পলাতক ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসনের কোন সুযোগ যেন না পায়: তারেক রহমান

বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘পলাতক স্বৈরাচারের দোসরদের পুনর্বাসনের কোনো সুযোগ দেওয়া যাবে না।’

রাজধানীর ইস্কাটনের লেডিস ক্লাবে বিশিষ্ট নাগরিক ও পেশাজীবীদের সম্মানে বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আজ এ কথা বলেন। শুরুতেই তিনি গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

তিনি বলেন,‘দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গৌণ ইস্যুকে মুখ্য ইস্যু বানাতে গিয়ে নিজেদের অজান্তে ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্যের মধ্যে সংশয়-সন্দেহের জন্ম দেয়া হয়েছে বা হচ্ছে। আমি অন্তর্বর্তী সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আবারও বলতে চাই, সরকারের এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া উচিত হবে না যাতে রাষ্ট্র এবং রাজনীতিতে পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ পায়।’

তিনি বলেন,‘পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের হাতে এখনো রাষ্ট্র থেকে, জনগণের পকেট থেকে লুন্ঠন করা হাজার হাজার কোটি টাকা রয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হওয়ার অর্থ হলো সারা দেশে ঘাপটি মেরে থাকা পলাতক স্বৈরাচারের দোসরদেরকে রাজনীতিতে পুনর্বাসনের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া।’

তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ দেড় দশকের মাফিয়া শাসনকালে তরুণ প্রজন্মের প্রায় সাড়ে তিন কোটি ভোটারসহ কেউ ভোট দিতে পারেনি। এসব ভোটারদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার জন্যে সবার আগে প্রয়োজন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান।’

এ সময় নাগরিকগণ রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাশালী না হলে কোনো সংস্কারই কিন্তু টেকসই হবে না বলেও উল্লেখ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

তারেক রহমান বলেন, দেশের বর্তমান সংবিধানকে ইচ্ছামতন কাটাছেঁড়া করে পতিত পলাতক স্বৈরাচার প্রায় তাদের দলীয় সংবিধানে পরিণত করে ফেলেছিলো। সেই সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদের ২ দফায় লেখা রয়েছে, জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে জনপ্রতিনিধিদের জাতীয় সংসদ গঠিত হবে।

সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকার পরেও পলাতক ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে বাংলাদেশের মানুষ এবং গোটা বিশ্ব বারবার দেখেছে, জনগণের ভোট ছাড়াই গঠন করা হয়েছিলো জাতীয় সংসদ। পলাতক স্বৈরাচার সংবিধান মানেনি।

তারেক রহমান বলেন, ‘এই কারণে বিএনপি মনে করে গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে কেতাবি কিংবা পূঁথিগত সংস্কার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার এবং আচরণের ব্যবহারিক প্রয়োগ। জনগণের গণতান্ত্রিক চর্চার মধ্য দিয়ে কেবল সংস্কার টেকসই, সফল এবং কার্যকর হয়ে উঠতে পারে।’

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় দেশের বিশিষ্ট নাগরিকগণ তথা সুশীল সমাজ এবং পেশাজীবীদের ভূমিকা ও অবদান অনিস্বীকার্য উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘রাষ্ট্র এবং রাজনীতির ভালো-মন্দের অনেক কিছুই নির্ভর করে রাজনীতিবিদদের দেশপ্রেম ও রাষ্ট্র পরিচালনার নীতির ওপর। এক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও সমাজে বিশিষ্ট নাগরিক ও পেশাজীবীদের ভূমিকা যত বেশি কার্যকর থাকে, রাজনৈতিক সরকারও তত বেশি দায়িত্বশীল এবং শক্তিশালী হয়।’

তিনি বলেন, রাজনীতিকে যদি একটি সুসংগঠিত সুসংঘবদ্ধ ঘরের ছাদের সাথে আমরা তুলনা করি তাহলে খুব সম্ভবত সিভিল সোসাইটি এবং পেশাজীবীগণ হচ্ছেন সেই ঘরের খুঁটি বা পিলার। সুতরাং একটি রাষ্ট্রে রাজনীতিবিদ, সিভিল সোসাইটি এবং পেশাজীবীগণ একে অপরের পরিপূরক।

ইফতার অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এএসএম ফায়েজ, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান সিনিয়র এডভোকেট জয়নাল আবেদীন, ব্যবসায়ী সালাহ উদ্দিন আলমগীর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এম এ আজিজ ও সৈয়দ আবদাল আহমেদ।

ইফতার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, যায়যায়দিন সম্পাদক, বরেণ্য সাংবাদিক শফিক রেহমান, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভুঁইয়া ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের শিক্ষক, উলামা-মাশায়েখ, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, কৃষিবিদ, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিরা এই ইফতারে অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকত উল্লাহ বুলু, আবদুস সালাম পিন্টু, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এএম আবদুল হালিম, ইসমাইল জবিউল্লাহসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।


এসএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সিঙ্গাপুর ম্যাচে বাফুফেকে জরিমানা এএফসির Jul 21, 2025
img
এইচএসসির খাতা মূল্যায়নে অনিয়মের অভিযোগে ৮ পরীক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ Jul 21, 2025
img
যারা মবতন্ত্র কায়েম করতে চায়, তারাই নির্বাচনবিরোধী : টুকু Jul 21, 2025
img
স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের জার্সি পরে ম্যাচ উপভোগ করেছেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার Jul 21, 2025
img
চট্টগ্রামে পদযাত্রার সমাবেশ শেষে এনসিপির দু'পক্ষের হাতাহাতি Jul 21, 2025
img
এএফসির নিয়ম ভেঙে শাস্তি পেলো বাফুফে Jul 21, 2025
img
অন্ত্রের প্রদাহ ও পানিশূন্যতায় ভুগছেন নেতানিয়াহু Jul 21, 2025
img
‘ওরা হয়ত মানিয়ে নিতে পারেনি’ হেসনের সমালোচনার জবাবে ইমনের মন্তব্য Jul 21, 2025
img
বাংলাদেশে আপনি খুব একটা ভালো উইকেট পাবেন না : ম্যাচ শেষে পাকিস্তান অধিনায়ক Jul 21, 2025
img
যদি কখনও জেলে যাই, উঁচু কমোড কি পাব: প্রেস সচিব Jul 21, 2025
img
চিকিৎসার খোঁজ নেওয়ায় সেনাপ্রধানকে ধন্যবাদ ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ জামায়াত আমিরের Jul 21, 2025
img
মেজর জিয়া চট্টগ্রাম থেকেই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন: নাহিদ Jul 20, 2025
img
রাজবাড়ীতে হেলিকপ্টারে চড়ে ইমামের রাজসিক বিয়ে Jul 20, 2025
img
সাকিবের জাতীয় দলে ফেরা নিয়ে মির্জা ফখরুলের মন্তব্য Jul 20, 2025
img
জিম্বাবুয়ের হ্যাটট্রিক হার, ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ড Jul 20, 2025
img
পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়, টাইগারদের অভিনন্দন জানাল আসিফ মাহমুদ Jul 20, 2025
img
‘ডিজিটাল সুবিধা নাগরিক সেবা কেন্দ্রের আওতায় আনা হচ্ছে’ Jul 20, 2025
img
টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক পলিসির খসড়া পর্যালোচনায় কমিটি গঠন Jul 20, 2025
img
ফ্রান্সের তরুণ স্ট্রাইকারকে ৯০ মিলিয়ন ইউরোতে দলে ভেড়াচ্ছে লিভারপুল! Jul 20, 2025
img
লিবিয়া থেকে দেশে ফেরার জন্য নিবন্ধন করেছেন ২ হাজার বাংলাদেশি Jul 20, 2025