্শ করলেন শান্ত Jul 02, 2025
img
মিয়ানমারকে হারিয়ে এশিয়ান কাপের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ Jul 02, 2025
img
চট্টগ্রামে ডিআইজি কার্যালয় ঘেরাও করল বৈষম্যবিরোধীরা Jul 02, 2025
img
ঋতুপর্ণার জোড়া গোল, জয়ের আরও কাছে বাংলাদেশ Jul 02, 2025
img
‘হাতপাখার সমাবেশ’ বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রমাণ : ফারুক Jul 02, 2025