মিয়ানমারে মঠে সন্দেহভাজন গণহত্যায় নিহত ২২

মিয়ানমারে গত সপ্তাহে তিন বৌদ্ধ ভিক্ষুসহ অন্তত ২২ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যার জন্য সামরিক বাহিনীকেই দায়ী করছেন সেনাশাসনের বিরোধীরা।

এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।

মিয়ানমারের সামরিক জান্তার এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, দেশটির দক্ষিণের শান রাজ্যের পিনলাউং অঞ্চলে বিদ্রোহীদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। তবে এ সংঘাতে বেসামরিক কোনো নাগরিক হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

এক বিবৃতিতে তিনি দাবি করেন, নান নিয়েন্ত গ্রামের মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সেনাবাহিনী পৌঁছানোর পর সেখানে কারেন্নি ন্যাশনালিটিজ ডিফেন্স ফোর্স- কেএনডিএফ এবং আরেকটি বিদ্রোহী গ্রুপের সদস্যরা হামলা চালায়। সন্ত্রাসীরা যখন এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে থাকে, তখন কিছু গ্রামবাসী মারা যান, অনেকে আহত হন।

কেএনডিএফ-এর মুখপাত্র দাবি করেছেন, তাদের যোদ্ধারা রোববার নান নিয়েন্ত গ্রামে ঢোকার পর একটি বৌদ্ধমন্দিরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অবস্থায় মরদেহগুলো দেখতে পায়।

কেএনডিএফ এবং আরেকটি বিদ্রোহী গ্রুপ কারেন্নি রেভোল্যুশন ইউনিয়ন- কেআরইউ কিছু ভিডিও এবং ছবি প্রকাশ করেছে। সেগুলোতে দেখা যাচ্ছে, মরদেহগুলোতে শরীর এবং মাথায় গুলির চিহ্ন রয়েছে, মন্দিরের দেয়ালেও গুলির দাগ রয়েছে।

তবে কোনো পক্ষের দাবিই নিরপক্ষেভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট নামে পরিচিত মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরোধী ছায়া সরকারের সদস্য ড. ইয়ে জাও মরদেহগুলোর ময়নাতদন্ত করেছেন৷ তার তথ্যমতে, খুব কাছ থেকে সেমি-অটোমেটিক অস্ত্র দিয়ে গুলি করে তাদের হত্যা করা হয়েছে।

ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মরদেহগুলোর আশেপাশে কোনো সামরিক পোশাক, অস্ত্র বা গুলি পাওয়া যায়নি। ফলে ধরে নেওয়া যায় যে তারা বেসামরিক নাগরিক।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, যেহেতু সব মরদেহই নান নিয়েন মন্দির চত্বরের মধ্যে পাওয়া গেছে, ফলে ধরে নেওয়া যায় যে এটি একটি বেপরোয়া হত্যাকাণ্ড।

ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টের মানবাধিকার বিষয়ক মন্ত্রী অং মিও মিন বলেছেন, গত দুই সপ্তাহে নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলার এমন অন্তত চারটি ঘটনা ঘটিয়েছে সামরিক জান্তা।

একটি অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এটা স্পষ্ট যে বেসামরিক জনগণকে টার্গেটে পরিণত করেছে জান্তা সরকার৷ এটি মানবতাবিরোধী অপরাধ।

তবে বেসামরিক নাগরিকের ওপর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে জান্তা সরকার তাদের এ অভিযানকে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন বলে দাবি করেছে।

অলাভজনক প্রতিষ্ঠান অ্যাসিসটেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারসের তথ্যানুযায়ী, নির্বাচিত সরকারকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের পর থেকে অন্তত তিন হাজার ১৩৭ জন মানুষ মারা গেছেন তাদরে হাতে।

জাতিসংঘও মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
৪৭তম বিসিএস: লিখিত পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে ফের যমুনা অভিমুখে মিছিলের ডাক Nov 26, 2025
img
কী আছে হোয়াটসঅ্যাপের ‘অ্যাবাউট’ ফিচারে! Nov 26, 2025
img
ভবিষ্যতে শ্রদ্ধা ও আলিয়া ভাটের বড় পর্দায় জুটি বাঁধার সম্ভাবনা Nov 26, 2025
img
আশুলিয়ায় ঘটনায় চলছে ২০তম দিনের সাক্ষ্য Nov 26, 2025
img
বিএনপি নেতা ফজলুর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আদালত অবমাননার অভিযোগ Nov 26, 2025
img
বিশ্বব্যাপী ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার কর্মী ছাঁটাই করবে এইচপি, আস্থা এআইতে! Nov 26, 2025
img
রিমেক নয়, নতুন কাহিনী নিয়ে হাজির মেগা স্টার পবন কল্যাণ Nov 26, 2025
img
শাহবাগের বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আগুন নিয়ন্ত্রণে Nov 26, 2025
img
আসন্ন নির্বাচনে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে ৩২৮১১ প্রবাসীর নিবন্ধন Nov 26, 2025
img
বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় জার্মানি Nov 26, 2025
img
এবার মামলা হচ্ছে তিশার বিরুদ্ধে Nov 26, 2025
img

কড়াইলের আগুনে নিঃস্ব হাজারও পরিবার

প্রাণে বাঁচলেও রক্ষা পায়নি ‘সুতা পরিমাণ’ সম্পদও Nov 26, 2025
img
এখনও বের হচ্ছে ধোঁয়া, ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে শেষ সম্বল খুঁজছে বস্তিবাসী Nov 26, 2025
img
সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে সব বাহিনী প্রস্তুত : সিইসি Nov 26, 2025
img
বঙ্গোপসাগরের কাছে মালাক্কায় ঘূর্ণিঝড়, আজ আঘাতের আশঙ্কা Nov 26, 2025
img
আগুনের ক্ষয়ক্ষতি দেখতে উৎসুক জনতার ভিড় Nov 26, 2025
img
বিএনপির আয়-ব্যয়ের ফিরিস্তি তুলে ধরলেন রুমিন ফারহানা Nov 26, 2025
img
মায়ের জন্য ‘দেবদাস’ চরিত্রে অভিনয়ের কথা শেয়ার করলেন শাহরুখ Nov 26, 2025
img
বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় জার্মানি Nov 26, 2025
img
নতুন ওয়েব সিরিজে যোগ দিচ্ছে তানিয়া, শুটিং শুরু ডিসেম্বরে Nov 26, 2025