চুয়াডাঙ্গায় শনিবার (৮ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে তিতুদহ ইউনিয়ন পরিষদে সামনে বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সংঘর্ষে দুজন আহতের খবর পাওয়া গেছে। এরমধ্যে নিহত রফিকের ভাই শফিকও গুরুতর আহত হয়েছেন। অন্যজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আর সংঘর্ষে নিহত রফিকুল ইসলাম রফিকের লাশ এখনো ঘটনাস্থলেই পড়ে আছে।
ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে এবং লাশ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তবে আহত দুজনের বিস্তারিত ঠিকানা পাওয়া যায়নি। আর আহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।নিহত রফিকুল ইসলাম রফিক চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) কার্ড বিতরণ নিয়ে পূর্ববিরোধ ও পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে অসহায় ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে কার্ড প্রতি বিনামূল্যে সরকারিভাবে ১০ কেজি পরিমাণ ভিজিএফ’র চাল বিতরণের বিষয়কে কেন্দ্র করে তিতুদহ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মিলন মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম টোটনের লোকজনের সঙ্গে রফিকুল ইসলাম রফিকের বাগ্বিতণ্ডা হয়।
একপর্যায়ে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশে তাদের লোকজন রফিককে মারধর করতে থাকে। একপর্যায়ে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এরমধ্যেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের লোকজন ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকের মুখ ও মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
দুজন গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা হলে তারাও ভয়ে নিজেদের নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে রাজী হন। তারা বলেন, গত ৮-১০ দিন আগে তিতুদহ ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন যুবলীগের প্রচার সম্পাদক সাগর এবং অত্র ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কামালের সঙ্গে টিবিসির কার্ড বিতরণ নিয়ে ঝামেলা বাধে নিহত বিএনপি নেতা রফিকের।
সেই সূত্র ধরে শনিবার তিতুদহ ইউনিয়ন পরিষদে ভিজিএফের বিনামূল্যে চাল বিতরণ নিয়েও ঝামেলা বাঁধলে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সাগর ও কামালের পক্ষ নিয়ে রফিকের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে দুইপক্ষের সংঘর্ষে রফিকের মৃত্যু হয়।
এবিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) খন্দকার গোলাম মওলা (বিপিএম-সেবা) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটনায় একজন নিহত হয়েছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। বিস্তারিত জানতে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে গেছে। তদন্ত শেষে প্রকৃত কারণ জানা যাবে।’
এদিকে, সংঘর্ষের পরপরই এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষ আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ করে দেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবিষয়ে বক্তব্য নিতে জেলা বিএনপির সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবুর ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন নাম্বারে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।
এবিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা ফরিদুল ইসলাম শিপলু বলেন, আওয়ামী লীগের লোকজন দলে অনুপ্রবেশ করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি করেছে। আমরা প্রকৃত ঘটনা উন্মোচন করে দায়িদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।
দর্শনা থানা বিএনপির সভাপতি খাজা আবুল হাসনাত ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, তিতুদহ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ছিল প্রতিবাদী। ওই ইউনিয়নের সভাপতি মিলন মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক টোটনের বিভিন্ন অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তাকে জীবন দিতে হলো। এছাড়া রফিকের ভাই শফিকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এমআর