রাজধানীতে আওয়ামী লীগের ‘শান্তি সমাবেশ’ আজ

আগামী জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত মাঠ নিজেদের দখলে রাখার কৌশল নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ জন্য বিএনপি ও তার মিত্রদের আন্দোলন কর্মসূচির দিনটিতেই পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে ‘শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ’ অব্যাহত রাখা হবে। রাজপথ ছেড়ে দিলেই সরকারবিরোধীদের আন্দোলন কর্মসূচি ঘিরে সহিংসতা-সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা। এ কারণে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের পাশাপাশি রাজপথে সতর্ক অবস্থান কর্মসূচিও চালিয়ে যাবে সরকার সমর্থকরা।

এই অবস্থায় আজ শনিবার বিএনপি ও মিত্রদের গণমিছিল ও সমাবেশের দিন ঢাকা মহানগরীর দুই প্রান্তে ‘শান্তি ও উন্নয়ন কর্মসূচি’ ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের ব্যানারে পৃথক শান্তি সমাবেশকালে অবস্থান কর্মসূচি ও মিছিল করবেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী। উভয় কর্মসূচিই পালিত হবে বিএনপি- জামায়াতের নৈরাজ্য-সন্ত্রাস ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে আজকের উন্নয়ন ও শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বিকেল ৩টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। একই সময়ে মোহাম্মদপুর টাউন হল ময়দানে ঢাকা মহানগর উত্তরের অবস্থান কর্মসূচি, শান্তি সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। উভয় কর্মসূচিতে দলের কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা বক্তব্য রাখবেন।

নেতারা বলছেন, আজকের দুটি শান্তি সমাবেশ ঘিরে আবারও রাজধানীতে বড় শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। এ জন্য মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের থানা ওয়ার্ড নেতাদের সমাবেশ দুটিতে সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সরকার সমর্থক ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ জনপ্রতিনিধিদেরও একই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে কর্মসূচি সফল করতে সব প্রস্তুতি গুছিয়ে রেখেছেন তারা।

এদিকে, বিএনপির কর্মসূচি আজ বিকেল ৩টায় শুরু করার ঘোষণা থাকলেও সরকার সমর্থক নেতাকর্মী সকাল থেকে থানা-ওয়ার্ড ও ইউনিট কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেবেন। অবস্থানকালে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে মিছিলও করবেন তারা। বিএনপি ও মিত্রদের কর্মসূচিকে ঘিরে সম্ভাব্য নৈরাজ্য ঠেকাতে নেতাকর্মীকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রাজধানীর কোথাও সহিংসতা-নাশকতার আশঙ্কা সৃষ্টি হওয়া মাত্রই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সরকার সমর্থকরাও প্রতিহত করার চেষ্টা করবেন। পরে এসব নেতাকর্মীই স্ব স্ব অংশের শান্তি সমাবেশের কর্মসূচিতে যোগ দেবেন।

এই অবস্থানের অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর উত্তরের অধীন ২৬টি থানা ও ৫৪টি ওয়ার্ড এবং মহানগর দক্ষিণের অধীন ২৪টি থানা ও ৭৫টি ওয়ার্ডে সতর্ক পাহারা বসানো হবে। আওয়ামী লীগের পাশাপাশি সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরাও এই অবস্থানে থাকবেন। বিশেষ করে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয়াপল্টনের সমাবেশের দিকে সতর্ক নজরদারি রাখা হবে। কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি মনিটর করবেন। প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও দেবেন।

বিএনপি ও তার মিত্রদের আগের কর্মসূচিগুলোকে ঘিরেও মাঠে অবস্থান ছিল আওয়ামী লীগের। গত ডিসেম্বরে বিএনপি ও তার মিত্রদের আন্দোলন কর্মসূচি শুরুর পর থেকেই সরকারবিরোধীদের কর্মসূচির দিনটিতে শান্তি সমাবেশ ও সতর্ক অবস্থানের কর্মসূচি পালন করে আসছে ক্ষমতাসীন দল ও সহযোগী সংগঠনগুলো। এই অবস্থায় গত ১২ জুলাই বিএনপি ও তার মিত্ররা সরকার পতনের এক দফা ঘোষণা দিয়ে মাঠে নামলে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি জোরালো করে আওয়ামী লীগও। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথ নিজেদের দখলে রেখে বিরোধী দলের সম্ভাব্য নাশকতা- নৈরাজ্য মোকাবিলার এমন ‘রাজনৈতিক কৌশল’ অব্যাহত রাখা হবে বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছে তারা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, বিএনপি ও তার জোট আগামী নির্বাচন সামনে রেখে আন্দোলনের নামে যেভাবে সন্ত্রাস-নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে, তাতে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশের শান্তি বজায় রাখার স্বার্থে পদক্ষেপ নিচ্ছে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগও আগামী নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথে থেকে এই সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ও দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করবে।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন, কোনো অবস্থায়ই বিএনপিকে ছাড় দেয়া হবে না। কোথাও কোনো সহিংসতা ও নৈরাজ্যের আভাস পাওয়া মাত্রই প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির বলেন, বিএনপির সন্ত্রাস- নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ উন্নয়ন ও শান্তি সমাবেশসহ রাজপথে সতর্ক অবস্থানের কর্মসূচি পালন করে আসছে। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। যাতে বিএনপি জনগণের জীবন ও সম্পদ ধ্বংসের পাশাপাশি নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে না পারে।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
এয়ার ইন্ডিয়া দুর্ঘটনার তদন্তে বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য Jul 12, 2025
img
পিআর পদ্ধতি একটি অপরিকল্পিত প্রস্তাবনা মাত্র: ১২ দলীয় জোট প্রধান Jul 12, 2025
img
রিয়ালের আবেদন নাকচ করল লা লিগা সভাপতি Jul 12, 2025
img
২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও ১ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৩৯১ Jul 12, 2025
img
মিটফোর্ডের ঘটনায় আসামি রবিনের স্বীকারোক্তি, টিটন ৫ দিনের রিমান্ডে Jul 12, 2025
পুলিশ মেসের ওয়াশরুম ঘুরে দেখলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Jul 12, 2025
পুলিশকে খেলাধুলায় জোর দিতে বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Jul 12, 2025
img
লোকেরা আমাকে প্রায় মেরে ফেলেছিল : করণ জোহর Jul 12, 2025
ইউনুস সরকারকে হোসাইন মোহাম্মদ সেলিমের সংস্কার প্রস্তাব Jul 12, 2025
img
নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা জানালেন উপ-প্রেসসচিব Jul 12, 2025
img
কপিল শর্মার ক্যাফেতে হামলাকারীদের দায় স্বীকার Jul 12, 2025
img
মিয়ানমারে মঠে জান্তা বাহিনীর বিমান হামলায় নিহত ২০ Jul 12, 2025
img
প্রশাসনিক ব্যর্থতায় দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিপর্যস্ত: যুবদল সভাপতি Jul 12, 2025
img
নির্বাচন সন্নিকটে, কবে ফিরছেন তারেক রহমান? Jul 12, 2025
img
বাংলাদেশে সংকট তৈরি করার জন্য নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে: ফারুক Jul 12, 2025
img
হাসিনাকে যারা তাড়াতে পেরেছে, তারা চাঁদাবাজদের ভয় পায় না: নাহিদ Jul 12, 2025
img
মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী হত্যার বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হবে: আইন উপদেষ্টা Jul 12, 2025
img
মিটফোর্ডের ঘটনায় কিছু দল বিএনপির নামে রংচং দেওয়ার চেষ্টা করছে: রিজভী Jul 12, 2025
img
বাবর আজমকে উইকেটকিপার হওয়ার প্রস্তাব দেননি পাকিস্তানের কোচ Jul 12, 2025
img
পুরোনো রাজনীতিতে ফেরা অতটা সহজ হবে না : নাহিদ ইসলাম Jul 12, 2025