নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে অস্বস্তিতে ক্রেতারা

গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে চালসহ বেশ কিছু ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। ভরা মৌসুমে আরও চড়া হয়েছে সবজির দাম। বেড়েছে গরুর মাংস, ব্রয়লার মুরগি, আটা, ময়দা, ডাল, ছোলা, আদা ও রসুনসহ আরও বেশ কিছুর দাম। ভোটের আগে যে গরুর মাংস ৬৫০ টাকা কেজিতে নেমেছিল, তা এখন ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে আটা-ময়দা ও ডালের দামও কেজিতে ১০ টাকা ও তেলের দাম লিটারপ্রতি ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে প্রায় সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। এখন সরু (মিনিকেট) চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা দরে। যা ৬৫ থেকে ৬৬ টাকা ছিল। মাঝারি (বিআর-২৮, পায়জাম) চালের কেজিতে সর্বোচ্চ তিন টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা। দুই টাকা বেড়ে মোটা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা।

চালের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে এক ব্যবসায়ী বলেন, ভোটের কারণে গাড়ি এসেছে কম। তাই সরবরাহ ঘাটতির কারণে চালের দাম বেড়েছে। বাজারে এখন মানভেদে প্রতি বস্তা চালের দামে দেড় শ’ থেকে আড়াই শ’ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

এখন সব ধরনের সবজির দাম ঊর্ধ্বমুখী। পেঁপে, মুলা ও শালগম ছাড়া প্রায় সব ধরনের সবজি কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম ৪০ থেকে আকারভেদে ৬০ টাকা পর্যন্ত। ভরপুর শীতে বাজারে শিমের দামও চড়া; প্রতি কেজি ৮০ টাকা। আর মাঝারি আকারের একটি লাউয়ের দাম ৮০ টাকা, বড় হলে ১০০ টাকাও বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে আসা এক ক্রেতা বলেন, ভরা মৌসুমে শীতকালীন সবজির দাম কমার কথা। কিন্তু বাজারে এসে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। এখন এতো দামে সবজি বিক্রি হওয়ার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। বাজারে সাংঘাতিকভাবে সিন্ডিকেট কাজ করছে। যা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। যে কারণে এ পরিস্থিতি।

বিক্রেতা সবজির দাম বাড়ার পেছনে কুয়াশাকে দায়ী করে বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বেশি কুয়াশা পড়ছে। এতে নির্ধারিত সময়ে পণ্যবাহী ট্রাক আসছে না। সে কারণে ঢাকায় তুলনামূলক পণ্য কম আসছে। এছাড়া বৈরী আবহাওয়ার কারণে কৃষকের অনেক সবজি নষ্ট হচ্ছে। এর প্রভাবও পড়েছে বাজারে।

ভোটের আগে গরুর মাংসের বেঁধে দেওয়া দাম ছিল ৬৫০ টাকা কেজি। ভোটের পরে তা এক দফা বেড়ে ৭০০ টাকা হয়। এখন ঢাকা শহরের অধিকাংশ বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়।

সেগুনবাগিচা বাজারে দুটি মাংসের দোকান। সেখানে ৭৫০ টাকায় মাংস বিক্রি হতে দেখা গেছে। জানতে চাইলে খোকন ইন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী খোকন বলেন, আমরাও ভোটের আগে ৬৫০ টাকা দরে গরুর মাংস বিক্রি করেছি। পরে ৭০০ করেছি। এখন গরুর দাম বেশি। ওই দামে বিক্রি করে লাভ হয় না। গত দুদিন থেকে ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি।

মাংসের পাশাপাশি মাছের বাজারও বেশ চড়া। বিভিন্ন পদের মাছের দাম কেজিতে ১০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বাজারে প্রতিকেজি পাবদা মাছ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪০০ টাকায়, শিং মাছ আকার ভেদে প্রতি কেজি ৪৮০ থেকে ৫৫০ টাকায়, রুই মাছে প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, কাতল প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা, পাঙাশ প্রতি কেজি ২২০ টাকা, চাষের কই প্রতি কেজি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া তেলাপিয়া মাছ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা, শোল মাছ ছোট সাইজের প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, আর মাঝারি সাইজের শোল বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা কেজিতে। গুলসা প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, চিংড়ি প্রতি কেজি ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকা গলদা প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, টেঙরা মাছ ছোট প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, বোয়াল প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং রূপচাঁদা প্রতি কেজি আকার ভেদে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে ফার্মের মুরগির ডিমের দামও প্রতি ডজনে ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়।

