দলে যোগ দিয়ে ইউনিয়ন আ. লীগের সভাপতিকে মারধর

বিএনপির প্রার্থী হতে না পেরে গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন জমা দেয়ার চূড়ান্ত দিন ২০১৬ সালের ১৬ এপ্রিল ক্ষমতাসীন দলে যোগ দেন। এরপর নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং বিজয়ী হন। এর আগে বিএনপি নেতা থাকাকালীন চারবার বগুড়ার শাজাহানপুর ‍উপজেলার গোহাইল ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। তার নাম আতোয়ার তালুকদার ফজু।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, বুধবার বিকালে তিনি নিজ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রবীণ নেতা ইউসুব আলীকে (৬০) পিটিয়ে আহত করেছেন। এই সময় তাকে রক্ষা করতে গেলে গাছের ডাল দিয়ে আরও পাঁচজন নেতাকর্মীকে পিটিয়ে আহত করেন চেয়ারম্যানের সহযোগীরা।

বুধবার বিকালে উপজেলার গোহাইল ইসলামিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সামনেই এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা জানায়, কিছুদিন আগে গোহাইল ইসলামিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোতাহার হোসেন মুকুলের বিরুদ্ধে জ্যেষ্ঠ শিক্ষক আফজাল হোসেন জেলা শিক্ষা অফিসে একটি অভিযোগ দেন। বুধবার ঘটনার সময় অভিযোগ তদন্ত করছিলেন বগুড়া জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আমান উদ্দিন মণ্ডল।

অন্যান্য শিক্ষকদের অনুরোধে স্কুলে যান গোহাইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইউসুব আলী, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ফরহাদ হোসেনসহ আরও তিন থেকে চারজন নেতাকর্মী।

কয়েকটি ঘটনার সাক্ষী হওয়ার অপরাধে অধ্যক্ষ মোতাহার হোসেন মুকুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ফরহাদ হোসেনের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। এরপর তিনি স্কুল অ্যান্ড কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি আলী আতোয়ার তালুকদার ফজুকে মুঠোফোনে কল দিয়ে আসতে বলেন। সেখানে চেয়ারম্যান ফজু আওয়ামী লীগ নেতা ফরহাদের সঙ্গে মারমুখি আচরণ শুরু করেন। এ সময় ইউসুব আলী তাকে সংযত আচরণ করার অনুরোধ জানান। তখন ফজু মুঠোফোনে কল দিয়ে তার কয়েকজন সঙ্গীকে ডেকে আনেন।

শিক্ষকরা শাজাহানপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদকে ফোনে বিষয়টি অবগত করে সহযোগিতা চান। পরে শাজাহানপুর থানা পুলিশের একটি দল সেখানে পৌঁছে।

চেয়ারম্যান ফজুর ডাকে সাড়া দিয়ে যুবলীগ নেতা বাদশা, লিটন, আলমগীরসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা আট থেকে ১০টি মোটরসাইকেল নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এরপর পুলিশের সামনেই চেয়ারম্যান ফজুসহ তার বাহিনীর সদস্যরা ইউসুব আলী, ফরহাদ হোসেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কর্মী সেলিম হোসেন, আবদুর রশিদ, বাদশা মিয়া, শিপলুসহ আরও কয়েকজনকে গাছের ডাল দিয়ে পিটিয়ে আহত করেন।

শাজাহানপুর থানার পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) সুশান্তে সামনে এই ঘটনা ঘটলেও তিনি বাধা দেননি।

এসআই সুশান্ত বলেন, ‘তিনজনের পুলিশ ফোর্স নিয়ে যতটুকু সম্ভব পরিবেশ শান্ত করার চেষ্টা করেছি।’

গোহাইল ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি সেলিম হোসেন বলেন, ‘নব্য আওয়ামী লীগ নেতা ফজু প্রথমে বিএনপির লোকজনকে দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদেরকে পিটিয়েছে। পরে তার অনুগত যুবলীগের একটি বাহিনীকে ডেকে নিয়ে দ্বিতীয় দফা মারপিট করে। দলের সিনিয়র নেতাদের সাথে এমন আচরণ মোটেই সুখকর নয়। এরা দলের শত্রু।’

ভুক্তভোগী ইউসুব আলী বলেন, ‘আমি বৃদ্ধ মানুষ। ওরা আমার গায়েও হাত তুলল। পুলিশের সামনে এই ঘটনা ঘটেছে। ঘটনা জেলার নেতাদের জানানো হয়েছে। তাদের সাথে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান আলী আতোয়ার তালুকদার ফজু বলেন, ‘জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগ তদন্ত করতে এলে স্থানীয় কিছু টাউট, বাটপার সেখানে ঝামেলা সৃষ্টি করে। প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে অধ্যক্ষের ফোন পেয়ে আমি সেখানে যাই। সেখানে বাইরের লোকজনের উপস্থিতি দেখে তাদের কাছে কারণ জানতে চাইলে তারা অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। এ সময় স্থানীয় লোকজনের সাথে তাদের হাতাহাতি হয়। আমি নিজে কাউকে মারপিট করিনি।’

 

 

টাইমস/এসআই

Share this news on: