দুর্গাসাগর দীঘি: একটি সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র

অজানাকে জানার, অদেখাকে দেখার কৌতুহল মানুষের চিরন্তন। এই কৌতুহল মেটাতে মানুষ প্রতিনিয়ত ছুটছে দেশান্তরে। আবিষ্কার করছে নতুন নতুন সম্ভাবনার ক্ষেত্র। তেমনি সম্ভাবনাময় একটি স্থান ‘দুর্গাসাগর দীঘি’।

দুর্গাসাগর দীঘিটি বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলায়। জেলা শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার উত্তরে স্বরূপকাঠি-বরিশাল সড়কের পাশে মাধবপাশায় অবস্থিত। দীঘিটির মোট আয়তন প্রায় ৪৬ একর। চারপাশের পাড় বাদে আয়তন প্রায় ২৭ একর। পাড়টি উত্তর-দক্ষিণে লম্বায় ১৪৯০ ফুট এবং প্রশস্তে পূর্ব-পশ্চিমে ১৩৬০ ফুট।

জনশ্রুতি রয়েছে, ১৭৮০ সালে (বাংলা ১১৮৭) প্রাচীন চন্দ্রদ্বীপের তৎকালীন রাজা শিব নারায়ন বিশাল এই দীঘিটি খনন করেন। পরে তার প্রিয়তমা স্ত্রী দুর্গামতির নামানুসারে এর নাম রাখেন দুর্গা সাগর। স্থানীয়দের মধ্যে প্রচলন আছে, রানী দূর্গাবতী যতদূর হাঁটতে পেরেছেন ততটুকু জায়গা নিয়ে দীঘিটি খনন করা হয়। এক রাতে রানী দূর্গাবতী প্রায় ৬১ কানি জমি হাঁটেন। স্থানীয়দের কাছে এটি মাধবপাশা দীঘি নামেও পরিচিত।

দীঘিটির চারপাশ উঁচু সীমানাবেষ্টিত। প্রবেশের জন্য দুই পাশে রয়েছে দুটো গেট। দীঘির মাঝখানের রয়েছে গাছপালা বেষ্ঠিত ছোট্ট একটি দ্বীপ! যার আয়তন ৬০ শতাংশ। শীতকালে এখানে অতিথি পাখির আগমন ঘটে। যা দীঘির সৌন্দর্যকে বহগুণ বাড়িয়ে দেয়। চৈত্রমাসের অষ্টমী তিথীতে হিন্দু ধর্মালম্বীরা এখানে পবিত্র স্নানের উদ্দেশ্যে সমবেত হন। একটা নির্দিষ্টি টিকিট কেটে বড়শি দিয়ে মাছ ধরার সুযোগ রয়েছে এখানে।

১৯৭৪ সালে দিঘীটি পুনরায় সংস্কার করা হয়। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী আবদূর রব সেরনিয়াবাত দীঘিটি সংস্কারের কাজে হাতে দেন। বর্তমানে “দুর্গাসাগর দীঘির উন্নয়ন ও পাখির অভয়ারণ্য” নামে একটি প্রকল্পের অধীনে বরিশাল জেলা প্রশাসন দিঘীটির তত্ত্বাবধান করছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী দীঘির মাঝ বরাবর একটি ঢিবি এবং চারপাশে নারিকেল, সুপারি, মেহগনি, শিশু প্রভৃতি বৃক্ষরোপন করে সবুজবেস্টনি তৈরি করা হয়। দীঘিটির দুই তীরে রয়েছে দুটো ফটক এবং কারুকার্য করা দুটি শানবাঁধানো ঘাট।

বর্তমানে দীঘি এলাকাকে একটি পিকনিক স্পটে পরিণত করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত দর্শনার্থীরা এ দীঘির সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসে।

যেভাবে যাবেন:  সড়কপথে ঢাকা থেকে বরিশাল যাওয়া যাবে। এজন্য হানিফ, ঈগল, শাকুরসহ কয়েকটি পরিবহন বাস রয়েছে। সুবিধা অনুযায়ী ভাড়া পড়বে ২৫০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত।

এছাড়া নৌপথেও ঢাকা থেকে যেতে পারেন। গ্রিনলাইন, সুন্দরবন, সুরভী, পারাবতসহ কয়েকটি লঞ্চ এই রুটে চলাচল করে। সুবিধা অনুযায়ী ভাড়া পড়বে ১৫০ থেকে ৪৫০০ টাকা পর্যন্ত। এরপর বরিশাল থেকে লেগুনা বা বাসে করে যেতে পারবেন দুর্গাসাগর দীঘি।

থাকার সুবিধা: রাত্রিযাপনের জন্য বরিশালে পাবেন বেশ কিছু ভালো মানের আবাসিক হোটেল। এরমধ্যে হোটেল হক ইন্টারন্যামনাল, হোটেল এথেনা ইন্টারন্যামনাল, হোটেল প্যারাডাইজ টু ইন্টারন্যামনাল উল্লেখযোগ্য।

খাবার: খাওয়ার জন্যও বরিশাল শহরে পাবেন বেশ কিছু উন্নতমানের রেস্টুরেন্ট।

 

Share this news on: