সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি বিএসএফ প্রধানের

সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স- বিএসএফ) মহাপরিচালক রাকেশ আস্থানা। একইসঙ্গে সীমান্ত হত্যার মতো ঘটনা বেড়ে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রমকেই দোষারোপ করছেন তিনি।

শনিবার রাজধানীর পিলখানায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদরদপ্তরে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলনের শেষ দিনে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। যৌথ রেকর্ড অব ডিসকাশনস (জেআরডি) স্বাক্ষর করে শনিবার সম্মেলনের সমাপ্তি হয়।

বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া এই সম্মেলনে ১৩ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল। এই দলে ছিলেন অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও বিজিবি সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট স্টাফ অফিসার, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যৌথ নদী কমিশন এবং ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

অন্যদিকে ছয় সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বিএসএফ মহাপরিচালক রাকেশ আস্থানা। তার দলে ছিলেন বিএসএফ সদর দপ্তর এবং ভারতের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

বারবারই সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিএসএফের হাতে বাংলাদেশি হত্যার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ইন্দো-বাংলা সীমান্তে ১৫ জন নিহত হয়েছেন। ২০১৯ সালে এই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪৩ জন। এ বছরের প্রথম সাত মাসে সীমান্তে হত্যার শিকার হয়েছেন ২৯ জন। নিহত প্রায় সবাই ছিলেন নিরস্ত্র এবং তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

সীমান্ত হত্যাকে অপ্রত্যাশিত উল্লেখ করে বিএসএফ প্রধান বলেন, সীমান্তে হত্যাকাণ্ড শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এ বিষয়ে বিজিবির সঙ্গে আমাদের প্রতিনিয়ত আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। সীমান্তে ‘নন লিথেল’ (প্রাণঘাতী নয় এমন) অস্ত্র ব্যবহারে আমাদের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। একেবারে প্রাণ সংশয়ে না পড়লে লিথেল অস্ত্র ব্যবহার না করতে বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাদক-পশু-অস্ত্র চোরাচালানসহ নানা ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে দুর্ভাগ্যবসত এ ধরনের ঘটনাগুলো ঘটছে। তবে সন্ত্রাসীদের গতিবিধি নজরদারি করতে আমাদের দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যেই গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রায় ৭০ ভাগ মৃত্যুই রাতের বেলা অর্থাৎ রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টার মধ্যে ঘটে থাকে। এ সময়টাতে সাধারণত নানা ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রমই ঘটে থাকে। এ সময়টাতে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য বিভিন্ন সময় সন্ত্রাসীরা বিএসএফ সদস্যদের চ্যালেঞ্জ করে বসে। এছাড়া রাতের বেলা আবহাওয়া অনুকূলে থাকে না, সবকিছু দৃশ্যমানও থাকে না। এমন ৬০ ভাগের বেশি ঘটনায় বিএসএফ সদস্যরা আক্রান্ত হচ্ছেন। ৫২ জন বিএসএফ সদস্য বিভিন্ন আক্রমণে আহত হয়েছেন। শুধু আক্রান্ত হলেই বিএসএফ লিথেল অস্ত্র ব্যবহার করে।

সন্ত্রাসী কার্মকাণ্ডের জন্যই সীমান্ত হত্যা বেড়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমাদের দুই দেশের মধ্যেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। আমরা সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফ সমন্বয়ে জয়েন্ট পেট্রোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। করোনা পরিস্থিতির কারণে এটা বেশ কিছুদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। তবে এটা আমরা আবারও ব্যাপকভাবে শুরু করতে চাই। আমরা সীমান্তে মৃত্যু শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে কমিটেড।

সীমান্ত হত্যার বিষয়ে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম বলেন, বেশির ভাগ ঘটনাই রাতে ঘটে। সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য কেউ বর্ডার ক্রস করে ভারতে প্রবেশ করলে এ ধরনের ঘটনা ঘটে। এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে আমরা আবারও সীমান্তে যৌথ টহল শুরু করব।

মাদক চোরাচালানের বিষয়ে বিজিবি প্রধান বলেন, মাদকের বিষয়ে আমরা উভয়পক্ষ কনসার্ন। উভয়েই তথ্য আদান-প্রদান করে মাদক চোরাচালান প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছি।

বাংলাদেশি নাগরিকদের অবৈধভাবে ভারতের ভূখণ্ডে যাওয়া বিজিবির ব্যর্থতা কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, বাংলাদেশের সীমানা চার হাজার ৪২৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে অনেক নদী, জলাভূমি, পাহাড় এবং সমভূমি রয়েছে। প্রতি পাঁচ কিলোমিটারে আমাদের সীমান্ত ফাঁড়ি রয়েছে। আমরা প্রযুক্তির সহায়তায় সীমান্ত রক্ষার চেষ্টা করছি।

করোনার কারণে বন্ধ থাকা সীমান্তে যৌথ টহল পুনরায় শুরু করতে সম্মত হয়েছে উভয় বাহিনী।

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
নির্বাচনের আগে যেকোনো মূল্যে পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটানো হবে: উপ-প্রেস সচিব Jul 12, 2025
img
টলিউডে পুজার নতুন শুরু, সঙ্গী দুলকার Jul 12, 2025
img
মিটফোর্ডে হত্যার ঘটনায় জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Jul 12, 2025
img
ধাড়াক ২ ট্রেলারে নজর কাড়লেন সিদ্ধান্ত ও তৃপ্তি Jul 12, 2025
img
'জবাবদিহিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে দেখছি', সায়মা ওয়াজেদকে বাধ্যতামূলক ছুটি নিয়ে প্রেস সচিব Jul 12, 2025
img
২৪ ঘণ্টায় তাপমাত্রা কিছুটা বাড়ার আভাস Jul 12, 2025
img
‘বাহুবলী ৩’ কি আসবে? দশ বছর পরেও প্রশ্ন অনড় Jul 12, 2025
img
‘সরকার বরাবরের মতোই নীরব’, মিটফোর্ডের ঘটনায় বাঁধন Jul 12, 2025
img
মিটফোর্ডের ঘটনায় আরও একজনসহ মোট গ্রেফতার ৫ Jul 12, 2025
img
কেবল পর্দার সামনে নয়, ক্যামেরার পেছনেও আসছেন এই অভিনেতারা Jul 12, 2025
তোমরা তো ১৩ মাসের নেতা; মুখ খুললেন সাংবাদিক নেতারা! Jul 12, 2025
img
'তারেক রহমানকে নিয়ে রাজপথে যে অশ্লীল অশ্রাব্য স্লোগান দেয়া হচ্ছে তার পরিণতি ভালো হবে না' Jul 12, 2025
img
নতুন বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা ও বাস্তবতায় আসমান জমিন ফারাক: রিফাত রশিদ Jul 12, 2025
img
শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে দিলেও ফিনিশিংয়ে ভরসা পাচ্ছেন না কোচ Jul 12, 2025
img
কুবি শিক্ষার্থীদের ৩টি বাস উপহার দেওয়ার ঘোষণা দিলেন উপদেষ্টা আসিফ Jul 12, 2025
img
ফেনীর বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম Jul 12, 2025
img
মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের ‘শান্তির তত্ত্ব’ ভেস্তে গেছে: ইরান Jul 12, 2025
img
আবারও একসঙ্গে রাজ–মন্দিরা, আসছে ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ Jul 12, 2025
img
জোতাকে সম্মান জানিয়ে চিরতরে অবসরে লিভারপুলের ২০ নম্বর জার্সি Jul 12, 2025
img
পাশবিক এই হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হবে: আসিফ নজরুল Jul 12, 2025