নুসরাতের মৃত্যুতে ফেসবুকে সমালোচনার ঝড়

ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রের আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি’র মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনা ঝড় বইছে। মন্ত্রী, এমপি থেকে শুরু করে সাধারণ ফেসবুক ব্যবহারকারীরাও নিহত নুসরাতের ছবি পোস্ট করে প্রতিবাদী স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘাতকের বিচারের দাবি করেছে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা।

এর আগে বুধবার রাত ৯টা ৩০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নুসরাত জাহান রাফি। এরপরই গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ঘাতকের বিচারের দাবিতে প্রতিবাদী হয়ে উঠে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা। বৃহস্পতিবার সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ভিজিট করে এমনটাই জানা গেছে।

নুসরাতের মৃত্যুর পর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, একটি দৈনিক পত্রিকায় নুসরাতকে নিয়ে প্রতিবেদনের ছবি দিয়ে কাভার ছবিও পরিবর্তন করেছেন তিনি।

জুনাইদ আহমেদ পলক তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “সারা শরীরে তীব্র ব্যথা নিয়ে মেয়েটি বলেছিল ‘আমি এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করেই যাবো। আমার জীবন থাকতে যে অন্যায় মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল আমার সঙ্গে করেছেন, জীবন থাকতে সে অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করবো না”....।”

“৮০ ভাগ পুড়ে যাওয়া শরীর নিয়েই সাহসের সঙ্গে মেয়েটি বলেছে- “আমি সারা বাংলাদেশের কাছে বলবো, সারা পৃথিবীর কাছে বলবো এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্য। আমি এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করবো.....।”

“অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে করতে তীব্র ব্যথা নিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিলো মেয়েটি।”

মন্ত্রীর এমন স্ট্যাটাসে অনেকেই কমেন্ট করেছেন। মো. হাবিবুর রহমান নামের একজন কমেন্টে লিখেছেন, “দায়িত্বশীল অনেকে নুসরাত এর জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ট্যাটাস দেয়ার সাথে, খেয়াল রাখবেন মামলা প্রক্রিয়া যেন সুষ্ঠুভাবে চলে, মন্ত্রী ও সংসদের মধ্যে ও তো অনেকেই উকিল আছেন, আশা করি, কেউ আইনি লড়াই লড়বেন আমাদের অভাগা বোনটির জন্য।”

করিম শাহ নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “কিসের সমবেদনা আর কিসের শোক জানাবো, এভাবে সমবেদনা জানাতে থাকলে কি এদেশটা নুসরাতদের জন্য নিরাপদ হবে?”

“মানুষরূপী সমাজে লুকিয়ে থাকা হায়নাদের শাস্তি চাই কঠিন শাস্তি যার শেষ পরিণতি হবে কঠিন যন্ত্রনাধায়ক মৃত্যুদণ্ড। মাদক, গুম কিংবা সন্ত্রাসীদের তো এদেশে ক্রসফায়ার দেয়া হয় নুসরাতদের উপর এই নৃশংসতার ক্রসফায়ার দেয়া যায়না? হোক তা বিচার বহির্ভূত তবে হায়েনাদের এ শাস্তিতে যদিও কিছুটা সান্ত্বনা পেত পরিবারগুলি। না হয় এইরকম শতশত নুসরাতরা আগামীকাল নির্যাতিত হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আল্লাহ নুসরাতকে জান্নাতবাসী করুক। আমিন।”

মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন নামের এক সাংবাদিক তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “নুসরাত হত্যায় জড়িত অধ্যক্ষ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারাসহ নেপথ্যের সবাইকে শাস্তির আওতায় আনা হোক।”

মহিউদ্দিন পলাশ নামের আরেক সাংবাদিক তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “এটাই বাংলাদেশ। বর্তমান নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামায় না। অতীত হলেই ভুলে যায়। নুসরাতের ঘটনারও একই পরিণতি হবে। আজ মরলে কাল দুই দিন। তারপর আমরা দেখব সেই নরপিশাচ আইনের ফাঁক গলে জামিনে বের হয়ে আসবে। কষ্টের আগুনে এবার পুড়বে নুসরাতের পরিবারের সদস্যরা। এটাই বাংলাদেশ। নুসরাতদের এমন পরিণতির জন্যই দেশ স্বাধীন হয়েছে। ৩০ লাখ লোক জীবন দিয়েছে। ৪ লাখ মা-বোন ইজ্জত দিয়েছে।”

প্রসঙ্গত, বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় নুসরাত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। পরে বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্ত শেষে তার লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বাদ আসর সোনাগাজী মো. সাবের সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা নামাজ শেষে উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।

 

টাইমস/কেআরএস/এইচইউ

Share this news on: