দান-সদকা মহান আল্লাহকে খুশি করার অন্যতম মাধ্যম। যারা আন্তরিকভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান-সদকা করে, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাত উভয়ই সুন্দর হয়ে যায়।
ইমাম ইবনে কায়্যিম (রহ.) বলেছেন, ‘দান-সদকা, ভালো কাজ ও অন্যের উপকারে আসার মধ্যে এমন এক আশ্চর্য শক্তি আছে, যা মানুষের মনকে প্রশস্ত করে এবং অন্তরকে প্রশান্তি এনে দেয়। উদার ও দয়ালু ব্যক্তি সবচেয়ে প্রশান্তচিত্ত মানুষ, তাদের মন থাকে সবচেয়ে পবিত্র ও সুন্দর আর শান্তিময়। অপরদিকে কৃপণ ব্যক্তি, যে কারো উপকার করে না, সে সবচেয়ে সংকীর্ণমনা, তার জীবন হয় বিষাদময়, আর দুশ্চিন্তায় থাকে সর্বদা পীড়িত। এ কারণেই আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন প্রশান্তচিত্তের সর্বোচ্চ উদাহরণ। তাঁর মর্যাদা আল্লাহ উচ্চ করেছেন, তাঁর বোঝা হালকা করেছেন এবং তাঁর স্মরণকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন।’ (জাদুল মা‘আদ ২/২০)
তিনি আরও বলেছেন, ‘দান-সদকার এমন এক বিস্ময়কর প্রভাব আছে, যা বিভিন্ন ধরনের বিপদ-আপদ দূর করতে অসাধারণ ভূমিকা রাখে। এমনকি দাতা যদি কোনো পাপী ব্যক্তি, জালিম, এমনকি কোনো অবিশ্বাসী (কাফির)ও হয়, তবু আল্লাহ তাআলা এই দানের বরকতে তার অনেক বিপদ দূর করে দেন। এটা এমন একটি বিষয়, যা মানুষ মাত্রই জানে, বিশেষজ্ঞ হোক বা সাধারণ মানুষ, সবাই এটা মানে। কারণ, সবাই তাদের বাস্তব জীবনে এই অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।’ (আল-ওয়াবিলুস সাইয়্যিব, পৃষ্ঠা : ৬৯)
সদকা শুধু দুনিয়ার দুঃখ-দুর্দশাই দূর করে না, বরং কোনো ঈমানদার যদি আল্লাহকে খুশি করার জন্য নিরবে সদকা করে যায় কঠিন কিয়ামতের দিনও মহান আল্লাহ তাকে আরশের ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, বিশ্বনবী (সা.) বলেন, যে দিন আল্লাহর (রহমতের) ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না, সেদিন সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা তাঁর নিজের (আরশের) ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। ... সে ব্যক্তি যে এমন গোপনে দান করে যে, তার ডান হাত যা খরচ করে বাম হাত তা জানে না, ...। (বুখারি, হাদিস : ৬৬০)
এমনকি নবীজি (সা.) তাঁর উম্মতদের আসমানি আজাব থেকে আত্মরক্ষার জন্যও সদকা করার পরামর্শ দিয়েছেন। ইরশাদ করেছেন, ‘সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শন সমূহের মধ্যে দু’টি নিদর্শন। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ হয় না। কাজেই যখন তোমরা তা দেখবে তখন তোমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করবে। তাঁর মহত্ব ঘোষণা করবে এবং নামাজ আদায় করবে ও সদকা প্রদান করবে। (বুখারি, হাদিস : ১০৪৪)
এমনকি জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার একটি মাধ্যম হলো সদকা। তাইতো নবীজি (সা.) তাঁর প্রিয় উম্মতদের জাহান্নাম থেকে বাঁচতে সাধ্যমতো সদকা করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। আদি বিন হাতিম (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেকের সাথেই তার মহান প্রভু কথা বলবেন এবং তার ও প্রভুর মধ্যখানে কোন দোভাষী থাকবে না। সে তার ডান দিকে তাকালে তার কৃতকর্ম ব্যতীত কিছুই দেখবে না। সে তার বাম দিকে তাকালে তার কৃতকর্ম ব্যতীত কিছুই দেখবে না। সে তার সামনের দিকে তাকালে জাহান্নাম তাকে অভ্যর্থনা জানাবে। অতএব কারো জাহান্নামের আগুন থেকে আত্নরক্ষা করার সামর্থ্য থাকলে সে যেন এক টুকরা খেজুর দান করে হলেও তাই করে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস :১৮৫)
মহান আল্লাহ পবিত্র এই মাসে আমাদের সবাইতে সাধ্যমতো দান-সদকা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।