আপনার স্মার্টনেস এক মুহূর্তেই নষ্ট করে দিতে পারে খুশকি নামক ছোট্ট একটি সমস্যা। ধরুন, আপনি সেজেগুঁজে তৈরি। পার্টি অথবা ডিনারে যাচ্ছেন। পরিপাটি পোশাক, সুন্দর সাজ। এরপর যখন মাথায় চিরুনি বুলিয়ে নিচ্ছেন তখনই ঘটলো বিপত্তি। খুশকি নামক বিপদ তখন আপনার ঘাড়ে আর পিঠে ছড়িয়ে পড়েছে। এই খুশকির সমস্যায় নারী এবং পুরুষ উভয়েই ভুগে থাকেন। এটি যে শুধু সৌন্দর্য নষ্ট করে তাই নয়, এটি মাথার ত্বকের জন্যও ক্ষতিকর।
খুশকি কী?
খুশকি হলো মাথার ত্বকে জন্মানো এক ধরনের ছত্রাক যা ম্যালাসেজিয়া নামে পরিচিত। এটি সেবাম (আমাদের মাথার ত্বকে সেবেসিয়াস গ্রন্থি দ্বারা নিঃসৃত তৈলাক্ত পদার্থ) এবং ত্বকের মৃত কোষের (যা প্রাকৃতিকভাবে নতুন ত্বক গঠনের কারণে সৃষ্ট হয়) মাধ্যমে বেঁচে থাকে। যদিও খুশকি মাথার ত্বকের একটি স্বাভাবিক অংশ, কিন্তু তখনই সমস্যাযুক্ত হয় যখন এটি সেবাম খায় এবং ফ্যাটি অ্যাসিডে ভেঙে দেয়, যা অনেকের সংবেদনশীল স্ক্যাল্পে জ্বালার কারণ হতে পারে। এটি মাথার ত্বকে শুষ্কতা এবং চুলকানির কারণ, যার ফলে ত্বকের মৃত কোষগুলো দৃশ্যমান স্থানে জমা হয়।
ঘরোয়া প্রতিকার
ম্যালাসেজিয়া আর্দ্র পরিবেশে বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত আর্দ্রতা এবং ঘামের কারণে গ্রীষ্ম এবং বর্ষাকালে এর উপদ্রব বাড়ে। আবার শীতের ঠান্ডা বাতাস মাথার ত্বকের আর্দ্রতা কেড়ে নেয় এবং শুষ্কতা বেড়ে যায়। যার ফলে চুলকানি ও ফুসকুড়ি হয়। যে কারণে খুশকি সারা বছরই লেগে থাকে। যদিও খুশকি সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করার কোনো উপায় নেই তবে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাড়িতে ব্যবহার করা যেতে পারে এমন অনেক প্রতিকার রয়েছে। জেনে নিন খুশকি দূর করার কিছু প্রাকৃতিক ঘরোয়া প্রতিকার-
চুলে দীর্ঘ সময় তেল দিয়ে রাখবেন না
অনেকে মনে করেন, নিয়মিত চুলে তেল ব্যবহার করলে তা খুশকি দূর করতে কাজ করে। আসলে কিন্তু তা নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তেল লাগালে আরও খুশকি হবে কারণ তেল ম্যালাজেসিয়ার খাবার হিসেবে কাজ করে। এর ফলে খুশকি আরও বেড়ে যায়। শুষ্ক, চুলকানিযুক্ত মাথার ত্বকে তেল দিলে তা আপনার কাছে আরামদায়ক হতে পারে তবে দুঃখজনক সত্যি হলো, এটি খুশকি বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশেষ করে যখন মাথার ত্বকে দীর্ঘ সময়ের জন্য তেল দিয়ে রাখেন। তাই তেল দেওয়ার প্রয়োজন হলে ঘণ্টাখানেকের জন্য দিয়ে এরপর ধুয়ে ফেলুন।
ভিনেগার ব্যবহার
ভিনেগার চুলকানি, শুষ্ক ত্বকের চিকিৎসায় সাহায্য করে এবং খুশকি সৃষ্টিকারী ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলতেও কাজ করে। ভিনেগারের অ্যাসিডিক উপাদান ফ্ল্যাকিং কমাতে অত্যন্ত উপকারী। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, খুশকি দূর করার ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে মাথা ধোয়ার আধা ঘণ্টা আগে মাথার ত্বকে সমান পরিমাণে সাদা ভিনেগার পানির সঙ্গে মিশিয়ে লাগিয়ে নিন। এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।
বেকিং সোডা
বেকিং সোডা স্ক্রাব হিসাবে কাজ করে এবং মাথার ত্বককে আলতোভাবে এক্সফোলিয়েট করে। এটি স্ক্যাল্পের ক্ষতি না করে ত্বকের মৃত কোষগুলোকে অপসারণ করে। মাথার ত্বকে যাতে খুশকি আরও বেশি দৃশ্যমান হয় তা নিশ্চিত করার জন্য এক্সফোলিয়েশন অপরিহার্য। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বেকিং সোডা, এর এক্সফোলিয়েশন এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্যের কারণে মাথার ত্বককে প্রশমিত করে এবং লালচেভাব ও চুলকানি কমায়। চুল ধোয়ার সময় শ্যাম্পুতে সামান্য বেকিং সোডা মিশিয়ে এর সুবিধা পেতে পারেন।
নিমপাতা
আমরা সবাই জানি যে নিমপাতার নির্যাস তার ব্যাকটেরিয়ারোধী এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণাবলীর কারণে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেহেতু খুশকি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাথার ত্বকে ছত্রাকের জন্য দায়ী, তাই ত্বকের রোগের জন্য এই পুরানো প্রতিকারের দিকে ফিরে যাওয়াই ভালো। প্রাকৃতিক প্রতিকারই সর্বোত্তম উপায়। তবে পানিতে নিমপাতা সেদ্ধ করার বদলে কাঁচা পাতা বেটে মাথার ত্বকে ব্যবহার করলে বেশি উপকার পাবেন।
টি ট্রি অয়েল
অ্যান্টি-ব্রণ এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল রয়েছে এই তেলে। ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার ব্যতিক্রমী ক্ষমতার কারণে টি ট্রি অয়েল ব্যবহার করলে উপকার পাবেন। আপনার শ্যাম্পুতে এক বা দুই ফোঁটা টি ট্রি অয়েল যোগ করুন এবং সাধারণভাবে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে কয়েকদিন ব্যবহার করার পরই পার্থক্যটা বুঝতে পারবেন।
রসুন
রান্নার কাজে রসুন ব্যবহার করা হয় প্রতিদিনই। এটি প্রায় সবার বাড়িতেই থাকে। অনেকের কাছে রসুনের গন্ধটা পছন্দ নাও হতে পারে। তবে এর উপকারিতাকে আপনি উপেক্ষা করতে পারবেন না। রসুন একটি ছত্রাক বিরোধী প্রাকৃতিক পণ্য এবং কাঁচা রসুনের উপকারিতা অনেক। তাই মাথার ত্বক থেকে খুশকি দূর করতে চাইলে রসুন ব্যবহার করতে পারেন। সেজন্য রসুনের কয়েকটি কোয়া সামান্য পানির সঙ্গে বেল্ড করে মাথার ত্বকে ব্যবহার করতে হবে। গন্ধ দূর করতে চাইলে এর সঙ্গে সামান্য মধু কিংবা আদার রস মিশিয়ে নিন।