বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন মাত্রা, নিবিড় পর্যবেক্ষণে ভারত

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘ ও ছিদ্রযুক্ত সীমান্তের কারণে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো থেকে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত অতিক্রম করা  তুলনামূলকভাবে সহজ হয়ে পড়ে। কিন্তু ২০০৯ সালে হাসিনার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তারা এই গোষ্ঠীগুলোর বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং তাদের ঘাঁটি ভেঙে দেয়।

তাই বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করা “ভারতের জন্য প্রধান নিরাপত্তা উদ্বেগ” বলে বীণা সিক্রি দাবি করেন।

তিনি আরও দাবি করেন, “এটি কেবল সামরিক সম্পর্ক নয়। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী জামায়াতে ইসলামীর মতো বাংলাদেশি ইসলামপন্থি দলগুলোর সাথেও সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করছে, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ইসলামাবাদকে সমর্থন করেছিল।”

এর আগে আইএসআইয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঢাকা সফর করেছেন বলে ভারতীয় মিডিয়ার প্রতিবেদনগুলোতে দাবি করা হয়। তবে ড. ইউনূস প্রশাসনের প্রেস অফিস ভারতীয় মিডিয়ার এসব প্রতিবেদনকে স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। এমনকি পাকিস্তানি কর্মীরা বাংলাদেশে ভারতীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠীর শিবির পুনরায় চালু করার জন্য কাজ করছে— এমন প্রতিবেদনগুলোকেও ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছে প্রেস অফিস।

বাংলাদেশে আইএসআইয়ের ভবিষ্যৎ ভূমিকা নিয়ে ভারতের উদ্বেগ সম্পর্কে বিবিসির প্রশ্নের জবাব দেয়নি পাকিস্তানের সেনাবাহিনী।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশি রাজনীতিবিদরা জানেন যে— ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও ভাষাগত সম্পর্কের কারণে ঢাকা ভারত-বিরোধী অবস্থান নিতে পারে না। দিল্লিতে আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশি কূটনীতিকরা যুক্তি দেন, ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলোর সমাধান না হলে পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা যাবে না।

যুদ্ধের সময় লাখ লাখ বাঙালি নিহত হয় এবং হাজার হাজার নারী ধর্ষণের শিকার হয়। ৯০ হাজারেরও বেশি পাকিস্তানি নিরাপত্তা ও বেসামরিক কর্মী ভারতীয় ও বাংলাদেশি বাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে যুদ্ধ শেষ হয়। এটিকে ইসলামাবাদের জন্য একটি অপমানজনক অধ্যায় হিসেবে দেখা হয়।

বাংলাদেশ যুদ্ধের সময় সংঘটিত নৃশংসতার জন্য পাকিস্তানের কাছে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার দাবি করেছে কিন্তু ইসলামাবাদ তা করতে কোনও আগ্রহ দেখায়নি। সাবেক বাংলাদেশি কূটনীতিক হুমায়ুন কবির বলেন, “স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত অপরাধের জন্য পাকিস্তানের দায় স্বীকার করা উচিত। আমরা পাকিস্তানের সাথে বেশ কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে ১৯৭১ সালের পূর্ববর্তী সম্পদের বিভাজনের বিষয়টিও উত্থাপন করেছি।”

এমনকি ইকরাম সেহগালের মতো সাবেক পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তারাও স্বীকার করেন, “বাংলাদেশ দাবি যে— পাকিস্তানিদের ১৯৭১ সালে যা ঘটেছিল তার জন্য ক্ষমা চাওয়া উচিত এবং এটাই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা।”

তবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এই মেজর জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের উচিত স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় উর্দুভাষীদের ওপর বাঙালিদের আক্রমণের বিষয়টিও সমাধান করা। করাচিতে বসবাসকারী সাবেক এই পাকিস্তানি সেনা কর্মবর্তা বলেন, “(পূর্ব পাকিস্তানে) উর্দুভাষী বিহারি জনগণের ওপর যে নৃশংসতা সংঘটিত হয়েছিল তার সাক্ষী ছিলাম আমি।”

যদিও ইতিহাস ঢাকা এবং ইসলামাবাদের মধ্যে সম্পর্কের ওপর ছায়া ফেলেছে, তারপরও অর্থনীতিবিদরা উল্লেখ করেছেন, দেশ দুটি প্রথমে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য উন্নত করার দিকে মনোনিবেশ করতে পারে, যার পরিমাণ বর্তমানে ৭০০ মিলিয়ন ডলারের কম। আর এই বাণিজ্যের বেশিরভাগই পাকিস্তানের পক্ষে।

ডেলাওয়্যার বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির সহযোগী অধ্যাপক সাবরিন বেগ বলেন, “পাকিস্তানের ২৫ কোটিরও বেশি জনসংখ্যা মধ্য থেকে দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের জন্য একটি শক্ত বাজার।”
তিনি বলেন, বর্তমানে উভয় পক্ষের ওপর উচ্চ শুল্কসহ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে এবং ব্যবসা ও রপ্তানিকারকরা ভিসা ও ভ্রমণের ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। তবে “উন্নত দ্বিপাক্ষিক রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক এই সীমাবদ্ধতাগুলো কমিয়ে আনবে”।

আগামী এপ্রিলে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের ঢাকা সফরের সময় এই বিষয়গুলোর মধ্যে কিছু আলোচনা হতে পারে। এছাড়া চলতি বছরের শেষ নাগাদ বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে এবং নতুন সরকারের বৈদেশিক নীতির অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রে ভিন্ন নীতি থাকলেও থাকতে পারে।

তবে, যাই ঘটুক না কেন, দিল্লির জন্য ঝুঁকি বেশি। কারণ তারা দৃঢ়ভাবে মনে করে, উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য তাদের স্থিতিশীল এবং বন্ধুত্বপূর্ণ বাংলাদেশ প্রয়োজন।

এফপি/এস এন


Share this news on:

সর্বশেষ

img
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টা সেচপাম্প চালানোর অনুরোধ Mar 17, 2025
img
বাস-অটোরিকশা সংঘর্ষে নিহত যুবক Mar 17, 2025
img
চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের ৩৬ নেতাকর্মী গ্রেফতার Mar 17, 2025
img
হঠাৎ বন্ধ বাংলাদেশিদের ওমরা ভিসা, কারণ জানে না এজেন্সি ও মন্ত্রণালয় Mar 17, 2025
img
গাড়িতে জব্দ সেই ৩৭ লাখ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা Mar 17, 2025
img
‘বিনোদিনী’ চরিত্র নিয়ে রুক্মিণীর সঙ্গে তুলনা, ক্ষোভ প্রকাশ শুভশ্রীর Mar 17, 2025
img
ঐকমত্য কমিশনের কাছে এনআইডি রাখাসহ একগুচ্ছ প্রস্তাব ইসির Mar 17, 2025
img
‘নারী-শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনীর নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে সরকার’ Mar 17, 2025
img
সড়কে প্রাণ গেল মাদরাসা শিক্ষকের Mar 17, 2025
img
মুমিনের জীবনে ইহসান কেন গুরুত্বপূর্ণ Mar 17, 2025