উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে জামায়াতের বিবৃতি

অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ‘জামায়াত যুদ্ধাপরাধের সহযোগী ছিল’ মর্মে যে মন্তব্য করেছেন তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।

বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) বিবৃতি প্রদান করে তিনি বলেন, ‘গত ১২ মার্চ বুধবার অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম তার দীর্ঘ এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে ‘জামায়াত যুদ্ধাপরাধের সহযোগী ছিল’ মর্মে যে মন্তব্য করেছেন আমি তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমি তার এ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা বক্তব্যে বিস্মিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘মাহফুজ আলমের বক্তব্যের জবাবে আমি স্পষ্ট ভাষায় জানাতে চাই যে, তিনি জামায়াত সম্পর্কে ভিত্তিহীন ও অসত্য বক্তব্য দিয়ে একটি প্রতিবেশী দেশের গুপ্তচর কারাবন্দি শাহরিয়ার কবিরদের ভাষাতেই কথা বলেছেন।’

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘মাহফুজ আলমের স্মরণ রাখা উচিত যে, তিনি একটি অরাজনৈতিক অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। সে কারণে কোনো রাজনৈতিক দলকে টার্গেট করে সমালোচনা ও অসত্য বক্তব্য দেওয়ার কোনো নৈতিক ও বিধিগত অধিকার তিনি রাখেন না। রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে হলে রাজনীতির ময়দানে এসে বক্তব্য দেওয়া সমীচীন। তার এ বক্তব্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অরাজনৈতিক চরিত্রকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মাহফুজ আলমের জানা থাকার কথা যে, শেখ মুজিবের আমলে যুদ্ধাপরাধের জন্য যে তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছিলো তাতে যুদ্ধাপরাধের সাথে জামায়াতের কারো সংশ্লিষ্টতার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যে কারণে শেখ মুজিব নিজেই সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দিয়েছিলো এবং আত্মসমর্পণকারী পাকিস্তানি সৈন্যদের পাকিস্তানে ফেরত পাঠিয়ে ঐ সমস্যার সমাধান করে গিয়েছেন। জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযম সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েই তিনি তার নাগরিকত্ব ফিরে পেয়েছেন। শেখ হাসিনা ক্যাঙারু কোর্ট বসিয়ে জামায়াতের নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছিল এবং তাদের দলীয় লোকদের দিয়ে মিথ্যা সাক্ষী সাজিয়ে জামায়াত নেতাদের যে বিচার করেছিলো তা দেশে-বিদেশে কোথাও গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।

শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ বানিয়ে বিচারপতিদের ভয় দেখিয়ে যে বিচার করা হয়েছে তা ছিল বিচারের নামে একটি প্রহসন। তার প্রমাণ স্কাইপ কেলেঙ্কারি, সাবেক বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বক্তব্য, মাওলানা সাঈদীর মামলার সাক্ষী সুখরঞ্জন বালীর বক্তব্য। এমনকি ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্ট-এ হাসিনা সরকারের ঐ বিচার গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এ থেকেই প্রমাণিত হয় যে, ১৯৭১ সালে জামায়াত নেতাদের যুদ্ধাপরাধের সহযোগী হওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। জনাব মাহফুজ আলমের বক্তব্যটি সম্পূর্ণ অসত্য, ভিত্তিহীন ও অনুমান নির্ভর। তবে তার এ বক্তব্য কোনো রাজনৈতিক অসৎ অভিপ্রায় থেকে বা কোনো অপশক্তির ইন্ধনে তাদের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের অপরিণামদর্শী আকাঙ্ক্ষা থেকেও হতে পারে বলে দেশবাসী মনে করে।

তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের লেখার জবাবে আমি সুস্পষ্ট ভাষায় আরও জানাতে চাই, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আহলে সুন্নত আল জামায়াতের পূর্ণ অনুসারী। জামায়াতের আকিদা বিষয়ে প্রশ্ন তোলা সম্পূর্ণ অবান্তর ও এখতিয়ার বহির্ভূত। জামায়াতে ইসলামী, ফরায়েজী জামায়াত, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলামের সাথে ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে স্বাধীন বাংলাদেশের ২০২৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করে আসছে।

১৯৮৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযম, চরমোনাইর পীর মাওলানা ফজলুল করিম ও খেলাফত মজলিসের নেতা শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক, জমিয়তে ওলামা ইসলামের নেতা মাওলানা মহিউদ্দিন খান, নেযামে ইসলামের নেতা বিখ্যাত আলেম খতিবে আযম মাওলানা সিদ্দিক আহমেদ ও চট্টগ্রামের বাইতুশ শরীফের পীর মাওলানা আবদুল জব্বারসহ এ দেশের হক্কানী পীর এবং আলেমগণ মিলে ইত্তেহাদুল উম্মাহ গঠিত হয়েছিল। এ থেকেই প্রমাণিত হচ্ছে যে, জনাব মাহফুজ আলম না জেনে-বুঝেই জামায়াত সম্পর্কে ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করেছেন। আশা করি আমাদের এই বক্তব্যের পর তার মনের বিভ্রান্তি দূর হবে এবং তার ভিত্তিহীন ও মিথ্যা বক্তব্যের জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করবেন এবং ভবিষ্যতে জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন।’

Share this news on: