বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বড় পরিবর্তন আ্নতে করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। সংশোধিত এডিপিতে (আরএডিপি) বরাদ্দ ৪৯ হাজার কোটি টাকা কমানোর প্রাথমিক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল এডিপিতে বরাদ্দ রয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে প্রায় ১৮ শতাংশের বেশি কমতে যাচ্ছে এডিপির আকার। বিগত কয়েক বছরের বাজেট পর্যালোচনা করে দেখা যায় মূল এডিপি থেকে পাঁচ থেকে দশ শতাংশ হারে বরাদ্দ কমানো হয়েছিল। কিন্তু এবার বরাদ্দ কমানোর হার তুলনামূলক বেশি হচ্ছে।
এর কারণ হিসেবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, জুলাই আন্দোলন ও তার পরবর্তী সময়ে দেশ জুড়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ থমকে গিয়েছিল। নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বেশ কিছু চলমান প্রকল্প পুনর্মূল্যায়ন করেছে এবং অনেক রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত প্রকল্প বাতিল করেছে। এসব কারণে উন্নয়ন ব্যয়ের পরিমাণ কমে গেছে। এছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার শুরু থেকেই যাচাই-বাছাই করে প্রকল্প অনুমোদন করছে। অতিমূল্যায়িত প্রকল্প, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া প্রকল্প, এসব দেখা হচ্ছে। এসব করতে গিয়ে উন্নয়ন ব্যয় কম হচ্ছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার একটু আগেভাগেই সংশোধন হচ্ছে এডিপি। সাধারণত মার্চ বা এপ্রিলে সংশোধন হলেও এবার চলতি ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) সভায় এডিপি সংশোধন চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গেছে। এডিপিতে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া মূল বরাদ্দ রয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে ১ লাখ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য ছিল। সংশোধিত এডিপিতে মোট বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। ফলে বরাদ্দ কাটছাঁট হচ্ছে ৪৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের বরাদ্দ দেওয়া হবে ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে ৮১ হাজার কোটি টাকা। ইতিমধ্যে সংশোধিত এডিপির বরাদ্দ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করা হচ্ছে। বাস্তবায়ন গতি কম থাকায় সরকারি তহবিলের চাহিদাও অনেক কমেছে। সাধারণত অন্যান্য অর্থবছরের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সরকারি তহবিল থেকে চাহিদা অনেক বেশি থাকে। কিন্তু চলতি অর্থবছরে এডিপিতে যে পরিমাণ সিলিং বেঁধে দেওয়া হয়েছে, চাহিদা তার চেয়ে কম রয়েছে।
এডিপি সংশোধন প্রসঙ্গে সম্প্রতি একনেক বৈঠক শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছিলেন, ‘অবকাঠামোর চেয়ে মানবসম্পদ উন্নয়ন খাতের ব্যয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে। দেশীয় অর্থায়নের চেয়ে বিদেশি অর্থ ব্যবহারে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। প্রতি বছর মার্চে উন্নয়ন বাজেট সংশোধন করা হয়। আমরা এটি আরো এগিয়ে আনার চেষ্টা করছি। আমাদের লক্ষ্য হলো কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং জনগণের উপকার করা।’
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছর এডিপিতে মোট বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে এসে ২০ হাজার ২৮২ কোটি টাকা কাটছাঁট করে মোট বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয় ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে মূল এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ৫৬ হাজার ৩ কোটি টাকা। সংশোধনে ১৯ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা কমিয়ে বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয় ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে মূল বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ৩৬ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। এরপর ১৭ হাজার ১৯০ কোটি টাকা বাদ দিয়ে সংশোধিত বরাদ্দ দেওয়া হয় ২ লাখ ১০ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা। এছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরে মূল এডিপি বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ১৪ হাজার ৬১১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫ হাজার ৩৩৯ কোটি টাকা কাটছাঁট করে সংশোধিত বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ২ লাখ ৯ হাজার ২৭২ কোটি টাকা।