বন্যার আগে বন্যা : দুর্ভোগে মানুষ

হঠাৎ বন্যায় চরম দুর্ভোগে পড়ে সিলেট ও সুনামগঞ্জসহ দেশের কয়েকটি এলাকার লাখ লাখ মানুষ। ভারতের সিলেটের প্রধান তিন নদী সুরমা, কুশিয়ারা ও সারিগোয়াইনের পাড় উপচে ও বাঁধ ভেঙ্গে সিলেট মহানগর ও সুনামগঞ্জ জেলা শহরসহ বানের পানিতে তলিয়ে যায় ঘরবাড়িসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। ক্ষতিগ্রস্তদের বর্ণনায় বন্যা উপদ্রুত এলাকায় ফসলী জমি ও হ্যাচারীসহ ৯০ শতাংশ সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হলেও সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী ক্ষয়ক্ষতির পরিমান মাত্র তিন শতাংশ। বোরো মৌসুমের কোনও ধানই উঠাতে পারেননি এসব এলাকার বেশিরভাগ কৃষক।

প্রশাসনের কর্মকর্তা ও স্থানীয়রা জানান, ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং ভারতের আসাম ও মেঘালয়ের বিভিন্ন এলাকায় টানা বৃষ্টিপাতে সিলেট ও সুনামগঞ্জে মৌসুমী বন্যার আগেই এই ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল আর অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের বানের পানিতে সুনামগঞ্জের ২৫৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২১০টি প্রতিষ্ঠানই তলিয়ে যায়। রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত ও তলিয়ে যাওয়ায় অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতেও যেতে পারেনি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের এসব তথ্যই প্রমান করে এবারের আগাম বন্যা কতোটা ভয়াবহ ছিল। এর আগে সর্বশেষ ২০০৪ সালে এমন বন্যা হয়েছিল সিলেট ও সুনামগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।

আগাম বন্যায় সোনালী ফসল তলিয়ে যাওয়ার এই দৃশ্য অসহনীয়। তারপরও সুনামগঞ্জ সদরের অলির বাজার গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান চেষ্টা চালিয়েছেন কিছু আধা পাকা ও কাঁচা ধান তোলার। এসব ধানেরও বেশিরভাগ অংশ পঁচে গেছে। তিনি বলেন, এবার হঠাৎ বন্যায় কোথাও ধান ক্ষেত, বীজ তলা, পুকুর সবই তলিয়ে যায়। এ বন্যায় গৃহস্থালী কোনও কিছুই রক্ষা পায়নি। হাজার হাজার বন্যার্ত নারী পুরুষ সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রসহ বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও উঁচু কোনও মাটির স্তুপের ওপর আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।

সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) অসীম চন্দ্র বনিক বলেন, বন্যায় রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি বিশেষভাবে নজরে নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলার চেষ্টা করা হয়। মাত্র তিন শতাংশ ধানের জমি ও হ্যাচারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটা প্রাকৃতিক একটা বিষয়। তবে এ পানি ও ধানের ওপর আবার বিশাল একটা জনগোষ্ঠি নির্ভরশীল।

সিলেট জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, বৃষ্টি হলেই সীমান্তের ওপারের পাহাড়ী ঢলের পানি নেমে আসে। সাধারণত জুন-জুলাইয়ে বন্যা হয়। কিন্তু এবার আগাম বন্যার পানি এতো ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় যে, যা বাঁধ কিংবা অন্য কোনোভাবে ঠেকানো সম্ভব ছিল না। এজন্য আমরা যে আগাম প্রস্তুতি নিব তারও কোনও সুযোগ ছিল না। ফলে বন্যার পানিতে কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সামনে আরও বন্যার আশঙ্কা করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই কর্মকর্তা।

সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে টাইমস্ ইনভেস্টিগেশনের বিস্তারিত অনুসন্ধান দেখুন ভিডিও প্রতিবেদনে।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
শতাব্দীর ভালো নির্বাচন চাই : ইসি সচিব Dec 03, 2025
img
ট্রাম্প প্রশাসনকে কড়া সতর্কবার্তা দিলেন গায়িকা সাবরিনা Dec 03, 2025
img
ব্যবসায়ীরা এককভাবে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোয় ব্যবস্থা নেবে সরকার : বাণিজ্য উপদেষ্টা Dec 03, 2025
img
‘রোহিত-কোহলি না খেললে প্রতিপক্ষই বেশি খুশি থাকে’ Dec 03, 2025
img
কার সঙ্গে নতুন জীবন শুরু করলেন নির্মাতা আরিয়ান? Dec 03, 2025
img
‘২৫ বছর আগে যা ছিলাম, এখন তার চেয়েও চাঙা’ বলার পরই বৈঠকে এক ঘণ্টা ‘ঘুমালেন’ ট্রাম্প Dec 03, 2025
img
পাপারাজ্জিদের সাথে আমার সম্পর্ক শূন্য : জয়া বচ্চন Dec 03, 2025
img
বিয়ের পর আলোচনায় সামান্তা-রাজ এর সম্পত্তির তালিকা Dec 03, 2025
img
অনুমতি ছাড়াই ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধি, কোম্পানিগুলোকে তলব মন্ত্রণালয়ের Dec 03, 2025
img
ম্যাক্সওয়েলকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেছিলেন শেবাগ Dec 03, 2025
img
খালেদা জিয়াকে মেক্সিকোর পার্লামেন্টে স্মরণ Dec 03, 2025
img
বিয়ে স্থগিত, এরই মধ্যে পলাশের আশ্রমযাত্রা নিয়ে জল্পনা Dec 03, 2025
img
সংসদ ও গণভোটের দুই ব্যালটে মক ভোটিংয়ে গড়ে ৩.৫২ মিনিট সময় ব্যয় Dec 03, 2025
img
বিএনপি চেয়ারপারসন রাজনীতি করেছেন কোটি মানুষের জন্য: ড. মঈন খান Dec 03, 2025
img
রুশ রাজপরিবারের ১১২ বছর পুরনো 'রাজকীয় ডিম' ৩৭০ কোটি টাকায় বিক্রি Dec 03, 2025
img
বিশ্বকাপের জন্য ‘প্রায় প্রস্তুত’ বাংলাদেশ : লিটন Dec 03, 2025
img
ভোটার তালিকায় জুবিনকে চিরজীবিত রাখলেন বিএলও Dec 03, 2025
img
ভোটের তফসিল ঘোষণা কবে, জানালেন ইসি আনোয়ারুল Dec 03, 2025
img
ট্রাইব্যুনালে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন জেড আই খান পান্না Dec 03, 2025
img
বোর্ডের নয়, ক্লাবের সিদ্ধান্তে মাঠে গড়াবে লিগ Dec 03, 2025