গত সপ্তাহে হুট করেই ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা পর্যন্ত। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২২৫ টাকা। যা গত মাসে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকার মধ্যে ছিল। সোনালি জাতের মুরগির দামও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকায়।

অন্যদিকে মুদি বাজারে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে অ্যাংকর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে। বেড়েছে মসুর ডালের দামও। প্রতি কেজি ভালো মানের মসুর ডাল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা আগের থেকে ১০ টাকা বেশি।

এরআগে বিভিন্ন সময় ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো বা কমানোর কাজ ঘোষণা দিয়ে করলেও এবারে চুপিসারেই দাম বাড়িয়েছে।

বাজারে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়িয়ে ১৭৩ টাকা করা হয়েছে, যা ভোটের আগে বিক্রি হয়েছে ১৬৯ টাকায়। ৫ লিটারের বোতলের দাম ৮২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮৪৫ টাকা করা হয়েছে।

একই সঙ্গে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত আটা ও ময়দার দাম ১০ টাকা এবং চিনির দাম বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত। বাজারে প্রতি কেজি প্যাকেটের আটার দাম এখন ৬৫ টাকা। ময়দার দাম বেড়েছে হয়েছে কেজিপ্রতি ৮০ টাকা।

চিনির দামেও একই ধরনের অস্থিরতা। প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনি বাজারে ১৪৮ টাকা মূল্য থাকলেও বিক্রেতারা সেটা খুলে বিক্রি করছেন ১৫০-১৬০ টাকায়।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
তরুণদের শুধু দেশে নয়, বিশ্বেও সেরা হতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা Nov 13, 2025
img
২৫ বছরের টেস্ট ইতিহাসে রেকর্ড গড়ল বাংলাদেশ Nov 13, 2025
img
অস্কার মনোনীত অভিনেত্রী স্যালি কার্কল্যান্ড আর নেই Nov 13, 2025
img
পঞ্চগড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস Nov 13, 2025
img
এবার ঢাকায় আসছেন আর্জেন্টাইন ফুটবল কিংবদন্তি Nov 13, 2025
img
এবার গোপালগঞ্জে গণপূর্ত অফিসে দুর্বৃত্তদের হামলা Nov 13, 2025
img
ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার মামলা, অপেক্ষায় দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমকর্মীরা Nov 13, 2025
img
অতিপ্রাকৃত প্রেমের সম্ভাবনা, ম্যাডক সিনেমার নতুন মোড় Nov 13, 2025
img
আরমান মালিকের জীবনে সালমানের অবিস্মরণীয় প্রভাব Nov 13, 2025
img
ক্রিকেটার ইমরুল কায়েসের ডাকঘরে চাকরি, বেতন ৪৪৯০ টাকা Nov 13, 2025
img

মাহফুজ আলম

বিটিভি যেন কোনো রাজনৈতিক শক্তির স্বার্থের হাতিয়ার না হয়ে ওঠে Nov 13, 2025
img
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ১১ এজেন্ডা নিয়ে সংলাপে ইসি Nov 13, 2025
আইসিসির মাস সেরা ক্রিকেটার দুই দক্ষিণ আফ্রিকান Nov 13, 2025
বিশ্বকাপে দলের বোঝা হতে চায় না মেসি Nov 13, 2025
img
নারীর জীবন নানা শর্তে বাঁধা, পুরুষের শুধু চাকরির চাপ: অনু ইমানুয়েল Nov 13, 2025
img
কয়জন স্ত্রী?, শারার গায়ে পারফিউম ছিটিয়ে ট্রাম্পের প্রশ্ন Nov 13, 2025
img
সম্পর্ক মধুর না হলে বন্ধুত্বের তকমা অর্থহীন: মিঠুন চক্রবর্তী Nov 13, 2025
img
মহাখালী টার্মিনালে বাস আছে, যাত্রী নেই Nov 13, 2025
img

ফখরুলের সঙ্গে ইইউ রাষ্ট্রদূতের বৈঠক

বাংলাদেশে সফল নির্বাচনের প্রত্যাশা ইউরোপীয় ইউনিয়নের Nov 13, 2025
img
জলবায়ু সংকট আসলে স্বাস্থ্য সংকট : ডব্লিউএইচও Nov 13, 2025