খাদ্যাভ্যাসে চিনি বাদ দেওয়ার চার উপায়

স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যতালিকা অনুযায়ী, গড়ে একজন পুরুষের দৈনিক ৯ চা চামচ, একজন নারীর দৈনিক ৬ চা চামচ এবং একজন শিশুর দৈনিত ৩ চা চামচ চিনি রাখা উচিত। তবে মার্কিন নাগরিকরা গড়ে দৈনিক ১৭ চা চামচ চিনি খেয়ে থাকে। তবে সচেতনতার স্বার্থে জেনে রাখা উচিত, খাদ্যতালিকায় মাত্রাতিরিক্ত চিনি থাকলে বিভিন্ন ধরনের রোগ এবং স্বাস্থ্যসংক্রান্ত জটিলতায় ভোগার ঝুঁকি থাকে। এগুলোর মধ্যে স্থূলতা, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, হৃদরোগ উল্লেখযোগ্য।

তবে প্রাকৃতিকভাবে খাদ্যতালিকায় থাকা চিনির ক্ষেত্রে (যেমন ফলের মধ্যে থাকা চিনি) এ ধরনের কোনো ঝুঁকি নেই। বরং প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া চিনি হলো সুষম খাদ্যতালিকার অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা থেকে এটি বাদ দেওয়া উচিত না।
তবে সোডা, কেক এবং অধিকাংশ প্রক্রিয়াজাত খাবারের মধ্যে থাকা চিনি শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা থেকে অতিরিক্ত চিনি বাদ দেওয়া অত্যাবশ্যকীয়। চারটি উপায়ে পরিবারের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা থেকে চিনিজাতীয় খাবার বাদ দেওয়া সম্ভব-

১। স্বাস্থ্যের জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা জেনেও আমরা সহজে মিষ্টিজাতীয় খাবার ত্যাগ করতে পারি না। এর পেছনে অন্যতম কারণ হলো চিনি আমাদের মস্তিষ্কের একটি বিশেষ অংশকে উদ্দীপ্ত করে যা আমাদের মধ্যে মানসিক প্রশান্তি সৃষ্টি করে। মস্তিষ্কের ওই অংশ উদ্দীপ্ত হলে সেটি আমাদের ক্ষুধা এবং খাবারের প্রতি আসক্তি বাড়িয়ে তোলে। বড়দের ক্ষেত্রে সম্ভব হলেও শিশুদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা থেকে চিনি বাদ দেওয়া বেশ কঠিন। চিনির ওপর নির্ভরতার কারণে শিশুরা এতটাই প্রভাবিত যে আচমকা খাদ্যতালিকা থেকে মিষ্টিজাতীয় খাবার বাদ দিলে তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই হুট করেই খাদ্যতালিকা থেকে চিনি বাদ দিয়ে দেওয়া উচিত না। বরং দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা থেকে ধীরে ধীরে চিনিজাতীয় খাবার বাদ দেওয়া তুলনামূলক ভালো। প্রথমদিকে কিছুটা চ্যালেঞ্জিং মনে হলেও ধীরে ধীরে পরিবারের সবাই চিনিবিহীন সুষম খাদ্যতালিকায় অভ্যস্ত হয়ে উঠবে।

২। সুস্বাস্থ্যের জন্য চিনি বড় অন্তরায় হলেও এটিকে ক্ষতিকর বলে বিবেচনা করা যাবে না। দৈনন্দিন জীবনে পরিমাণমত চিনি খাওয়ার মধ্যে দোষের কিছু নেই। তাই খাদ্যতালিকা থেকে চিনিকে পুরোপুরি বাদ দেওয়ার চেয়ে সেটিকে স্বাস্থ্যকর খাবার দিয়ে প্রতিস্থাপন করা উত্তম। যেমন- আপনার সন্তান যদি ফলের রস পছন্দ করে, তাহলে তাকে স্বাভাবিক পরিমাণের অর্ধেক ফলের রস দিন এবং বাকি অর্ধেক পানি দিয়ে পাতলা করে দিন। এতে ফলের রসের স্বাদ আগের মতো মিষ্টি থাকলেও বাড়তি চিনির প্রভাবমুক্ত থাকবে। সকালের নাস্তায় যদি শিশুরা চিনিযুক্ত সিরিয়াল পছন্দ করে তাহলে সেটির বিকল্প হিসেবে পুষ্টিকর এবং সাধারণ খাবার রাখুন।

৩। অভিভাবকরা হয়ত এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে অনেকবারই গিয়েছেন। সন্তানদের যদি চিনিজাতীয় খাবারের পরিবর্তে ভালো কিছু দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে পারেন, তাহলে তাদের রাজি করানো তুলমামূলক সহজ। আইস ললি কিংবা চকোলেট বিস্কুট শিশুদের খুবই প্রিয় খাবার। এগুলোর পরিবর্তে রক ক্লাইম্বিং বা আইস স্কেটিং- এর মতো মজাদার এবং আনন্দিত রাইড উপহার হিসেবে দিতে পারলে শিশুরা সহজেই চিনি ব্যতিত খাদ্যতালিকার সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে।

৪।খাদ্যতালিকায় চিনিজাতীয় খাবার ধীরে ধীরে বাদ দেওয়া হলে পরিবারের সদস্যরা একসময়ে নিজেরাই শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার বিষয়টি বুঝতে পারবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যাওয়া, বাড়তি ওজন আর প্রদাহ কমে যাওয়া, মানসিক উৎফুল্লতা এবং সর্বোপরি শারীরিক সুস্থতা- সবই চিনিজাতীয় খাবারের ওপর নির্ভরশীলতা কমে যাওয়ার বৈজ্ঞানিক সুফল। তাই পরিবারের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা থেকে অতিমাত্রায় চিনিজাতীয় খাবার বাদ দেওয়ার উপকারিতা সবাই জানাতে ভুলবেন না।

Share this news on: